শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
ভোটের টুকিটাকি

আইভীকে সেলিম ওসমানের দোয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

সকাল ৯টায় ঘর থেকে বের হওয়ার পর এক মুহূর্তের ফুরসত পাননি মেয়র প্রার্থী আইভী। ভোটের শেষ বেলায় তিনি ছিলেন নগরীর চাষাঢ়া এলাকায়। ক্লান্ত আইভী গাড়িতে বসেই কথা বলছিলেন কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে। ঠিক এই সময় ওই এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন শামীম ওসমানের বড় ভাই জাতীয় পার্টির সদর ও বন্দর আসনের এমপি সেলিম ওসমান। আইভী আছেন, জানতে পেরে ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে তার গাড়ির কাছে আসেন তিনি। এরপর দুই নেতার মধ্যে হয় ক্ষণিকের কথোপকথন। সেলিম ওসমান এগিয়ে আসছেন দেখে গাড়ি থেকে নামেন আইভী। সালাম দিয়ে সম্ভাষণ জানান। জানতে চান কুশল। এ সময় আইভীর চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ এড়ায়নি সেলিম ওসমানের। তিনি বলেন, ‘কি হয়রান হয়ে গেছো?’। ‘হ্যাঁ, হয়রান হয়ে গেছি। ঘোরাফেরা, বিভিন্ন কেন্দ্রে যাওয়া। সারা দিনই তো ঘুরতে হয়েছে।’ জবাব দেন আইভী। এরপর সেলিম ওসমান বলেন, ‘কী অবস্থা।’ আইভী বলেন, ‘এই তো, চলছে আরকি।’ এরপর সেলিম ওসমান আইভীর মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে দোয়া করেন। বলেন, ঠিক আছে, ভালো থাক। সব মিলিয়ে মিনিট দুয়েক ধরে চলে দুই নেতার মধ্যে এই কুশল বিনিময়। আশপাশে যারা ছিলেন তারা সবাই উত্সুক হয়ে ওঠেন। মোবাইল ফোনে কেউ ভিডিও, কেউ বা ছবি তুলতে থাকেন। আইভীর সঙ্গে কথা বলার পর সেলিম ওসমান হেঁটে ভোটকেন্দ্রের দিকে যান। আর আইভীও তার গাড়িতে উঠে ওই এলাকা ছাড়েন।

প্রথম কেন্দ্রেই আইভী প্রথম : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রথম যে কেন্দ্রের ফল জানা গেছে, তাতে জিতেছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। নারায়ণগঞ্জ মহিলা কলেজ কেন্দ্রের নারী ভোটারদের জন্য ওই কেন্দ্রে বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানের চেয়ে ১২০টি ভোট বেশি পেয়েছেন তিনি। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে সেলিনা হায়াৎ আইভী পেয়েছেন ৮৫২ ভোট। বিএনপির সাখাওয়াত হোসেন খান পেয়েছেন ৭৩২ ভোট। আর ৬১টি ভোট বাতিল হয়েছে।

বাইর-টাইর করে দ্যান নাই তো? : উৎসবের মেজাজে চলা নারায়ণগঞ্জ সিটির নির্বাচনে ভোটার ও এজেন্টদের খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সঙ্গেও হাস্যরস করতে দেখা গেছে বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে। বেলা ১টায় এনায়েত নগর কিন্ডারগার্টেন অ্যান্ড হাইস্কুল কেন্দ্রে যান সাখাওয়াত; ভোটারদের সঙ্গে কথা বলা শেষে বুথে গিয়ে নির্বাচনী এজেন্টদের খোঁজখবর নেন। পুরুষদের ৫ নম্বর বুথে নিজের এজেন্টকে দেখতে না পেয়ে দায়িত্বরত সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার উদ্দেশ্যে সাখাওয়াত বলেন, সবাই তো আছে, আমার এজেন্ট কোথায়। তখন নির্বাচনী কর্মকর্তা ও অন্য প্রার্থীর এজেন্টরা জানান, ধানের শীষের এজেন্ট রোকসানা একই কেন্দ্রের মধ্যে থাকা পাশের ভবনের ভোটকক্ষে ভোট দিতে গেছেন। ‘খোশ মেজাজে’ থাকা বিএনপি প্রার্থী এরপর স্মিত হেসে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার উদ্দেশ্যে বলেন, বাইর-টাইর করে দ্যান নাই তো? সাখাওয়াতের এমন ‘সহাস্য প্রশ্নে’ উপস্থিত সবাই হেসে ওঠেন।

ফোনের ৫ মিনিটের মধ্যে ভোট কেন্দ্রে বিজিবি : প্রার্থীর ফোনের ৫ মিনিটের মধ্যে আতঙ্কগ্রস্ত ভোট কেন্দ্রে পৌঁছে গিয়েছে বিজিবি। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ঠেলাগাড়ি মার্কা অহিদুল ইসলাম ছক্কু ফোন করে বিজিবিকে জানায়, ওয়ার্ডের তল্লা বিবি মরিয়ম স্কুল ভোট কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বী এক প্রার্থী প্রভাব বিস্তারে বিশাল বাহিনী নিয়ে প্রবেশ করেছে। দুপুর সাড়ে ১২টায় ফোন দেওয়ার মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে বিবি মরিয়ম ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করে বের করে দেয় অতিরিক্ত লোকজন। এ নিয়ে প্রার্থী অহিদুল ইসলাম ছক্কু জানান, প্রশাসনকে ফোন দেওয়ামাত্র সহায়তা পেয়েছি মাত্র ৫ মিনিটের মাথায়।

আইভীর ভক্ত নুরু মিয়া : তার নাম শেখ নুরুল ইসলাম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার দলের প্রতীক নৌকার অন্ধ ভক্ত। সেলিনা হায়াৎ আইভীরও অন্ধ ভক্ত তিনি। যে কারণে গত সিটি নির্বাচনের মতো এবারও আইভীর টানে বন্দরনগরী নারায়ণগঞ্জে ব্যতিক্রমী প্রচারণায় মেতে উঠেছেন নুরুল ইসলাম। গত নির্বাচনে আইভীর প্রতীক ছিল দোয়াত কলম। সেবার মাথার চুল কেটে দোয়াত কলম এঁকে ছিলেন তিনি। এবার প্রতীক নৌকা তাই মাথার চুল কেটে মাথায় নৌকা প্রতীক এঁকে আসছেন নুরু পাগলা নামে পরিচিত এই মানুষটি। এ সময় তার গায়ে জড়ানো ছিল বাংলাদেশের পতাকা; বুকে সোনালি নৌকা প্রতীক ছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত কার্ড ঝুলতে দেখা যায়। তার বুকে ঝোলানো দুটি স্টিকারে লেখা ছিল, ‘এই দেশ পাকিস্তান নয়, এই দেশ জয়বাংলার দেশ’। তিনি বলেন, আমি বঙ্গবন্ধু ও নৌকার অন্ধ ভক্ত। গত নির্বাচন থেকে আমি আইভীর অন্ধ ভক্ত। আমার কোনো চাওয়া নেই।

আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে তালা : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা ভীষণ ব্যস্ত ভোটকেন্দ্রে। কেন্দ্রে ভোটারদের আসতে উদ্বুদ্ধ করা, শেষ মুহূর্তের ভোট ভিক্ষায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। দুই দলের নারায়ণগঞ্জ কার্যালয় অবশ্য পাশাপাশিই অবস্থিত। দুই স্থাপনার মধ্যে দূরত্ব বড়জোর ১০০ গজ। নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়কেই তাদের অবস্থান। সকালে ভোট শুরুর পর সাড়ে ৮টার দিকে আওয়ামী লীগের কার্যালয়টি তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। তবে বিপরীত চিত্র দেখা যায় বিএনপির কার্যালয়ে। সকাল থেকেই বিএনপির কার্যালয়ে আসছেন নেতা-কর্মীরা। এমনটি সচরাচর দেখা যায় না। উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, নির্বাচনকে তারা দেখছেন মর্যাদার লড়াই হিসেবে। তাই শীতের সকালের আরামের ঘুম বাদ দিয়ে সকাল সকাল তারা বের হয়েছেন বাসা থেকে। দলের কোনো নির্দেশনা আছে কি না—তা জানতেই চলে আসেন দলীয় কার্যালয়ে। অন্যদিকে সকাল সাড়ে ৮টার দিকেও আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ঝুলছিল তালা। স্থানীয়রা জানান, বিএনপির নেতা-কর্মীরা যে প্রস্তুতির কথা বলছেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তা সেরেছেন আগের রাতেই।

সর্বশেষ খবর