রবিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

দখলের কবলে কর্ণফুলীর তীর হুমকির মুখে বন্দর চ্যানেল

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

দখলের কবলে কর্ণফুলীর তীর হুমকির মুখে বন্দর চ্যানেল

কর্ণফুলী নদীর তীর দখল করে গড়ে উঠেছে শতাধিক বৈধ-অবৈধ ডকইয়ার্ড, ছোট জেটি ও ঘাট। এগুলোর কারণে নদীর নাব্য হ্রাস, দূষণ ও বন্দর চ্যানেলে জাহাজ চলায় বিঘ্ন ঘটছে। বিভিন্ন সময় কর্তৃপক্ষ অভিযান চালিয়েও কোনো ফল পাচ্ছে না। অবৈধ স্থাপনা সরানোর নির্দেশ দিলেও গ্রাহ্য করছেন না দখলদাররা। এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, নদীর দক্ষিণ পাড়ে শিকলবাহা, চরলক্ষ্যা, ডাঙার চর, নগরপাড়ের চাক্তাই, বাকলিয়া, সদরঘাট ও বাংলাবাজার এলাকায় এসব অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের তালিকা অনুযায়ী নদী দখল করে ব্যবসা পরিচালনাকারী ডকইয়ার্ডগুলো কর্ণফুলীর প্রায় ১০০ একর তীর দখল করে জাহাজ-ট্রলার তৈরি ও মেরামতের কাজ করছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী, কর্ণফুলীর তীরে মোট ১৫৮ দশমিক ৪৫ একর ভূমিতে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, বড় শিল্পগ্রুপ, এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ দুই তীরে মোট দখলদারের সংখ্যা ২ হাজার ১৭২। অনুসন্ধানে দেখা যায়, কর্ণফুলীর তীর দখলে পিছিয়ে নেই অবৈধ বসতি স্থাপনকারী ও ইট-বালি-পাথর ব্যবসায়ীরাও। বিভিন্ন কোম্পানি, ফিশারিজ শিপইয়ার্ডের নামে কর্ণফুলীর দক্ষিণ তীরে চলছে নদী দখলের মহোৎসব। আর উত্তর তীরে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট জেটি ঘাট, বসতঘর ও কলোনি। অভিযোগ রয়েছে, এদের মধ্যে কেউ কেউ বন্দর প্রশাসনকে প্রভাবিত করে কাগজে-কলমে স্বল্প পরিসরে জেটি বা অন্য কোনো স্থাপনার অনুমোদন নিয়ে পরবর্তীতে সিমেন্ট-লোহার স্থাপনা নির্মাণ করে স্থায়ী দখলে নিয়ে নিয়েছেন। দেখা গেছে, নদী ও তীর দখল তত্পরতা অত্যন্ত ভয়াবহ। দখলদাররা পাকা, সেমিপাকা, কাঁচা কাঠামো নির্মাণ করে নদী ভরাট করছেন। নগরীর বাকলিয়া, চাক্তাই ও রাজাখালী এলাকায় কর্ণফুলীর পাড় দখল করে গড়ে উঠেছে বিশাল বস্তি বা কলোনি। শত কোটি টাকার সরকারি খাসজমি দখল করে এসব এলাকায় গড়ে উঠেছে ৫ হাজারের অধিক বস্তিঘর। সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে তা দখল করে জমিদারি প্রথায় ভাড়া দিয়ে আসছেন প্রভাবশালীরা। বাকলিয়া অংশে জসিম উদ্দিন ও চাক্তাই-রাজাখালী এলাকায় আকতার সিন্ডিকেট এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। পরিবেশবাদীদের অভিমত, দীর্ঘদিন ধরে কর্ণফুলীর তীর দখল করে ডকইয়ার্ডের ব্যবসা চলার প্রধান কারণ এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া। ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা তাদের সমুচিত শাস্তি নয়। এদের কাছে ২-৪ লাখ টাকা জরিমানা দেওয়া সহজ। এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনা থেকে এত বেশি অর্থ আয় হয় যে, জরিমানা দিতে তাদের গায়ে লাগে না। তাদের এমনই ঔদ্ধত্য যে, উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করতেও দ্বিধা করে না। কর্তৃপক্ষের উচিত এগুলো উচ্ছেদের পাশাপাশি আদালতের নির্দেশনা অমান্য করায় যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করা।

সর্বশেষ খবর