বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত

রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় জাতি গতকাল স্মরণ করেছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের। এ উপলক্ষে রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ফুলে ফুলে ভরে ওঠে। সকালে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর দলীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধের শহীদবেদিতেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্যবর্গসহ নানা বয়সের হাজারো মানুষ জড়ো হন মিরপুর আর রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধে। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী, লেখক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ বহু খ্যাতিমান বাঙালিকে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করে রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরা। পরে শরীরে নিষ্ঠুর নির্যাতনের চিহ্নসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের লাশ পাওয়া যায় মিরপুর ও রায়েরবাজার এলাকায়। গতকাল সকালে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরপুরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর একে একে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোট, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা, শহীদ পরিবারের সদস্যরা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, ঢাকার দুই মেয়র, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। শ্রদ্ধা জানান বিএনপি চেয়ারপারসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। স্বাধীনতাযুদ্ধে নিজেদের পরাজয় নিশ্চিত জেনেই পাকিস্তানি বাহিনী ওই নিধনযজ্ঞ চালায়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতার পর যেন বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে তা নিশ্চিত করা। গতকাল সকাল পৌনে ৭টায় প্রধানমন্ত্রী মিরপুরের বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ চত্বরে পৌঁছালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, ঢাকার দুই মেয়র আনিসুল হক ও সাঈদ খোকন এবং তিন বাহিনীর প্রধান তাকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রী এরপর স্মৃতিসৌধে উপস্থিত শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। সকাল ৭টার কিছুক্ষণ আগে রাষ্ট্রপতি শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী তাকে স্বাগত জানান। এরপর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধের বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। ফুল দিয়ে আবদুল হামিদ ও শেখ হাসিনা কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধ ত্যাগ করার পর সর্বসাধারণের জন্য তা খুলে দেওয়া হয়। জাতীয় পতাকা আর শ্রদ্ধার ফুল হাতে নানা বয়সের হাজারো মানুষ জড়ো হন শহীদবেদিতে। জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ এবং জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা এ সময় সঙ্গে ছিলেন। ১৪ দলের পক্ষে জাসদের হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন ও আওয়ামী লীগসহ শরিক দলগুলোর নেতারা বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সিপিবি-বাসদের পক্ষে রুহিন হোসেন প্রিন্স, জাসদের পক্ষে হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, গণফোরামের পক্ষে ড. কামাল হোসেন, এলডিপির পক্ষে অলি আহমদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা মিরপুরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জাতীয় পার্টির (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদও শহীদদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা আলাদাভাবে ফুল দেন শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির উদ্দেশে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে উপাচার্য ফারজানা ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ শ্রদ্ধা জানান স্মৃতিসৌধে। বাংলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও জানানো হয় ফুলেল শুভেচ্ছা। রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধের শহীদবেদিতেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে রায়েরবাজারে যেভাবে ফেলে রেখে যাওয়া হয়েছিল, অভিনয়ের মাধ্যমে মূল বেদির পাশে সেই দৃশ্যের রচনা করে কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসকে জানতে, শহীদদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও এসেছিল রায়েরবাজার বধ্যভূমির স্মৃতিসৌধে। অনেকে সপরিবারে এসেছেন। শ্রদ্ধা জানিয়েছেন শহীদদের। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতা তুলে ধরতে সচিত্র ব্যানার সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধের পাশে। ছোট ছোট ব্যানারে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, মুক্তিযুদ্ধের নানা দৃশ্য। দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধুর হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার দৃশ্যও টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন : রাজধানী ছাড়াও সারা দেশে গতকাল শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়েছে। এ দিবসে সাংবাদিক, লেখক, শিক্ষক, পেশাজীবী এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন ছাড়াও প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলো নানা কর্মসূচি পালন করে। মূল কর্মসূচির মধ্যে ছিল বুদ্ধিজীবী ও শহীদ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, শোক মিছিল, আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর অনুযায়ী চট্টগ্রাম, বগুড়া, পাবনা, বরিশাল, রাজবাড়ী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, দিনাজপুর নেত্রকোনা, জামালপুর, গোপালগঞ্জ, কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিলেটে উপরোক্ত কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

 

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আপ্লুত শহীদকন্যা শমী কায়সার

 

শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দলীয় নেতৃবৃন্দ

 

ফুল দেয় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি

সর্বশেষ খবর