রবিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শুঁটকি রপ্তানি হচ্ছে ভারত ও নেপালসহ মধ্যপ্রাচ্যে.

মোশাররফ হোসেন বেলাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শুঁটকি রপ্তানি হচ্ছে ভারত ও নেপালসহ মধ্যপ্রাচ্যে.

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার মেঘনা নদীর পাড় লালপুরে শুঁটকির খ্যাতি এখন বিশ্বজুড়ে। দেশের বিভিন্ন এলাকার ভোজন রসিকদের শুঁটকির চাহিদা পূরণ করে এখানকার শুঁটকি রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। কোনো প্রকার স্বাস্থ্যহানিকর উপাদান মেশানো ছাড়া ফরমালিনমুক্ত দেশি প্রজাতির মাছ থেকে এ শুঁটকি উৎপাদন করায় এর স্বাদ হয় আলাদা। তাই এই শুঁটকির সুনামও রয়েছে দেশ-বিদেশে। ফলে প্রতি বছরই এখান থেকে বিদেশে রপ্তানি হয় শত শত কোটি টাকা মূল্যের শুঁটকি। সরেজমিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুরের শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মেঘনা নদীর পাড়ে পুরোদমে শুরু হয়েছে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ। তাই নদীর পাড়ে শত শত ডাঙ্গি তৈরি করা হয়েছে। আর এসব ডাঙ্গিতে চলছে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ। এখানে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণে কাজ করছে প্রায় এক হাজার নারী পুরুষ। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত নিরলস কাজ করছেন তারা। নদী থেকে মাছ ধরে এনে রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় সুস্বাদু শুঁটকি। কোনো রকম  কেমিক্যাল বা ফরমালিন ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে তৈরি করা হচ্ছে সুস্বাদু শুঁটকি। আর এসব শুঁটকি দেশের বিভিন্ন এলাকার চাহিদা পূরণ করে পাঠানো হয় বিদেশে। ভারত, নেপাল, সৌদি আরব, আমেরিকা, লন্ডনসহ কয়েকটি দেশে পাঠানো হয় এখানকার উৎপাদিত শুঁটকি। বিদেশে এই শুঁটকির কদরও রয়েছে অনেক। সব মিলিয়ে বছরে প্রায় শত কোটি টাকার শুঁটকি এই মেঘনার পাড় লালপুর থেকে সরবরাহ করা হয়। তবে এখানে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকারীরা পাচ্ছেন না কোনো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। স্থানীয় আড়তদার বা মহাজনদের নিকট থেকে দাদন হিসেবে তাদের পুঁজি সংগ্রহ করতে হয়। তাই কম সুদে জামানতবিহীন ব্যাংক ঋণ প্রদান করা হলে শুঁটকি উৎপাদন দ্বিগুণ হতো এবং এসব প্রান্তিক শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকারীদের ভাগ্যের পরিবর্তন আসত। কেননা মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে নেওয়া দাদন পরিশোধ করতে হিমসিম খেতে হয় তাদের। লালপুরের শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকারী মো. খলিলুর রহমান জানান, প্রায় ১০০ ডাঙ্গিতে প্রতিদিন শুঁটকি উৎপাদনের কাজ করছে শ্রমিকরা। তাদের বেতন চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। কারণ এখন পুরোদমে শুঁটকি উৎপাদন শুরু হয়েছে। হাতের টাকাও শেষ হয়ে আসছে, ব্যাংক থেকে কোনো প্রকার সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। শুঁটকি ব্যবসায়ী খায়ের মিয়া জানান, পুঁজির অভাবে আমরা এখন আর আগের মতো ব্যবসা করতে পারছি না। কারণ আগে মাছের দাম কম ছিল। দিন দিন মাছের দাম যেমনি বাড়ছে তেমনি শ্রমিকের মজুরিও বাড়ছে। এখন ব্যবসা চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। লালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আবুল খায়ের জানান, পুঁজির অভাবে প্রান্তিক শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকারীরা তাদের ন্যায্য মূল্য পায় না। সরকার শুঁটকি উৎপাদনকারীদের ব্যাংক ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করলে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তনের পাশাপাশি শুঁটকি উৎপাদন দ্বিগুণ হতো। এ ছাড়াও এখানে কোনো গুদামজাতকরণের ব্যবস্থা নেই তাই একটি শুঁটকি গুদাম প্রতিষ্ঠার দাবি জানাচ্ছি। অগ্রণী ব্যাংক লালপুর শাখার ম্যানেজার হাসান সাইদুর রহমান জানান, ব্যাংক নিয়মানুসারে তারা শুঁটকি ব্যবসায়ীদের এসএমই ঋণ প্রদান করছে। প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা ঋণ প্রদান করা হয়েছে। তবে জামানতবিহীন কিংবা শহজশর্তে ঋণের কোনো নির্দেশনা তাদের কাছে নেই। এ ছাড়াও তাদের ব্যাংকে প্রান্তিক উৎপাদনকারীরাও বেশি আসেন না। ব্যাংকে এসে কথা বলার জন্য সব উৎপাদনকারীর প্রতি অনুরোধ করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর