সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

আচরণবিধি মানছেন না এমপিরা ভোটারদের ওপর বাড়ছে চাপ

জেলা পরিষদ নির্বাচন

প্রতিদিন ডেস্ক

জেলা পরিষদ নির্বাচনে আচরণবিধি মানছেন না এমপিরা। তারা চেয়ারম্যান ও সদস্যদের পক্ষে ভোট চাইছেন। শুধু তাই নয়, ভোট দেওয়ার পর ব্যালট পেপারের ছবি মোবাইল ফোনে তুলে আনার জন্যও তারা ভোটারদের চাপ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেক প্রার্থীকে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে শোকজ ও জরিমানা করা হয়েছে। অনেক প্রার্থী হত্যাসহ বিভিন্ন মামলারও আসামি।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—

রাজশাহী :  জেলা পরিষদ নির্বাচনে আচরণবিধি মানছেন না এমপিরা। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে তারা পছন্দের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের পক্ষে ভোট চাইছেন। শুধু তাই নয়, ভোট দেওয়ার পর ব্যালট পেপারের ছবি মোবাইল ফোনে তুলে আনার জন্য ভোটারদের কয়েকজন এমপি চাপ দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার দোগাছী এলাকার ‘স্বপ্নপল্লী’ নামে একটি পার্কে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী ভোটারদের নিয়ে ভূরিভোজ করেছেন। এদিন জেলার পুঠিয়া উপজেলা সদরের তাজ কমিউনিটি সেন্টারে ভোটারদের নিয়ে ভূরিভোজ করেছেন এমপি আবদুল ওয়াদুদ দারা। এ সময় তিনি রাজশাহীর চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহবুব জামান ভুলুকে ভোট দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। তবে এমপি আবদুল ওয়াদুদ জানান, সেখানে জনপ্রতিনিধি ছাড়াও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। তিনি তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। কারও জন্য ভোট চাননি। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকে তানোর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার জনপ্রতিনিধিরা স্বপ্নপল্লীতে যেতে শুরু করেন। দুপুরের দিকে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী সেখানে যান। এ সময় তিনি ভোটারদের নিয়ে নির্বাচনী আলোচনা সভা শুরু করেন। সভা শেষে রাজশাহী জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহবুব জামান ভুলুর তালগাছ ও দুই নম্বর ওয়ার্ড সদস্য প্রার্থী গোলাম মোস্তফার হাতি প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য সবাইকে শপথ করান। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌরসভা মেয়র গোলাম রাব্বানী ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় হাজির হওয়ার জন্য উপজেলার সবকটি ইউপির চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ফলে জেলা পরিষদ নির্বাচনে তানোরের মোট ১২০ জন ভোটার সেখানে হাজির হয়েছিলেন। ওই সভায় নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী দল সমর্থিত প্রার্থীকে ভোট দিতে ভোটারদের নির্দেশ দেন। তবে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘ওটা নির্বাচনী সভা নয়, দলের বনভোজন ছিল। বনভোজন করা আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে না।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক জনপ্রতিনিধি জানিয়েছেন, রাজশাহীর এমপিরা দলের প্রার্থীর পক্ষে জনপ্রতিনিধিদের ভোট দিতে এবং মোবাইল ফোনে তা তুলে এনে দেখাতে নির্দেশ দিয়েছেন। তা না করলে সরকারি বরাদ্দ বাতিলের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। তবে নির্বাচন কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম প্রামাণিক জানিয়েছেন, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কক্সবাজার : জাহাঙ্গীর আলম, যুবলীগের পেকুয়া উপজেলা সভাপতি। তিনি ৩টি ফৌজদারি মামলার আসামি। তিনি জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৪ নং ওয়ার্ডের একজন সদস্য প্রার্থী। তার প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াজ খান রাজুও মামলার আসামি। জেলা পরিষদ নির্বাচনে ১৫টি সাধারণ সদস্য পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ৫১ প্রার্থীর মধ্যে ১০ জন ফৌজদারি মামলার আসামি। হত্যা, হত্যা প্রচেষ্টা থেকে নারী নির্যাতন দমন আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা বিচারাধীন। ফৌজদারি মামলায় বিচারাধীন আসামিদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাকে আশঙ্কাজনক উল্লেখ করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এম এ বারি বলেন, আসামিদের এভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা জেলাবাসীর জন্য কলঙ্কজনক। এদিকে, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী পাঁচ সদস্য প্রার্থীকে শোকজ করা হয়েছে। নির্বাচনী  আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে  তাঁদের শোকজ করেছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার মো. মোজাম্মেল হোসেন। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হোসেন বলেছেন, ‘অভিযুক্তরা যথাসময়ে কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব না দিলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সুনামগঞ্জ : জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ব্যারিস্টার এনামুল কবির  ইমনকে নির্বাচনী আরচণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। শনিবার রাত ৮টার দিকে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অঞ্জন দাস এ জরিমানা করেন।

সর্বশেষ খবর