বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

কর ফাঁকিতে ৮৫ হাজার কোম্পানি

ই-টিআইএন ছাড়াই ফ্রি স্টাইলে চলছে ব্যবসা

রুহুল আমিন রাসেল

করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর বা ই-টিআইএন ছাড়াই বছরের পর বছর ফ্রিস্টাইলে ব্যবসা করছে ৮৫ হাজার লিমিটেড কোম্পানি। জানা গেছে, যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মস নিবন্ধকের কার্যালয় বা আরজেএসসিতে নিবন্ধিত ১ লাখ ৩৮ হাজার কোম্পানির মধ্যে  ই-টিআইএন আছে মাত্র ৫২ হাজার কোম্পানির। আরজেএসসিতে ই-টিআইএন সনদ দাখিল বাধ্যতামূলক না থাকার সুযোগ নিয়ে ৮৫ হাজার কোম্পানি সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। কর ফাঁকির এমন প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে গত ২১ ডিসেম্বর শুরু হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড— এনবিআরের মাসব্যাপী এনফোর্সমেন্ট কর্মসূচি। চলবে আগামী ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত। দেশে কর অনিয়মে জড়িত সব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান। তিনি বলেন, রাজস্ব ফাঁকিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। রাজস্ব ফাঁকি রোধে কর্মকর্তাদের আরও কঠোর হতে হবে।

এদিকে সারা দেশের মাঠপর্যায়ে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রণয়ন ও তাদের রাজস্ববান্ধব প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের জন্য কৌশল প্রণয়নসহ সংশ্লিষ্টদের সম্প্রতি পাঁচ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান। সর্বস্তরে রাজস্ববান্ধব সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠায় কর্মকর্তাদের আন্তরিক প্রয়াস চালানোর এই নির্দেশনায় বলা হয়— দেশের অর্থনীতি দিন দিন বেগবান হওয়ায় আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাট রাজস্ব সম্ভাবনা বাড়ছে। তবে মাঠপর্যায়ে যথেষ্ট প্রয়াস চালানো সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত সব প্রতিষ্ঠান-ব্যক্তিকে করের আওতায় আনা যায়নি। এখনো বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ বিরাজ করছে। এই বিষয়ে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গতিশীলতা বজায় রাখা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে যেসব বাধা ও প্রতিবন্ধকতা আসবে তা নিরসনে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাট বিভাগের মাঠপর্যায়ের কমিশনার এবং মহাপরিচালকদের দেওয়া ওই নির্দেশনায় আরও বলা হয়— মাঠপর্যায়ের সব দফতরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কর রাজস্বের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন পাঠাতে হবে। রাজস্ব কর্মকর্তাদের কার্যকলাপের মূল্যায়ন প্রতিবেদনও মাসিক ভিত্তিতে এনবিআরে পাঠাতে হবে। এর সঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ-প্রযুক্তি বা আইসিটি ব্যবহারের মাধ্যমে আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাট কার্যক্রমকে গতিশীল করতে হবে। সে লক্ষ্যে ফেসবুক নিয়মিতভাবে সমৃদ্ধ (আপডেট) করতে হবে। বিশেষ করে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প, ট্যাক্স অনলাইন প্রকল্প এবং অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেম কার্যক্রমকে সফল করতে সর্বোচ্চ প্রয়াস চালাতে হবে। প্রসঙ্গত, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে করদাতার সংখ্যা ২৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। চলতি অর্থবছরে ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন শেষে আরও বাড়তি রাজস্ব আয়ের স্বপ্ন দেখছে এনবিআর। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা অনুযায়ী— রাজস্ব জিডিপি অনুপাত ৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৫ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত করতে চায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকার। আর এই সরকারের শেষ দিকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫ লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রদানের ঘোষণাও ইতিমধ্যে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। সরকারের রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান এনবিআর মূলত তিন ধরনের রাজস্ব আদায় করে। এগুলো হলো— আয়কর, মূল্য সংযোজন কর-মূসক বা ভ্যাট এবং আমদানি শুল্ক। এর বাইরে করবহির্ভূত রাজস্ব আদায় করে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এনবিআরের কাঁধে ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা আছে। আর বাকি রাজস্ব আসবে এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে। এনবিআর বা করবহির্ভূত রাজস্ব আয় মিলিয়ে নতুন অর্থবছরে মোট ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। যা মোট দেশজ উৎপাদন প্রবৃদ্ধি— জিডিপির ১২ দশমিক ৪ শতাংশ। এনবিআর জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জনে নয়টি ‘কৌশল’ ঠিক করেছে করেছে রাজস্ব প্রশাসন। এগুলো হলো— আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাট অনুবিভাগের কমিশনারদের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ের সব কার্যালয়কে বাজেটের কর প্রস্তাব বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান। বাজেট বাস্তবায়নে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, চেম্বার ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন পর্যায়ের সব অংশীজনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্ব গড়ার রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়। ‘রাজস্ব সংগ্রহে সব অংশীজনের ভূমিকা’- এ প্রতিপাদ্য নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা ও সংলাপ করার সিদ্ধান্ত হয়। আগামী বছর ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি, পরামর্শমূলক সভা ও পরিকল্পনা করা। রাজস্ব সংগ্রহ কার্যক্রম জোরদারে এনবিআর থেকে সব কমিশনারেটের কার্যক্রম ও কমিশনারদের পক্ষ থেকে অধীনস্ত কার্যালয়গুলোর কার্যক্রম মনিটরিং করার নির্দেশও দেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর