শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

স্থায়ী ক্যাম্পাসে ফেরেনি অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ সময়

আকতারুজ্জামান

আইন অনুযায়ী অনুমোদনের পর সাত বছরের মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্থায়ী জমিতে ক্যাম্পাস পরিচালনা করতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এই নিয়ম মানেনি। আইনের অমান্য করেই বছরের পর বছর শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে অস্থায়ী ক্যাম্পাসেই। খোদ ইউজিসি চেয়ারম্যান বলছেন, আইন না মানার প্রবণতা রয়েছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা কম নয়। প্রতিষ্ঠার পর দশ বছরের বেশি অতিবাহিত হলেও কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যায়নি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।

দেশে ৯৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে এদের মধ্যে মাত্র ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী জমিতে ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে। বাকিগুলো থেকে গেছে এ আওতার বাইরেই। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ শুরু করেছে, কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় জমি কিনেছে স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য। আবার কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নবায়ন করে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে সময় বাড়িয়ে নিয়েছে আরও পাঁচ বছর। অভিযোগ রয়েছে, এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকলেও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে দফায় দফায় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সময়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসিও তাদের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো পদক্ষেপ নিতে নারাজ।

ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ পাস হওয়ার পর সর্বপ্রথম ২০১২ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় দফায় ২০১৩ সালে, তৃতীয় দফায় ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত এবং চতুর্থ দফায় ২০১৭ সালের ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোনো নিয়ম কানুন মানত না। আমরা দীর্ঘ সময়ে তাদের একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে এসেছি। কিছু ক্যাম্পাস স্থায়ী জমিতে পরিচালিত হচ্ছে। অনেকে স্থায়ী জমিতে যেতে কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। আমরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে দাঁড় করাতে চাই। কিন্তু তারা যদি আইন না মেনে প্রতিষ্ঠান চালাতে চান তবে সেটি হতে দেওয়া হবে না। তবে জানুয়ারির মধ্যেও যদি কেউ স্থায়ী জমিতে ক্যাম্পাস নিয়ে যেতে না পারে তাদের কেমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে এমন প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি শিক্ষামন্ত্রী।

ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৫ অনুযায়ী নিজস্ব জমিতে আংশিক ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সিলেটের লিডিং বিশ্ববিদ্যালয়, শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটিসহ ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয়। অস্থায়ী জায়গায় ক্যাম্পাস পরিচালনা করে আসলেও নির্ধারিত জমিতে নিজস্ব ক্যাম্পাস নির্মাণাধীন রয়েছে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস, আশা ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, সিলেটের মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, সিলেটের নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি (২০১২ সালে অনুমোদন), বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (২০১২ সালে অনুমোদন), হামদর্দ ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশসহ (২০১২ সালে অনুমোদন) ৩৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বোর্ড অব ট্রাস্টিজ নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের। এগুলো হলো—দারুল ইহসান (সব শাখা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে), ইবাইস ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও কুমিল্লার ব্রিটানিয়া ইউনিভার্সিটি। ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আইন মেনে চললেও আইন না মানার প্রবণতা রয়েছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা কম নয়। মন্ত্রণালয় থেকে রাজধানীতে ক্যাম্পাসের জন্য অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। তাই এমন বিশ্ববিদ্যালয়ও পাওয়া যাচ্ছে যারা ঢাকার বাইরে স্থায়ী ঠিকানা দেখাচ্ছে কিন্তু ঢাকাতে ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে। তারা ছাত্র পেতে আইনের বাইরে এমন কার্যক্রম করে থাকে। তিনি আরও বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে।

সর্বশেষ খবর