মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

জিডিপি প্রবৃদ্ধি রেকর্ডের বছর

২০১৬ সালতামামি

মানিক মুনতাসির

প্রায় এক দশক পর দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের ঘর অতিক্রম করে ৭ শতাংশও অতিক্রম করেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ১১ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। বেড়েছে মানুষের গড় আয়। বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ১৪৬৬ ডলারে। শুধু তা-ই নয়, মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতিও পেয়েছে বাংলাদেশ। মূল্যস্ফীতির চাপ বলা যায় পুরোপুরিই নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। প্রবাসী আয়ও বাড়ছে। রপ্তানি আয়েও ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি। তবে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি আর বিনিয়োগের খরা কাটেনি সারা বছরেও।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, নভেম্বর শেষে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ, যা আগের মাস অক্টোবরে ছিল ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। বছরের শুরু অর্থাৎ জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতির এ হার ছিল ৬ দশমিক ০৪ শতাংশ। চলতি বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল থাকায় এবং বেশির ভাগ ভোগ্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল থাকায় মূল্যস্ফীতির চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করে বিবিএস। আর চলতি অর্থবছর শেষে, অর্থাৎ জুন-২০১৭ শেষে মূল্যস্ফীতির চাপ ৫ দশমিক ৮ শতাংশের মধ্যেই থাকবে বলে বাজেট বক্তৃতায় ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ডলারের বিপরীতে টাকার মানও মোটামুটি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে বৈদেশিক বাণিজ্য এবং বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যও সঠিক পথে রয়েছে। এমনকি উচ্চ রেমিট্যান্স আর উচ্চ রপ্তানি আয় বাংলাদেশের রিজার্ভকে শক্তিশালী করছে। নভেম্বর-২০১৬ শেষে বাংলাদেশে ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড ছুঁয়েছে, যা এক বছর আগে অর্থাৎ নভেম্বর-২০১৫-তে ছিল ২৭ দশমিক ০৫৮ বিলিয়ন ডলার। সেই হিসাবে এক বছরে রিজার্ভ বেড়েছে ৪ দশমিক ৮৩৭ বিলিয়ন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার এই রিজার্ভ থেকে সভরেন বন্ড ইস্যু করে তা বিনিয়োগে নিয়ে আসার কথা ভাবছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি তার পরিকল্পনা জানিয়ে বলেছেন, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলএনজি টার্মিনালের মতো মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অর্থ ব্যবহার করা হবে। আবার সভরেন বন্ড ছেড়ে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হবে, যা এসব মেগা প্রকল্পে ব্যয় করা হবে। বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, সমাপ্ত বছরে দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি সন্তোষজনক না থাকায় ব্যাংকে জমছে অলস টাকার পাহাড়। পাঁচ মাসের ব্যবধানে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত তারল্য বেড়েছে ব্যাংকিং খাতে। আর বিনিয়োগ নিবন্ধনের প্রস্তাবও কমছে প্রতিদিনই। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত এপ্রিল পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে তারল্য ছিল ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। আর নভেম্বর শেষে এই অলস টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে, যা কোনোভাবেই কাটানো যাচ্ছে না। ফলে বড় ধরনের কোনো বিনিয়োগে কেউ এগিয়ে আসছে না। উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের আগে পুঁজির নিশ্চয়তা চান। কিন্তু তা না পাওয়ায় পুঁজি হারানোর ঝুঁকি নিতে চান না। ফলে বিনিয়োগ হচ্ছে না, যার প্রভাবে ব্যাংক খাতে অতিরিক্ত তারল্য বাড়ছে। বিডার তথ্যমতে, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বছরের প্রথম প্রান্তিকে, অর্থাৎ তিন মাসে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধিত হয় ৪০৯টি। আর এপ্রিল-জুনে নিবন্ধিত হয় ৩৯৪টি প্রস্তাব। এ ছাড়া জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধিত হয়েছে ৩০৫টি। এতে দেখা যায়, প্রায় প্রতিদিনই বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধনের সংখ্যা কমেছে। চলতি এবং শেষ প্রান্তিকে এ সংখ্যা আরও কমার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর গত বছরের ১২ মাসেও অবশ্য বিনিয়োগ পরিস্থিতি একই রকম ছিল। ফলে আসছে নতুন বছরে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিকে অধিক গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

সর্বশেষ খবর