সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সরকারি সুবিধা পাবে না পরিবেশ দূষণকারী শিল্প

চিহ্নিত করা হচ্ছে দোষী কারখানা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

পরিবেশ দূষণ ঘটাচ্ছে এমন সব শিল্প-কারখানার মালিক ও উদ্যোক্তাদের সরকারি কোনো সুবিধা দেওয়া হবে না। রাষ্ট্রীয় কোনো পুরস্কার এবং বিশেষ মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হবেন তারা। অন্যদিকে দূষণমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন সবুজ প্রযুক্তি ব্যবহারকারী উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা দিয়ে উৎসাহিত করবে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিবেশ কমিটির চতুর্থ সভার জন্য প্রস্তুতকৃত অগ্রগতি প্রতিবেদনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। ১৬ নভেম্বর পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে ওই প্রতিবেদনটি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দুষণমুক্ত/সবুজ/পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তি ব্যবহারকারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী ব্যক্তি বা উদ্যোক্তাদের চিহ্নিত করে তাদের সরকারি কোনো পুরস্কার বা কোনো বিশেষ মর্যাদা প্রদানে বিরত থাকার বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা এবং পরিবেশ দূষণ রোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। এ-সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে তিনি নিজেই বিভিন্ন সময় নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া মনিটর করছেন। কর্মকর্তারা জানান, ঢাকার চারপাশে পরিবেশ দূষণকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে প্রতিটির জন্য পৃথক ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্প স্থানান্তরে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অন্য দূষণ সৃষ্টিকারী কারখানাগুলোও পর্যায়ক্রমে স্থানান্তর করতে হবে। বিশেষ করে যেসব শিল্প-কারখানায় ইটিপি (এনভায়রনমেন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট) স্থাপনের জন্য নিজস্ব জমি নেই, তাদের কারখানা অন্যত্র উপযুক্ত স্থানে স্থানান্তর করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি  অংশীদারিত্ব    (পিপিপি) খাতের সহায়তার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া নিষিদ্ধ-ঘোষিত এলাকায় স্থাপিত শিল্প-কারখানা জরিপের পর প্রতিটি যাচাই-বাছাই করে পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়া হবে। প্রয়োজনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিস্তারিত এলাকা পরিকল্পনা (ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান) অনুযায়ী ঢাকা শহরের অভ্যন্তরে অবস্থিত শিল্প-কারখানা সরিয়ে নিতে একটি সমন্বিত নীতিমালা করার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়, রাজউক, পরিবেশ অধিদফতর, ডিসিসি, ওয়াসা এবং এফবিসিসিআই কাজ করছে বলেও জানান কর্মকর্তারা। প্রতিবেদনে উল্লিখিত অন্যান্য সিদ্ধান্ত হচ্ছে : রাজধানীর পরিবেশ দূষণ কমানোর জন্য ২২০ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীতীরবর্তী কঠিন বর্জ্য অপসারণ করার জন্য ঢাকা সিটি করপোরেশনসহ (উত্তর ও দক্ষিণ) সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কর্তৃক ক্রাশ প্রোগ্রাম গ্রহণ করা; নদীতীরবর্তী বর্জ্য ফেলার কনটেইনারের সংখ্যা বাড়ানো; ঢাকা ওয়াসার শতভাগ পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং নারায়ণগঞ্জের পাগলা পয়োশোধনাগারটির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা; অবৈধ দখল উচ্ছেদের পর ঢাকার চারদিকের নদী/খালের তীর ধরে ২২০ কিমি বৃক্ষরোপণসহ ওয়াকওয়ে ও রাস্তা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া; অবৈধ দখল বন্ধ ও উচ্ছেদের জন্য বুড়িগঙ্গা ও সংযুক্ত নদীর সীমানা ঘেঁষে সিএস রেকর্ড চিহ্নিত করা এবং উন্নয়ন-সহযোগীদের সহায়তায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) টঙ্গী, সাভার, গাজীপুর, তেজগাঁও, ঘোড়াশাল, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা ইপিজেড এই আটটি ক্লাস্টারে সেন্ট্রাল ইটিপি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া।

সর্বশেষ খবর