শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
শুক্রবারের বিশেষ আয়োজন

আবার তৈরি হবে ঢাকাই মসলিন

প্রকল্প নিয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

আবার তৈরি হবে ঢাকাই মসলিন

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া ঢাকাই মসলিন পোশাক এত সূক্ষ্ম ছিল যে ৫০ মিটার দীর্ঘ কাপড় একটি দিয়াশলাই বাক্সে রাখা যেত। মসলিন শাড়ি সম্পর্কে এই কিংবদন্তি বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত। সোনালি ঐতিহ্যের সেই মসলিন আবার ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মেয়াদকালে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে। মসলিনের সুতা তৈরির প্রযুক্তি ও মসলিন কাপড় বুননের বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করতে প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। ওই প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের পরিচালক ও বায়োটেকনোলজি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. মো. মনজুর হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম করে দেওয়া হয়েছে। ওই টিমের অপর দুই সদস্য হলেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. এম ফিরোজ আলম এবং অ্যাগ্রোনোমি অ্যান্ড অ্যাগ্রিল এক্সটেনশন বিভাগের প্রফেসর ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

বিষয়টি নিশ্চিত করে তাঁত বোর্ডের সদস্য নিমাই চন্দ্র পাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত টিম বাংলাদেশের যেসব এলাকায় মসলিনের সুতা তৈরির উপযোগী ফুটি কার্পাস তুলা উৎপাদন হয় তা খুঁজে বের করবে। আর বাংলাদেশে এ ধরনের তুলা এখন না পাওয়া গেলে বিদেশ থেকে সমজাতীয় তুলা এনে মসলিন সুতা তৈরির ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করা হবে। দেশে আবারও হারানো মসলিন ফিরিয়ে আনার এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে সোনালি ঐতিহ্যের মসলিন তৈরির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। পরে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। প্রকল্পটির নাম দেওয়া হয় বাংলাদেশের সোনালি ঐতিহ্য মসলিনের সুতা তৈরির প্রযুক্তি ও মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার (প্রথম পর্যায়)। প্রস্তাবিত প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ কোটি ১০ লাখ টাকা। সম্প্রতি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সম্মেলন কক্ষে একটি সভাও করেছে। ২০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ওই সভায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রস্তাবিত প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়। প্রসঙ্গত, মসলিন হলো তুলার আঁশ থেকে প্রস্তুত করা এক ধরনের অতি সূক্ষ্ম কাপড়। এটি তৈরি হতো ‘ফুটি কার্পাস’ নামের এক ধরনের সূক্ষ্ম তুলা থেকে। মসলিনের ইতিহাস নিয়ে অনেক গল্পগাথা প্রচলিত রয়েছে। মসলিন কাপড় এত মিহি ছিল যে ৪০ হাত লম্বা ও ২ হাত চওড়া এমন একটি কাপড় একটা ছোট আংটির মধ্যে দিয়ে অনায়াসে চালাচালি করা যেত বলে কিংবদন্তি রয়েছে। মুঘল আমলে সতেরো শতকে মসলিন শিল্প বিকাশ লাভ করেছিল ঢাকার সোনারগাঁ আর আশপাশের অঞ্চলে। এ কারণে এটি ঢাকাই মসলিন বলে পরিচিত ছিল। এই মসলিন রপ্তানি হতো ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। তবে সস্তা কাপড়ের ভিড়ে আঠারো শতক থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে জগদ্বিখ্যাত পোশাক ঢাকাই মসলিন।

সর্বশেষ খবর