মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের সুদমুক্ত ঋণ

স্বপ্নের নতুন ঠিকানায় এখন বাঞ্ছারামপুরের ৪৫ নারী

সালমা আহমেদ, বাঞ্ছারামপুর

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর। এখানে পাশাপাশি ১০টি গ্রামের গৃহবধূ, কলেজ-স্কুলপড়ুয়া ছাত্রী; এমনকি একসময়ের অশিক্ষিত, স্বল্পশিক্ষিত বেকার গৃহবধূ-তরুণী সবাই টুপি তৈরি করেন। দিনভর তারা এ কাজে ব্যস্ত থাকেন। সারা বছরই এ অবস্থা। বেকার থাকার দিন তাদের আর নেই। টুপি বানানোর আয়ে উজানচর আর তার সংলগ্ন আরও নয়টি গ্রামের প্রায় ছয় হাজার নারী স্বাবলম্বী হয়েছেন। এক বছর আগে তারা প্রাথমিক ঋণ পেয়ে এ কাজে নেমেছিলেন।  ঋণ দিয়েছে বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন। এ ঋণ আর আট-দশটা এনজিও, মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়া, দাদন ব্যবসায়ী বা ব্যাংকের মতো ছিল না। শতভাগ সার্ভিস চার্জবিহীন ও সুদমুক্ত এ ঋণ পেয়ে গ্রামের ৪৫ জন নারী এখন নতুন এক স্বপ্নের ঠিকানা পেয়েছেন। একসময়ের কর্মহীন ও অসুস্থ সুরুজ মিয়ার স্ত্রী আছিয়া বেগম জানান, সাত সন্তান নিয়ে তিনি দুই চোখে অন্ধকার দেখছিলেন, এমন সময় বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের মাঠ সুপারভাইজার মো. শাহাজাহান তাকে প্রতি তিন মাস পরপর মুনাফাবিহীন ক্ষুদ্রঋণ সহায়তার কথা জানান। সে অনুযায়ী গেল বছরের এপ্রিলে তিনি প্রথম দফায় পাঁচ হাজার টাকা ঋণ পেয়ে লেগে যান টুপি তৈরির কাজে। পাড়াতলী গ্রামের রত্না দাসী (৪৫) বাঁশ-বেত ও বাঁশি তৈরির নিপুণ কারিগর। স্বামী কিরণ দাসের মৃত্যুর পর অভাব-অনটনে তিন মেয়ে নিয়ে একরকম তলিয়ে যেতে বসেছিলেন। কাজের সন্ধানে ঘুরছিলেন এ গ্রাম-ও গ্রাম। এ অবস্থায় তিন বছর আগে তিনি বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের দেখা পান। তাকে দেওয়া হয় নির্দিষ্ট ৩৩টি বিভিন্ন স্কিমের আওতায় প্রথম দফায় ৫ হাজার, এরপর ৭ হাজার ৫০০ টাকা। এ দিয়ে শুরু হয় জীবনের নতুন সংগ্রাম। এক পক্ষকালের মধ্যেই তিনি আয়ত্তে নিয়ে আসেন বাঁশি তৈরিসহ বাঁশ-বেতের নানা পণ্য উৎপাদনের কৌশল। তারপর আর পিছে ফিরতে হয়নি। এখন তার তিন মেয়ের মধ্যে দুজন যথাক্রমে চতুর্থ ও প্রথম শ্রেণিতে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ছে। অবসরে মাকে সহায়তা করে এরা। আছিয়া বেগম বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের ঋণ নিয়ে টুপি তৈরি করেন। নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা পাইকাররা তার টুপি নিয়ে যান এবং এ টুপি তাদের মাধ্যমে চলে যায় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। পাইকাররা টুপিপ্রতি লাভ করেন ১০০ টাকা। আছিয়া বেগম বলেন, ‘আমার ডিজাইনগুলান নিয়া কাড়াকাড়ি শুরু হইয়া যায়। আমগো দেশেই এ টুপির কাস্টমার আইয়্যা এক-দেড়শ’ টাকায় কিন্ন্যা নিয়া যায়।’ কথায় কথায় জানা যায়, আছিয়ার মতো অনেকেই বিভিন্ন বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতেন। এখন সার্ভিস চার্জবিহীন সুদমুক্ত ঋণ পেয়ে তারা সবাই স্বাবলম্বী। এমনকি তারা নিজেরাই এখন এক-দুজন করে মজুরিভিত্তিক নারী শ্রমিক রেখে টুপি উৎপাদন করছেন। এই নারীদের কয়েকজন তাদের ভাগ্য বদলের জন্য বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ‘ঋণ আদায়ে জোরজবরদস্তি নাই, চোখ রাঙ্গানি নাই। বিনা লাভে কয়জনে এমনডা করে!’ বলেন ঋণগ্রহীতা বেশ কজন। তারা জানান, তারা এখন স্বাধীনতার স্বাদ ভোগ করছেন। কোনো উদ্বেগ নেই। ঘুম থেকে সকালে উঠে হাঁড়িতে চাল-আলু কীভাবে চড়াবেন সেই চিন্তা নেই। বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সদরে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের পৈতৃক নিবাসে অবস্থিত বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের ইনচার্জ মো. মোশাররফ হোসেন জানান, সুদমুক্ত ঋণসহায়তা দিয়ে বাংলার হারিয়ে যেতে বসা ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য নিরলস চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এই সঙ্গে স্বাবলম্বী করে তোলা হচ্ছে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে। বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের প্রধান সমন্বয়ক ও ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের প্রকাশক ময়নাল হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের ৩৩টি স্কিমের আওতায় সমাজের পিছিয়ে পড়া, দরিদ্র, স্বামীপরিত্যক্তাদের সৃজনশীল করে তুলতে এবং ক্ষুদ্র শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে ও নারী কারিগররা যেন স্বাধীনভাবে উপার্জন করতে পারেন সেজন্য প্রতি তিন মাস পরপর ক্ষুদ্র ঋণ শতভাগ মুনাফাহীন ও কোনো প্রকার সার্ভিস চার্জ ছাড়াই বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের ঐকান্তিক ইচ্ছায় নিয়মিতভাবে দেওয়া হচ্ছে। এটা চলমান থাকবে।’    

সর্বশেষ খবর