শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

পঁচাত্তরের অচল টাকা সুদাসলে ফেরত চায় মিমি চকলেট

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯৭৫ সালে ১০০ টাকার নোট বাতিল করে যে সেভিংস বন্ড ইস্যু করেছিল সরকার, এখন তার বিপরীতে সুদসহ পাওনা দাবি করেছে সরকারেরই আরেক প্রতিষ্ঠান মিমি চকলেট লিমিটেড।

মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের আওতাধীন ওই প্রতিষ্ঠানের পাওনা পরিশোধে বাজেট বরাদ্দের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১৪ নভেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে ওই চিঠিটি পাঠানো হয়।

চিঠিতে বলা হয়, মুদ্রা ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনে ১৯৭৫ সালের ৭ এপ্রিল ১০০ টাকার নোট অচল ঘোষণা করে বিনিময়মূল্য প্রদানের পরিবর্তে সাত বছর মেয়াদি সেভিংস বন্ড ইস্যু করার মাধ্যমে সরকার তার দায় ঋণে রূপান্তর করে এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কর্তৃক অচল ঘোষিত নোটের বিপরীতে ইস্যুকৃত মিমি চকলেট লিমিটেডের সেভিংস বন্ডের মূল অর্থ বাবদ মোট ৮ হাজার ১০০ টাকা পরিশোধের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দসহ ওই অর্থ প্রদানের নির্দেশনার অনুরোধ করা হচ্ছে। তবে প্রায় চার দশক আগের আর্থিক একটি ইস্যু নিষ্পন্ন না করে দীর্ঘদিন আটকে রাখা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এ বিষয়টি কেন আরও আগেই নিষ্পন্ন হয়নি সে বিষয়টি সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংক ভালো বলতে পারবে। কারণ ১০০ টাকার নোট প্রবর্তিত হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বে। ওই নোট বাতিল ঘোষণার পর যে সেভিংস বন্ড ইস্যু হয়েছিল, সেটিও বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বেই করা হয়েছিল।

জবাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, বন্ডগুলোতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতির পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর স্বাক্ষর করলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন যুগ্মসচিব সৈয়দ মনজুরুল হক কর্তৃক স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক ওই মেয়াদি সেভিংস বন্ডে মূল্য পরিশোধের দায় সরকারের। বাংলাদেশ ব্যাংক আজ্ঞাবাহক মাধ্যম মাত্র। এ ছাড়া আইন মন্ত্রণালয়ের ১৯৮১ সালের ১০ ডিসেম্বর তারিখের পত্রে ওই বন্ডের সুদ প্রদান সরকারের দায় হিসেবে উল্লেখ করা আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভংকর সাহা বলেন, ‘মিমি চকলেট কোম্পানির পাওনা নিয়ে কিছুটা ঝামেলা রয়েছে। যতটা জানি, তারা সময়মতো বন্ডের বিপরীতে পাওনা দাবি করেনি। এ বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘসূত্রতার এটি একটি বড় কারণ।’ কেন্দ্রীয় ব্যাংকর এই মুখপাত্র আরও জানান, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে ১০০ টাকার প্রচলিত নোট ভারত থেকে প্রিন্ট করে আনা হয়েছিল। ভারতে ছাপানো ওই ১০০ টাকার নোটের সঙ্গে প্রচুর জাল টাকাও দেশে ঢুকেছিল বলে চারদিকে গুজব ছিল। এ কারণে সেই সময় ওই নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ১৯৭৫ সালে ১০০ টাকা নোট অচল ঘোষণার পর সব তফসিলি ব্যাংককে সাত বছর মেয়াদি সেভিংস বন্ড ইস্যুর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। পরে ১৯৮২ সালে এ সংক্রান্ত একটি হিসাব খুলে বন্ডের আসল পরিশোধে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। তবে অনেকেই সময়মতো তাদের ইস্যুকৃত বন্ডের বিপরীতে টাকা দাবি করেনি। ফলে বিভিন্ন প্রাপকের অদাবিকৃত প্রায় ৭৮ হাজার টাকা ২০০৬ সালে ‘রকমারি জমা’ হিসেবে সংশ্লিষ্ট অর্থ সরকারি খাতে আকলন করে এ সংক্রান্ত কার্যক্রম সমাপ্ত করা হয়।

সর্বশেষ খবর