মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলার আসর

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলার আসর

ডিসেম্বর বাঙালির এক গৌরবান্বিত অধ্যায়। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পাক হানাদার বাহিনীর কবল থেকে দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে বীর বাঙালির অকুতোভয় সেনারা। বিজয় দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে জাতীয় জাদুঘরের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলার অনুষ্ঠান। গতকাল সকালে জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের গল্প তুলে ধরেন অবসরপ্রাপ্ত কমোডর এ. ডব্লিউ. চৌধুরী বীর উত্তম, বীর বিক্রম অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল তৌফিকুর রহমান এবং অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন সাহাবুদ্দিন আহমেদ বীর উত্তম। অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল কাজী সাজ্জাদ  আলী জহির বীর প্রতীকের সভাপতিত্বে এতে স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। গভীর মনোযোগের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের গল্পগুলো শুনে তরুণ প্রজন্ম এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে। দেশের প্রতি মমত্ববোধের গভীরতায় গল্প শুনতে আসা শ্রোতাদের দুচোখ বেদনায় অশ্রুসজল হয়ে ওঠে।  অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন সাহাবুদ্দিন আহমেদের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণের মধ্য দিয়েই মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলার এই অনুষ্ঠান শুরু হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে আকাশপথের  লোমহর্ষক চিত্র তুলে ধরে ক্যাপ্টেন সাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, সবই সম্ভব হয়েছে দেশের জন্য বাঙালি জাতির ভালোবাসার কারণে। তিনি বলেন, আমি ছিলাম পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স-এ। ৩৫০ জনের মধ্যে আমরা বাঙালি ছিলাম মাত্র ৩০ জন। একসময় আমরা ইস্ট পাকিস্তান অ্যাসোসিয়েশন গঠন করি। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর থেকেই আমরা মানসিকভাবে তৈরি ছিলাম। ২৫ মার্চ কাল রাতের যে বর্বরতা ও গণহত্যা এটা হওয়ার কথা ছিল ১৮ মার্চ। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আসতে দেরি হয়েছিল বলে সেটা ২৫ মার্চ রাতে হয়। পরবর্তীতে আমরা ভারত সরকারের কাছে প্রস্তাব করি আমাদের বিমান দেয়া হোক, তারা রাজি হলো। তিনটি বিমান নিয়ে ১৯৭১ এর সেপ্টেম্বরে বিমান বাহিনীর যাত্রা শুরু। আমরা ছিলাম ৯জন পাইলট। তাদের মধ্যে ৬জন বেসামরিক। পরে আমরা সামরিক প্রশিক্ষণ নিলাম। ৩ ডিসেম্বর আমরা নারায়ণগঞ্জে আক্রমণ করলাম। ৫ তারিখের মধ্যে পাকিস্তানি বিমান বাহিনীকে আমরা নিশ্চিহ্ন করে দিলাম। অথচ আমাদের অপারেশনে যুদ্ধ বিমানও ছিল না। কর্নেল তৌফিকুর রহমান স্মৃতিচারণে প্রশিক্ষণের কথা, গেরিলা যুদ্ধের কথা এবং তার সহযোদ্ধাদের অদম্য বীরত্বের কথা উঠে আসে।

 

অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল তৌফিকুর রহমান বলেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ রাস্তায় বেরিয়ে দেখি সুনসান নীরবতা। আমার বয়স তখন ১৫ বছর। জগন্নাথ হলে লাশের পর লাশ দেখে আমি ঘুমাতে পারি না। পরের দিন রাতে আবার হত্যাযজ্ঞ চলে। যখন বুঝলাম পাকিস্তানি হানাদাররা আমাদের সঙ্গে যা খুশি তাই করতে পারে তখন সিদ্ধান্ত নিলাম অস্ত্র হাতে নেব। আমরা ৪ বন্ধু বাড়ি থেকে পালিয়ে মেলাঘরে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেই। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহের দিকে ধামরাইয়ে রওনা হই।

কমোডর এ ডব্লিউ চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বলার বা শোনার বিষয় নয়। মুক্তিযুদ্ধ অনুভবের বিষয়।

তিনি বলেন, আমি তখনও ফ্রান্সে। একজন সাবমেরিনার হিসেবে সেখানে বসেই জাতির জনকের ভাষণ শুনেছি। আমার সঙ্গে আরও ছিলেন ৮জন। আমরা যে কোনোভাবেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম। নানা দেশ পাড়ি দিয়ে আমরা দেশে এসে নৌসেনাদের নিয়ে অপারেশন জ্যাকপট সফলভাবে সম্পন্ন করেছিলাম।

সভাপতির বক্তব্যে লে. কর্নেল (অব) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বলেন, যাদের জন্য আমরা স্বাধীন মাতৃভূমি পেয়েছি সেইসব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গল্প বলার অনুষ্ঠান আরও বেশি করে আয়োজন করা প্রয়োজন। ’৭১-এর বীরগাথা বাঙালী জাতিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শেখায়।

সর্বশেষ খবর