সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

শতবর্ষের এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

জিপিএ-৫ পাওয়ার কথা ভুলে সঠিকভাবে লেখাপড়া করতে হবে : জাফর ইকবাল

জামালপুর ও মাদারগঞ্জ প্রতিনিধি

শতবর্ষের এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হলো জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার ঐহিত্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বালিজুড়ি এফ এম উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি। এ উপলক্ষে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল যমুনা তীরের উপজেলা মাদারগঞ্জ। নতুন ও পুরনোর এই মিলনমেলায় দিনভর ছিল আলোচনা, আড্ডা, গান ও কবিতা। শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণসহ পুরো উপজেলাকে সাজানো হয়েছিল বর্ণিল সাজে। ছিল আলোকসজ্জার ছড়াছড়ি। তোরণ, ব্যানার ও ফেস্টুনে ছাওয়া ছিল পুরো এলাকা। প্রাণে প্রাণ মেলানোর এ উৎসবে শরিক হয়েছিলেন দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ, মন্ত্রী, রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। প্রাণের উৎসবে যোগ দিতে দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বিদ্যালয়টির ছয় হাজার শিক্ষার্থী ছুটে এসেছেন নিজের প্রিয় আঙিনায়, প্রিয় শৈশব কাটানো নিজের বিদ্যাপীঠে। ছিল বর্তমান শিক্ষার্থীরাও। অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে হাজারো শিক্ষার্থীর এ উৎসবকে নতুন মাত্রা দেন শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, দৈনিক বর্তমান সম্পাদক মিজানুর রহমান, ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার জি এম সালেহ উদ্দিন, জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ, জামালপুরের জেলা প্রশাসক মো. শাহাবুদ্দিন খান, পুলিশ সুপার মো. নিজাম উদ্দিনসহ বরেণ্য অতিথিরা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শতবর্ষ উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মাহাবুবর রহমান। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আতাউর রহমান তালুকদার। উৎসবমঞ্চে উঠেই সিলেট থেকে জামালপুর হয়ে মাদারগঞ্জ আসার পথে পৌষের দিগন্তজোড়া হলুদ শর্ষে ক্ষেত দেখে মুগ্ধ হওয়ার গল্প শুনিয়ে ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল শিক্ষার্থীদের কাছের মানুষ হয়ে ওঠেন। শর্ষেরঙা টি-শার্ট পরিহিত উপস্থিত শিক্ষার্থীদের তিনি জানান ফুলেল শুভেচ্ছা। মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তাঞ্চল ছিল মাদারগঞ্জ। এখানকার পবিত্র ভূমিতে হানাদার পাকিস্তানি মিলিটারিরা পা রাখতে পারেনি। এটা গর্বের। অনেক রক্তের বিনিময়ে দেশটা স্বাধীন হয়েছে। এ দেশকে আমাদের সামনের দিকে নিয়ে যেতে হবে। বর্তমান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘তোমরা জন্ম নিয়েছ স্বাধীন দেশে। এখন এ দেশের হাল তোমাদের ধরতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘নতুন সহস্রাব্দের সম্পদ হলো জ্ঞান। আর মুখস্থবিদ্যা নয়, আর গাইড বই নয়। কোচিং সেন্টারে গিয়ে জিপিএ-৫ পাওয়ার জন্য লেখাপড়ার কথা ভুলে যেতে হবে। এখন সঠিকভাবে লেখাপড়া করতে হবে। মেধাকে কাজে লাগাতে হবে। বিজ্ঞানভিত্তিক সমৃদ্ধ জ্ঞান অর্জন ও বিজ্ঞানচর্চা করতে হবে। আমাদের চার কোটি শিক্ষার্থী রয়েছে। এদের মধ্যে মেয়ে আর ছেলে শিক্ষার্থী সমান। তোমরা যদি জ্ঞান-বিজ্ঞানকে ভালোবেসে সঠিকভাবে লেখাপড়া কর, মেধাকে কাজে লাগাও, তাহলে এ দেশকে কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। একসময় আমেরিকানসহ বিদেশিরা এ দেশে আসবে শিক্ষার জন্য, চিকিৎসার জন্য, প্রযুক্তির  জন্য।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখছেন গার্মেন্ট শ্রমিক, প্রবাসী শ্রমিক আর গ্রামের চাষিরা। এখনো অর্থনৈতিক উন্নয়নে শিক্ষিত মানুষের কন্ট্রিবিউশন আসেনি। এ দায়িত্ব নিতে হবে এই প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের। মেধাকে কাজে লাগিয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব নিতে হবে তোমাদের।’ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘একসময় অন্ধকারাচ্ছন্ন উপজেলা ছিল মাদারগঞ্জ। রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ কিছুই ছিল না। শিক্ষায় পিছিয়ে ছিল মাদারগঞ্জ। তখন মানুষ শিক্ষার সুযোগ পেত না। আমি রাজনীতি করতে গিয়ে যখন যেটুকু সুযোগ পেয়েছি, মাদারগঞ্জের উন্নয়নে কাজ করেছি। আমি যখন দায়িত্ব নিই তখন ছিল মাদারগঞ্জ অন্ধকারাচ্ছন্ন উপজেলা। এ অন্ধকার উপজেলা থেকে মাদারগঞ্জ এখন দেশের অন্যতম উন্নত উপজেলায় পরিণত হয়েছে। শিক্ষা-দীক্ষা, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ সবকিছু পাল্টে গেছে। যে কোনো জনগোষ্ঠীর পরিবর্তন আনতে পারে শিক্ষা এটা বিশ্বাস করি বলেই আমি সব সময় চেষ্টা করি শিক্ষার জন্য কাজ করতে। এলাকার মানুষের ভোটে নির্বাচিত হয়ে মাদারগঞ্জ জেলায় অর্ধশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছি। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করেছি। বিদ্যুতের উন্নয়ন করেছি।’ মির্জা আজম বলেন, ২০১৮ সালের মধ্যে মাদারগঞ্জ-মেলান্দহ উপজেলার একটি মানুষও বিদ্যুতের বাইরে থাকবে না। আবেগাপ্লুত মির্জা আজম এমপি বলেন, ‘আমি রাজনীতিতে এসে একটিমাত্র মন্ত্র শিখেছি। আর তা হলো—যারা ভোটার, যারা আমার এলাকাবাসী, তারা সবাই আমার প্রভু, আমার মনিব। আর আমি হলাম তাদের সেবক, চাকর। ২৬ বছর ধরে আমি চাকর হিসেবে মনিবের কাজ করে যাচ্ছি। মানুষের সেবক হিসেবে আমি রাজনীতি শুরু করেছি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মানুষের সেবা করে যাব। মানুষের জন্য এবং আমার এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যাব।’ তিনি বলেন, পিছিয়ে থাকা জেলার উন্নয়নে কাজ করছি। জেলায় মেডিকেল কলেজ হয়েছে, ইকোনমিক জোন হয়েছে, টেক্সটাইল হয়েছে, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট হয়েছে। আরও অনেক উন্নয়ন কাজ চলমান আছে। এসব বাস্তবায়িত হলে পাল্টে যাবে জামালপুরের চেহারা। লাখো শহীদের রক্ত আর মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত এ দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে তিনি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম অতিথি ও ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যাপীঠের সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এই বিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করে শিক্ষার্থীরা জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর