মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
জেলা পরিষদ নির্বাচন

রাজশাহীতে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ বরিশালে প্রচারণা তুঙ্গে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহীতে দুই এমপির বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন এক বিদ্রোহী প্রার্থী। রাজশাহী জেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরকার গতকাল রিটার্নিং অফিসার কাজী আশরাফ উদ্দীনের কাছে লিখিতভাবে এ অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, শনিবার দিনভর রাজশাহী-১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী বনভোজনের নামে ও রাজশাহী-৫ আসনের এমপি আবদুল ওয়াদুদ দারা পুঠিয়া ও দুর্গাপুর উপজেলার সব ভোটারদের নিয়ে সভা করেছেন। সভায় তিনি ভোটারদের মাহবুব জামান ভুলুকে তালগাছ প্রতীকে ভোট দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। এতে আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে।

অভিযোগে আরও বলা হয়, এমপি দারা দুই সভায় ভোটারদের বলেছেন, তাদের দলীয় প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার প্রমাণ হিসেবে সিলমারা ব্যালটের ছবি মোবাইল ফোনে তুলে আনতে হবে। কেন্দ্রের বাইরে থাকা দলীয় প্রার্থীর পর্যবেক্ষকদের তা দেখাতে হবে। মোহাম্মদ আলী সরকার দুই এমপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভোট কেন্দ্রে প্রবেশের সময় ভোটারদের মোবাইল ফোন সঙ্গে নিতে না দেওয়ার দাবি করেছেন।

খুলনায় হামলার প্রতিবাদে ঢাকায় মানববন্ধন : খুলনার জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী অজয় সরকারের ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ মাইনোরিটি ওয়াচ ও বাংলাদেশ সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট। এ সময় সংগঠন দুটির পক্ষ থেকে দুষ্কৃতকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানানো হয়। মানববন্ধনের বক্তারা অভিযোগ করেন, খুলনার জেলা পরিষদ নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী অজয় সরকারকে হত্যার উদ্দেশে গুলি ও গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এমনকি তার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য প্রতিনিয়ত হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। প্রসঙ্গত, গত ৩ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে বের হওয়ার সময় খুলনা জেলা প্রশাসন ও রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের সামনে অজয় সরকারের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার বাম হাত ও পেট কেটে যায় এবং গাড়িও ভাঙচুর করা হয়।

বরিশাল জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রচারণা তুঙ্গে : ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় বরিশাল জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা তুঙ্গে। পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে শহর-বন্দর-গ্রাম। সর্বত্র বিরাজ করছে নির্বাচনী আমেজ। আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে নগরী, জেলার ১০ উপজেলা ও ৮৫ ইউনিয়ন চষে বেড়াচ্ছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষস্থানীয় নেতারা। তারা বিভিন্ন উপজেলায় নির্বাচনী সভা করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মইদুল ইসলামের আনারস প্রতীকের পক্ষে ভোট চাইছেন। অন্যদিকে প্রথমে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেলেও পরে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়া চেয়ারম্যান প্রার্থী খান আলতাফ হোসেন ভুলু বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে সভা করছেন। এ ছাড়া তিনি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন ভোট চাইতে। খান ভুলু অভিযোগ করেন, তার ঘোড়া প্রতীকের পক্ষে কাজ না করতে ভোটারদের ফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মো. মইদুল ইসলামের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেওয়া সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, বিজয় দিবস উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচি পালন করছেন তারা। এরই অংশ হিসেবে শনিবার বানারীপাড়ায় ও রবিবার বাকেরগঞ্জে মহান বিজয় দিবসের আলোচনা সভা করেছেন। আজ সকালে নগরীর ভাটিখানায় তার বাসায় সিটি করপোরেশন, সদর উপজেলা এবং বাবুগঞ্জ উপজেলার নেতা-কর্মীদের নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। আগামীকাল আলোচনা সভা হবে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায়। তিনি বলেন, বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় কোনো প্রার্থীর পক্ষে তারা ভোট চাইছেন না। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মইদুল ইসলাম দলের দায়িত্বশীল নেতা হওয়ায় সেসব সভায় অংশগ্রহণ করছেন। এদিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী খান আলতাফ হোসেন ভুলুর দাবি, বিজয় দিবসের আলোচনা সভার আড়ালে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা চেয়ারম্যান প্রার্থী মইদুল ইসলামের পক্ষে ভোট চাইছেন। ওইসব আলোচনা অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি ও সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুচ এমপি বিশাল গাড়িবহর নিয়ে আনারস প্রতীকের প্রার্থীকে সঙ্গে নিয়ে ভোট চাইছেন, যা নির্বাচনী আচরণবিধির সম্পূর্ণ লঙ্ঘন। এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও রিটার্নিং অফিসারকে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে দাবি করেন খান ভুলু। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুচ এমপি বলেন, ‘বিজয়ের মাসে বিজয় দিবসের আলোচনা করছি। এটা কোনো নির্বাচনী সভা নয়। তাই নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের কোনো সুযোগ নেই।’ নির্বাচন কমিশন থেকে এলাকা ছাড়তে বলা হলেও তিনি এবং সভাপতি হাসানাত এমপি সেই নির্দেশ মানছেন না— বিদ্রোহী প্রার্থীর এমন অভিযোগের বিষয়ে এমপি ইউনুচ বলেন, এলাকায় থাকলে যদি সমস্যা হয়, তাহলে বিদ্রোহী প্রার্থী কিংবা নির্বাচন কমিশন নির্বাচনকালীন তাদের বিদেশ পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করুক। বরিশালের জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদ নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান বলেন, খান আলতাফ হোসেন ভুলুর দুটি অভিযোগ পেয়েছেন, যাতে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর