শিরোনাম
সোমবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মানহীন মোবাইল ফোন সেটের ছড়াছড়ি, বাড়ছে ই-বর্জ্য

আলী আজম

দেশের বাজারে নিম্নমান, অবৈধ ও নকল মোবাইল ফোন সেট ছেয়ে গেছে। মোবাইল ফোন সেটের নকল এক্সেসরিজ পণ্যেও পিছিয়ে নেই। বিভিন্ন সময় মোবাইল কোম্পানিগুলো লোভনীয় অফার ঘোষণা করে এসব ফোন সেট বিক্রি করছে। আর কোম্পানিগুলোর চটকদার অফারে এসব সেট কিনে প্রতারণার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

জানা গেছে, প্রতি বছর বৈধ-অবৈধভাবে সাড়ে ৩ কোটি মোবাইল সেট দেশে আসছে। সেই সঙ্গে চোরা পথে বা মিথ্যা ঘোষণা দিয়েও আনা হচ্ছে মানহীন মোবাইল ফোন সেট। ফলে শুধু সাধারণ মানুষ প্রতারিতই হচ্ছে না, দেশে বাড়ছে ই-বর্জ্য; যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। টেলিযোগাযোগ আইন থাকলেও এর প্রয়োগ না থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিম্নমানের প্রচুর হ্যান্ডসেট আমদানি করছেন। ফলে সরকার এ খাত থেকে বছরে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর মোতালেব প্লাজা, ইস্টার্ন প্লাজা, ইস্টার্ন মল্লিকাসহ বেশ কয়েকটি মার্কেট মোবাইল ফোন সেটের পাইকারি বাজার। এসব মার্কেট থেকে প্রতিদিন নকল ও নিম্নমানের সেট সারা দেশে পাইকারি সরবরাহ করা হচ্ছে। স্টেডিয়াম মার্কেটেও নকল ও নিম্নমানের মোবাইল সেট বিক্রি হচ্ছে হামেশা। অবৈধ পথে দেশে আসা মাত্রই কভার পরিবর্তন করে উপস্থাপন করা হয় নামিদামি ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোন সেট হিসেবে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, নিম্নমানের ও নকল মোবাইল ফোন সেটে অন্য সেটের চেয়ে বেশি লাভ। আবার ক্রেতারাও তুলনামূলক কম দামে এসব সেট পাচ্ছেন। ফলে বাজারে এসব সেটের কদর বেশি। জানা গেছে, ৭০০ থেকে ২ হাজার টাকা দামের এসব নকল সেট বিদেশ থেকে আমদানি করে দেশের বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ২০ হাজার টাকায়। অথচ সেটগুলোর স্থায়িত্ব কম। সেটের গায়ে যে কনফিগারেশন লেখা থাকে, তারও কোনো ঠিক নেই। বার বার কাস্টমার কেয়ারে যেতেও চান না গ্রাহকরা। অন্যদিকে অসাধু ব্যবসায়ীদের দাপটে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রকৃত ব্যবসায়ীরা। প্রকৃত ব্যবসায়ীরা বলছেন, অবৈধ পথে আমদানি হওয়া নিম্নমানের এসব সেটে দু-তিন মাসের মধ্যেই সমস্যা দেখা দেয়। বেশি সমস্যা হয় স্ক্রিন টাচ মোবাইলগুলোয়। এ ছাড়া অন্য মোবাইল সেট অত্যধিক গরম ও স্পিকার নষ্ট হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৯৯৬ সালে টেলিকম সেক্টরের বাজার উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর ভোক্তাদের সচেতনতার অভাব কাজে লাগিয়ে তাদের প্রতারিত করতে থাকেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। ২০০১ সালে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন করে ২০১০ সালে সংশোধন করা হয়। কিন্তু আইনটির যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় প্রতিনিয়তই নিম্নমানের হ্যান্ডসেট আমদানি হচ্ছে। এসব হ্যান্ডসেটের সব এমআইই নম্বর ভুয়া। এসব হ্যান্ডসেট ও কিছু এক্সেসরিজের রেডিয়েশন অত্যধিক, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, মোবাইল এক্সেসরিজ আমদানিতে কোনো নীতিমালা না থাকায় বাজারে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। বাংলাদেশ মোবাইল ফোন বিজনেসমেন অ্যাসোসিয়েশনের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশে প্রতি বছর ১ কোটিরও বেশি মোবাইল ফোন সেট বিক্রি হয়। আমদানিকৃত এসব সেট আসছে চীন, ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে।

আর প্রতি মাসে যেসব ফোন সেট বিক্রি হয় এর মধ্যে ২ হাজার টাকা মূল্যের সেট বিক্রি হয় প্রায় ৬০ শতাংশ, ২ থেকে ৫ হাজার টাকা মূল্যের ৪০ শতাংশ এবং ৫ হাজার টাকার ওপরের বিক্রি হয় প্রায় ১০ শতাংশ। দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের জীবন-জীবিকা এবং যোগাযোগ রক্ষায় বেশি ব্যবহার হয় ২ হাজার টাকা মূল্যের ফোন সেট। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নাক, কান ও গলা বিভাগের চিকিৎসক ফখরুল আলম বলেন, মোবাইল ফোন সেটের দীর্ঘস্থায়ী রেডিয়েশনের ফলে নাক, কান ও গলায় ক্যান্সার, ব্রেন টিউমার, মাথাব্যথাসহ আরও অনেক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। বাংলাদেশ মোবাইল ফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় মোবাইল হ্যান্ডসেট ও এক্সেসরিজ পরীক্ষা করে বাজারজাত করা উচিত।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর