মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

দিয়াজের মৃত্যুতে নতুন রহস্য হারানো সনদ মিলল চবিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

দিয়াজের মৃত্যুতে নতুন রহস্য হারানো সনদ মিলল চবিতে

চট্টগ্রামের ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর মৃত্যু নিয়ে দেখা দিয়েছে নতুন রহস্য। লাশের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের পরদিনই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) একটি ছাত্রাবাসের ডাইনিংয়ের পাশে পাওয়া গেছে তার স্নাতক ও তার বাবার মুক্তিযোদ্ধা সনদ। পরিবারের দাবি, ‘গত ২০ নভেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বাসা থেকে দিয়াজের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের সময় থেকেই ওই দুটি সনদ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এর আগে গত ৩১ অক্টোবর রাতে দিয়াজের বাসায় ভাঙচুরের সময় অন্য জিনিসপত্রের সঙ্গে এসব সনদও ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এবং পরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি আলমগীর টিপুর অনুসারীরা সনদ দুটি ফিরিয়ে দেয়।’

গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত হলের ডাইনিংয়ের পাশে খোলা জায়গায় ঝাড়ু দেওয়ার সময় সনদ দুটি পান কর্মচারীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আলী আজগর চৌধুরী বলেন, ‘সনদ দুটি দেখে মনে হচ্ছে এগুলো কেউ তাত্ক্ষণিকভাবে ফেলে গেছেন। কারণ যদি রাতে ফেলত তাহলে ওগুলো ভেজা থাকত। সনদগুলো এখন আমাদের কাছে আছে।’ এ বিষয়ে দিয়াজের বোন আইনজীবী জুবাইদা সারওয়ার চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এখন সনদ পাওয়ার মানে হচ্ছে এগুলো খুনিরা নিয়ে গিয়েছিল। এখন ফেলে গেছে। বিষয়টি আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সিআইডিকে জানিয়েছি।’ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি দিয়াজ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক ছিলেন। ক্যাম্পাসে নতুন কলাভবন ও শেখ হাসিনা হলের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের ৯৫ কোটি টাকার দরপত্র নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি আলমগীর টিপুর সঙ্গে তার বিরোধ চলছিল মৃত্যুর আড়াই মাস আগে থেকে। সেই বিরোধ, চাঁদা দাবিসহ নানা কারণে ‘ষড়যন্ত্র’ করে দিয়াজকে ‘হত্যার পর লাশ ঘরে ঝুলিয়ে’ রাখা হয় বলে দাবি তার পরিবারের। জুবাইদা জানান, গত ৩১ অক্টোবর ক্যাম্পাসের দুই নম্বর গেট এলাকায় দিয়াজের বাসাসহ ছাত্রলীগের চার নেতা-কর্মীর বাসায় হামলা ও লুটপাট চালানো হয়। ‘সেদিন আমার মায়ের স্বর্ণালঙ্কার, দিয়াজের ল্যাপটপ আর সনদপত্রগুলো নিয়ে যায় আলমগীর টিপুর অনুসারীরা।’ জুবাইদা বলেন, ‘নভেম্বরের ১০ তারিখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ছোটভাই মিরাজ ইরফান চৌধুরীর সাক্ষাৎকার ছিল। সেখানে আমাদের বাবা ছরওয়ার কামালের মুক্তিযোদ্ধা সনদ প্রয়োজন পড়ে। জুবাইদা বলেন, ‘এরপর দিয়াজ তার কাছে পাঁচ হাজার টাকা চেয়ে বলেছিলেন, সার্টিফিকেট ফিরিয়ে দিতে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেছে টিপুর অনুসারীরা। তিনি টাকা দিলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমতিয়াজ অভি ৮ নভেম্বর সার্টিফিকেটগুলো ফিরিয়ে দিয়ে যান।’ ‘মিরাজ ঢাকায় সাক্ষাৎকার দিয়ে ফেরার পর বাবার মুক্তিযোদ্ধা সনদ দিয়াজের কাছেই ছিল। ও মৃত্যু দিন থেকে আর সেসব সনদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।’ ওইদিন থেকে দিয়াজের মোবাইল ফোন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে পরা ব্লেজারও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান জুবাইদা।

তিনি বলেন, ‘১৮ নভেম্বর আমি দিয়াজের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, বাসা থেকে নিয়ে যাওয়া মার স্বর্ণালঙ্কার আর ল্যাপটপ কখন ফেরত পাওয়া যাবে। দিয়াজ বলেছিল ২০ নভেম্বর ওরা ল্যাপটপ ফেরত দেবে বলেছে। তারপরই গয়নার বিষয়ে কথা বলবে।’

দিয়াজের মৃত্যুর পর ২১ নভেম্বর প্রথম দফায় ময়নাতদন্ত করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের তিন চিকিৎসক। ২৩ নভেম্বর তারা যে প্রতিবেদন দেন, সেখানে দিয়াজের মৃত্যুর কারণ ‘আত্মহত্যা’ লেখা হয়। ওই ময়নাতদন্ত প্রত্যাখ্যান করে দিয়াজের পরিবার অভিযোগ করে, প্রভাবশালীরা প্রতিবেদন প্রভাবিত করেছে। পরদিন আলমগীর টিপু ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন চৌধুরীসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী। এরপর তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজে দিয়াজের দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করা হয়। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক দিয়াজের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়ার কথা জানালেও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ না করে বলেছেন, চট্টগ্রামের ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে তারা প্রতিবেদন দেবেন। দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তের পর রবিবার গভীর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে দিয়াজের লাশ আবার দাফন করা হয়।

 

সর্বশেষ খবর