বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
ভারতীয় রুপি হয়রানি

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে কমছে যাত্রী, বিপাকে ব্যবসায়ীরা

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

ভারতে সম্প্রতি ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিলের প্রভাবে মন্থর গতিতে চলছে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। দেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় এই বন্দরে দিন দিন কমছে যাত্রী। ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে। রুপি হয়রানির কবলে পড়ে ভারতগামী অনেক যাত্রীই পিছিয়ে দিচ্ছেন যাত্রার তারিখ।

ভারত ঘুরে যারা দেশে ফিরছেন তারাও বলেছেন অশেষ ভোগান্তির শিকার হওয়ার কথা। রুপি বিনিময় করতে গিয়ে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে তাদের প্রায় সবাইকে। চিকিৎসা মাঝপথে রেখে সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। এ পথে এমনিতে গড়ে ৮০০ থেকে ১ হাজার লোক প্রতিদিন ভারতে যাতায়াত করে। এখন তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট সূত্রে জানা গেছে, সেপ্টেম্বরে এই চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে যাতায়াত করেছেন ২ হাজার ১৭ জন, অক্টোবরে ২ হাজার ৩৭২ জন । নভেম্বরে যাত্রীসংখ্যা কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৯৩ জনে। ডিসেম্বরের ১৭ তারিখ পর্যন্ত যাতায়াতকারী যাত্রীর সংখ্যা   মাত্র ৮৮৭ জন। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, চিকিৎসা, ব্যবসা, বেড়ানোসহ বিভিন্ন কারণে প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার বাংলাদেশি নাগরিক ভারতে প্রবেশ করেন। এ হিসেবে প্রতিবছর ভারত সফর করেন প্রায় ১১ লাখ বাংলাদেশি। ভিসা পেতে নানা জটিলতার পরও ভারত ভ্রমণ করা বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে সংখ্যার বিচারে বাংলাদেশিরা আছেন দ্বিতীয় অবস্থানে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৮ নভেম্বর আকস্মিক এক টেলিভিশন ভাষণে রুপির বড় দুটি নোট বাতিল করে নতুন নোট চালুর ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, জাল নোট, কালো টাকা ও দুর্নীতি ঠেকাতে তার এ উদ্যোগ। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে মানি চেঞ্জার ও রুপি ব্যবসার দালালরা হঠাৎ বাংলাদেশি টাকার মূল্য কমিয়ে দিয়েছেন। কয়েক মাস আগে বাংলাদেশি ১০০ টাকার বিপরীতে ৮৬ থেকে ৯০ রুপি দেওয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে দেখা হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ রুপি দেওয়া হচ্ছে। ফলে যাত্রীদের বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এদিকে ভারতীয় মুদ্রা সমস্যার কারণে বিপাকে পড়েছেন এই স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারকরা। তারা বলছেন, এলসি নির্দিষ্ট পরিমাণের মালামালের চাহিদা দিয়ে এলসির মাধ্যমে টাকা পাঠানো  হলেও চাহিদামতো মালামাল পাঠাতে পারছেন না ভারতীয় রপ্তানিকারকরা। কারণ তারা টাকা তুলতে পারছেন না। ডিসেম্বরের শুরুতে নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার হরিকান্ত রায় অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার জন্য শিলিগুড়ি  গিয়েছিলেন। ভারতীয় ৫০০ ও ১ হাজার টাকার নোটের সমস্যার কথা জানলেও রুপির বিপরীতে টাকার মূল্যের এমন অবস্থার কথা তিনি জানতেন না। তিনি জানান, শিলিগুড়িতে ১০০ টাকায় তাকে কোনো সময় ৬০, কোনো সময় ৬৫ রুপি দিয়েছেন মানি চেঞ্জাররা। অল্প টাকা নিয়ে যাওয়ায় টাকা শেষ হয়ে গেছে। তাই মাকে হাসপাতালে রেখেই ফিরে এসে টাকার ব্যবস্থা করে আবার শিলিগুড়ি যাবেন তিনি। রানীশংকৈল উপজেলার বাদল রায় জানান, ভারতে আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন বেড়াতে। গত পূজাতেও গিয়েছিলেন। তখন ১০০ টাকার বিপরীতে দেওয়া হতো ৮৬ থেকে ৯০ রুপি। এবার তাকে দেওয়া হয়েছে ৬৫ রুপি। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী হাসান বাবলা জানান, ভারতীয় নোট বদলের প্রভাবে ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যদিও ব্যবসায়ীরা এলসির মাধ্যমে লেনদেন করে থাকেন। কিন্তু এলসির মাধ্যমে টাকা দিলেও ভারতীয় ব্যবসায়ীরা টাকা তুলতে পারছেন না। ফলে তারা বাংলাদেশি আমদানিকারকদের চাহিদামতো মালামালও দিতে পারছেন না। তবে এ সমস্যা ডিসেম্বরের পরপরই কেটে যাবে। বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট কর্মকর্তা কানন সরকার জানান, বাংলাবান্ধায় প্রতিদিন যাত্রী বাড়ার কথা থাকলেও তা কমছে। ভারত  থেকে ফিরে এসে যাত্রীরা প্রায়ই অভিযোগ করেন, ভারতীয় নোট ব্রোকাররা টাকার বিনিময়ে রুপি কম দিচ্ছেন।

সর্বশেষ খবর