শিরোনাম
শুক্রবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

চাঁদের হাসি ওদের মুখে

জেএসসি জেডিসির ফল প্রকাশ

আকতারুজ্জামান

চাঁদের হাসি ওদের মুখে

প্রাথমিক সমাপনী, ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার ফল গতকাল প্রকাশিত হয়েছে। ফলাফলে জেএসসি-জেডিসিতে ৯৩ দশমিক ০৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। প্রাথমিকে ৯৮ দশমিক ৫১ ও ইবতেদায়িতে ৯৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ পাস করেছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ভালো করেছে শিক্ষার্থীরা।

 আর জেএসসি-জেডিসির ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সব সূচকেই এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন। সব মিলে পরীক্ষায় বড় সাফল্য পেয়েছে ছোট এই শিক্ষার্থীরা।

জেএসসি ও জেডিসিতে ২৩ লাখ ৪৬ হাজার ৯৫৯ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ২১ লাখ ৮৩ হাজার ৯৭৫ জন। প্র্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় মোট ২৮ লাখ ৩০ হাজার ৭৩৪ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ২৭ লাখ ৮৮ হাজার ৪৩২ জন। এ ছাড়া ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনীতে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৮১৮ জন। গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে দুপুর ১২টায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও দুপুর ১টায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান সংবাদ সম্মেলন করে ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন সাংবাদিকদের সামনে। এর আগে সকালে দুই মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ফলাফলের অনুলিপি হস্তান্তর করেন। এ সময় শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন। ফলাফলে দেখা গেছে, জেএসসিতে আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এ বছর ১৯ লাখ ৯৩ হাজার ৩১৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ১৮ লাখ ৫১ হাজার ৪৯৬ জন। গত বছরের তুলনায় পাস বেড়েছে ৭০ হাজার ৭২৬। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ লাখ ৩৫ হাজার ৫৯ শিক্ষার্থী। গত বছর ১৯ লাখ ২৯ হাজার ৯৯ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ অর্জন করেছিল ১ লাখ ৮৭ হাজার ৫০২ জন।

জেডিসিতে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৬৪৩ ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৩ লাখ ৩২ হাজার ৪৭৯ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১২ হাজার ৫২৯ জন। গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি পাস করেছে ১৫ হাজার ১৬৭ জন শিক্ষার্থী। গত বছর ৩ লাখ ৪৩ হাজার ১৯০ ছাত্রছাত্রী অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৮ হাজার ৭৬১ জন।

এবার জেএসসিতে ৬ হাজার ২৪৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৭৯৯টি। আটটি স্কুলে কোনো ছাত্রছাত্রী পাস করতে পারেনি। পাস করতে না পারা স্কুলগুলোর সংখ্যা গত বছর ছিল ২৩টি। জেডিসিতে ৩ হাজার ২০৩টি মাদ্রাসায় শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৭৮৪। ২০টি মাদ্রাসার কোনো ছাত্রছাত্রী জেডিসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। বিদেশে আটটি কেন্দ্রে ৬২৬ জন পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৬২৩ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮৪ জন।

ফলের ক্ষেত্রে সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা এ বছরও প্রকাশ করা হয়নি। তবে স্কুলগুলো তুলনামূলক ভালো ফল করেছে। জেএসসিতে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। ১ হাজার ৭৯৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৭৫৩ জন। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায়ও স্কুলটির সব শাখায় শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। জেএসসিতে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৯৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। ১ হাজার ৫৯৬ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ১ হাজার ৫৯৪ জন পাস করেছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৪২১ শিক্ষার্থী। সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজও। প্রাথমিক সমাপনীতে এ বছর ১ হাজার ২২১ শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে সবাই পাস করেছে। জিপিএ-৫ অর্জন করেছে ১ হাজার ১৩৪ জন। জেএসসিতেও ১ হাজার ৮ জন ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ পাস করে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮৫৩ জন। জেএসসিতে শতভাগ পাস করেছে মতিঝিল সরকারি বালক ও বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

এগিয়ে মেয়েরা : গত বছরের তুলনায় এ বছরের জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষায় ১ লাখ ৫৩ হাজার ৯১৫ ছাত্রী বেশি অংশ নিয়েছে। পাসের ক্ষেত্রেও ১ লাখ ৪৬ হাজার ১৩৭ জন বেশি পাস করেছে। ৯২ দশমিক ২৪ শতাংশ ছাত্র ও ৯৩ দশমিক ১৭ শতাংশ ছাত্রী পাস করেছে। জিপিএ-৫-প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও এগিয়ে ছাত্রীরা। ছাত্রদের তুলনায় ৩৪ হাজার ৮৯৮ ছাত্রী বেশি জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার ফলাফলেও এগিয়ে গেছে মেয়েরা। এ পরীক্ষায় ছাত্রদের পাসের হার ৯৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ। আর ছাত্রীদের পাসের হার ৯৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ইবতেদায়ি পরীক্ষায়ও মেয়েরা এগিয়ে ছেলেদের চেয়ে। এতে ছাত্রদের পাসের হার ৯৫ দশমিক ৬৩ আর ছাত্রীদের ৯৬ দশমিক ০৮ শতাংশ।

পাসের হারে এগিয়ে রাজশাহী : জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় আট বোর্ডে এবার রাজশাহীতে পাসের হার সবচেয়ে বেশি। আর সবচেয়ে বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে ঢাকা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। রাজশাহী বোর্ডে সর্বোচ্চ ৯৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ ও কুমিল্লা বোর্ডে সর্বনিম্ন ৮৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। ঢাকা বোর্ড থেকে এবার সবচেয়ে বেশি ৮৬ হাজার ৩৫০ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের কোনো সুযোগ ছিল না। ফলের মান বৃদ্ধির সূচকে বেশকিছু ইতিবাচক লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে।

ওয়েবসাইট : প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনীর ফল www.dpe.gov.bd ওয়েবসাইটে এবং জেএসসি ও জেডিসির ফল www.educationboardresults.gov.bd ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।

পুনর্নিরীক্ষণ : আজ থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ফলাফল পুনর্নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করা যাবে। আবেদনের নিয়মাবলি ওয়েবসাইটে জানা যাবে।

সর্বশেষ খবর