সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

আনন্দোৎসব-প্রার্থনায় বড়দিন উদযাপিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

আনন্দোৎসব-প্রার্থনায়  বড়দিন উদযাপিত

যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে সারা দেশে গতকাল পালিত হয়েছে খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন তথা বড়দিন। সারাবিশ্বের মতো গতকাল খ্রিস্টধর্মাবলম্বীরা যথাযথ ধর্মীয় আচার, আনন্দ উৎসব ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করেন। এ উপলক্ষে গতকাল ছিল সরকারি ছুটি। যিশু খ্রিস্টের জন্মদিনে রাজধানী ঢাকার গির্জাগুলো মনোমুগ্ধকর সাজে সাজানো হয়। আর এই ধর্মাবলম্বীরা তাদের বাসা-বাড়িও ক্রিসমাস ট্রিসহ রঙিন মরিচবাড়ি দিয়ে সাজান। ঢাকার পাঁচতারকা হোটেলসহ বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ছোটদের জন্য বিশেষ পার্টিসহ বুফে ডিনারের আয়োজন করা হয়। বড়দিন উপলক্ষে গতকাল বঙ্গভবনে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বড়দিনের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি খ্রিস্টান সম্প্রদায়সহ সবাইকে শুভেচ্ছা জানান। বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে আরও দৃঢ় করার জন্য তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশে বিদ্যমান সম্প্রীতির এই সুমহান ঐতিহ্যকে আরও সুদৃঢ় করতে সবাইকে কাজ করতে হবে। এবার বাংলাদেশে বড়দিনের উৎসবটি বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপিত হয়। কারণ এই প্রথম কোনো বাঙালি কার্ডিনাল নির্বাচিত হয়েছেন। খ্রিস্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস বাংলাদেশি নাগরিক আর্চ বিশপ প্যাট্রিক ডি রোজারিও সিএসসিকে সম্প্রতি কার্ডিনাল পদে উন্নীত করেছেন। বর্তমানে সারাবিশ্বে মাত্র ১২১ জন কার্ডিনাল আছেন। নগরীর গির্জাগুলোতে দিনটি উপলক্ষে গোশালা স্থাপন, রঙিন কাগজ, ফুল ও আলোর বিন্দু দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হয়। এ ছাড়া পাঁচতারকা হোটেলগুলোতে সান্তাক্লজ লাল-সাদা পোশাক পরে ছোটদের সঙ্গে আনন্দে মেতে উঠেন এবং নানারকম উপহার দেন। কাকরাইল সেন্ট মেরি ক্যাথিড্রাল চার্চে গিয়ে দেখা যায়, বর্ণিল সাজে গির্জাটি সাজানো। এখানকার ফাদার সমীর ফ্রান্সিস রোজারিও জানান, সকাল ৭টায় শ্রদ্ধা জানানো ও বিশেষ প্রার্থনা করা হয়েছে। এ ছাড়াও প্রসাদ বিতরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়। রাজধানীর তেজগাঁও ক্যাথলিক গির্জাতেও বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। জরি, রঙিন বাতি ও ফুল দিয়ে সাজানো হয় গির্জার ভিতর-বাহির। বিশেষ এ দিনে গির্জাগুলোর বাইরে মেলা বসে। এতে ছোটদের খেলনা, ধর্মীয় বই, মোমবাতি, সান্তাক্লজের টুপি, যিশুর মূর্তি ইত্যাদি বিক্রি করা হয়। তবে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মের মানুষও গির্জা ও পাঁচতারকা রেস্টুরেন্টগুলোতে গিয়ে আনন্দ উৎসবে শামিল হন। পাঁচতারকা হোটেলগুলোর মধ্যে সোনারগাঁও, লা মেরিডিয়ান, র‌্যাডিসন ও ওয়েস্টিন বিশেষ সাজে সাজানো হয়। হোটেলগুলোতে ছোটদের জন্য বিশেষ পার্টির ব্যবস্থা, বড়দের জন্য বিভিন্ন ডিনার ও লাঞ্চ অফার দেওয়া হয়। রাজধানীর খ্রিস্টান পরিবারগুলোও বড়দিন উপলক্ষে বাড়িতে নানা আয়োজনে গতকাল ব্যস্ত ছিলেন। তারা কেক, পুডিং ও মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরি করেন। উপহার নিয়ে অনেকেই আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে যান। গতকাল সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান পরিষদ সর্বধর্মীয় সংস্কৃতি জোরদার করার লক্ষ্যে সমাবেশ ও মানববন্ধনের আয়োজন করে। এর আগে শনিবার রাতে বড়দিন শুরু হওয়ার আগে গির্জাগুলোতে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।

সর্বশেষ খবর