শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
শুক্রবারের বিশেষ আয়োজন

চা আবাদে প্রকল্প কর্মসংস্থান হবে বিলুপ্ত ছিটমহলে

শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি

এবার দেশে চায়ের আবাদ সম্প্রসারণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আর এ লক্ষ্যে উত্তরাঞ্চলের লালমনিরহাট জেলার বিলুপ্ত ছিটমহল এলাকার গ্রামগুলোতে চায়ের আবাদ শুরু করা হয়েছে। এতে করে দেশে চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিলুপ্ত ছিটমহল এলাকার আঙ্গরপোতা ও দহগ্রামের মানুষের নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া ওই গ্রামগুলো তামাক চাষের ঝুঁকি থেকেও রক্ষা পাবে বলে মনে করেন এলাকাবাসী। শ্রীমঙ্গলে বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিট কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে উত্তরাঞ্চলের লালমনিরহাট জেলায় ১০০ হেক্টর জমিতে একটি স্পেশাল প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পে  বিলুপ্ত ছিটমহলের পাটগ্রাম উপজেলার আঙ্গরপোতা ও দহগ্রামের ৩০০-৪০০ লোকের কর্মসংস্থান হবে। ৪৪৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয়সাপেক্ষ প্রকল্পটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় পাটগ্রামে ১ লাখ, হাতিবান্ধায় ১ লাখ চারা লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া কালিগঞ্জে ১ লাখ চারার নার্সারির কাজ চলছে। এ প্রকল্প থেকে দুই বছরে ১০ লাখ চারা উত্তোলন করা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শেষ হলে ১০০ হেক্টর জমি থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হবে, যার বাজারদর প্রায় ৫ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে এখানে চাষিদের নিবন্ধন কাজ শুরু হয়েছে।

দহগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘সিটমহলের গ্রামগুলো আমাদের দেশে ঢুকে পড়ায় ওই এলাকায় তামাক চাষের ঝুঁকি রয়েছে। আগে ভারতের ভিতর থাকায় ওখানে কেউ তামাক চাষ করতে পারেনি। সিটমহলের এই গ্রামগুলোতে চায়ের আবাদ হলে খুব ভালো হবে। এতে ওই সব এলাকায় কেউ আর তামাক চাষ করতে পারবে না।’ এ ছাড়া দেশে চা চাষ সম্প্র্রসারণের লক্ষ্যে বৃহত্তর ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলায় ৫০০ হেক্টর জমিতে ৪৯৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গত বছর ১০ নভেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দ্রুত এগিয়ে চলেছে এ প্রকল্পের প্রথম বছরের কাজ। দুই বছরের মধ্যে এখান থেকে ১০ লাখ চারা উত্তোলন করা হবে। এ প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে ঠাকুরগাঁওয়ে ৫০ হাজার, দিনাজপুরে ৫০ হাজার, নীলফামারীতে ৫০ হাজার এবং পঞ্চগড়ে ১ লাখ ৫০ হাজার চারা লাগানো হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ৫০০ হেক্টর জমিতে প্রায় ১২ লাখ ৫০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হবে, যার বাজারমূল্য প্রায় ২৫ কোটি টাকা। এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবানে চা চাষ সম্প্রসারণ কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য ৯৯৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকার একটি নতুন প্রকল্প ৩০ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ওই প্রকল্পের কোনো টাকা ছাড় হয়নি। তাই প্রথম বছর এ প্রকল্পের কাজ শুরু করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই চা বোর্ড তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে ৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে। এরই মধ্যে ১৩০ হাজার চারা লাগানো হয়েছে। টাকা না পাওয়ার কারণে এখনো প্রকল্পে কর্মচারী নিয়োগ করা যায়নি। তাই চা বোর্ডের রাজস্ব খাতের কর্মকর্তাদের দিয়ে এ প্রকল্পের কাজ চালানো হচ্ছে। এ প্রকল্পেও চাষি নিবন্ধের কাজ শুরু করা হয়েছে। চা বোর্ডের উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা) মুনির আহমদ বলেন, ‘চায়ের আবাদ সম্প্রসারণের পাশাপাশি দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্য নিয়েও আমরা কাজ করছি। ইতিমধ্যে লালমনিরহাটে দারিদ্র্য বিমোচনের একটি স্পেশাল প্রকল্পের কাজ চলছে। ১০০ হেক্টর জমির ওই প্রকল্পের বেশির ভাগ অংশ রয়েছে ছিটমহলের আঙ্গরপোতা ও দহগ্রামের ভিতর। ওখানকার গরিব লোকদের কর্মসংস্থানের জন্যই এ প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর