সোমবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

নওয়াব ফয়জুন্নেসার বাড়ি ধ্বংসের পথে

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

নওয়াব ফয়জুন্নেসার বাড়ি ধ্বংসের পথে

উপমহাদেশের একমাত্র নারী নওয়াব— নওয়াব ফয়জুন্নেসা। যিনি শিক্ষা বিস্তারে কাজ করে অন্ধকারকে তাড়িয়েছেন। কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার পশ্চিমগাঁওয়ে ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে এ মহীয়সী নারীর জমিদার বাড়ি অবস্থিত। সংরক্ষণের অভাবে তার স্মৃতিচিহ্ন এ বাড়িটি হারিয়ে যেতে বসেছে। খসে পড়ছে এর আস্তর। এখানে সেখানে গজিয়েছে পরগাছা। দক্ষিণমুখী মূল বাড়িটি। তার পশ্চিম-দক্ষিণ পাশে বৈঠকখানা। বাড়ির পশ্চিমপাশে রয়েছে মসজিদ, ঈদগাহ, কবরস্থান ও নওয়াব ফয়জুন্নেসা সরকারি কলেজ। মসজিদ লাগোয়া কবরস্থানে নওয়াব ফয়জুন্নেসা এবং পরিবারের সদস্যদের কবর রয়েছে। নওয়াব ফয়জুন্নেসার বাড়ি দেখতে প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন। এটি একটি পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে বলে মন্তব্য সচেতনদের। নওয়াব ফয়জুন্নেসার ৫ম বংশধর (মেয়ে বদরুন্নেসার দিকের) সৈয়দ মাসুদুল হক জানান, ১৮০০ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বাড়িটি নির্মিত হয়েছে। ফয়জুন্নেসার বিয়ের দেনমোহরের এক লাখ এক টাকা দিয়ে বাড়িটি নির্মিত হয়। নওয়াব ফয়জুন্নেসা ১৮৩৪ সালে কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার পশ্চিমগাঁওয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আহমেদ আলী চৌধুরী। পাশের বরুড়া উপজেলার গাজী চৌধুরীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তার দুই মেয়ে আরশাদুন্নেসা ও বদরুন্নেসা। ১৮৫৫ সালে ফয়জুন্নেসার মা মারা যান। মাতৃ বিয়োগের পর তিনি বিশাল সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন। ১৯০৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর এ মহীয়সী নারীর মৃত্যু হয়। দেশে-বিদেশে ফয়জুন্নেসা শিক্ষা বিস্তার ও মানবতার সেবায় অনেক কাজ করেছেন। নওয়াব ফয়জুন্নেসা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আহমেদ রিয়াদ ও ফেরদৌস রিফাত জানান, ফয়জুন্নেসা নবাব ছিলেন, কিন্তু তিনি কী কাজ করেছেন তা জানি না। স্থানীয় সংবাদকর্মী নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, নওয়াব ফয়জুন্নেসার জীবনী পাঠ্যপুস্তকে স্থান দিতে হবে। এতে নতুন প্রজন্ম নওয়াব ফয়জুন্নেসার আলোকিত জীবন সম্পর্কে জানতে পারবে।

ফয়জুন্নেসার বাড়িতে অবস্থান করা ৫ম বংশধর সৈয়দ আবদুল হকের স্ত্রী সৈয়দ রেহানা হক বলেন, নওয়াব ফয়জুন্নেসা জাতীয় সম্পদ। নওয়াব ফয়জুন্নেসার জীবনী পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করছি। এ ছাড়া তিনি ফয়জুন্নেসার বাড়িটি সংরক্ষণ করারও আবেদন জানান। নওয়াব ফয়জুন্নেসা ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আজাদ সরকার লিটন বলেন, ফয়জুন্নেসার বাড়িটি সংরক্ষণ করে এখানে একটি স্মৃতি জাদুঘর করা যেতে পারে। এ জন্য আমরা গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করছি। এরপর বাড়িটি সংরক্ষণে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাব। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিল্লার কার্যালয়ের আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন জানান, নওয়াব ফয়জুন্নেসার জীবন ও কর্ম সম্পর্কে আমরা অবগত রয়েছি। তার বাড়িটি সংরক্ষণ করা যায় কিনা সে লক্ষ্যে তা পরিদর্শন করেছি। এ বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে কর্তৃপক্ষকে জানাব।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর