সোমবার, ২ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

পুলিশি প্রতিহিংসার শিকার সাংবাদিক নাজমুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুলিশি প্রতিহিংসার শিকার বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাভার প্রতিনিধি নাজমুল হুদা। আশুলিয়ায় গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকদের দাবি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নাজমুল একাধিক রিপোর্ট করেন। এসব রিপোর্টের কারণে ক্ষুব্ধ হন পুলিশ কর্মকর্তারা। তারা নাজমুলকে আইনের আওতায় আনতে চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে গত ২৩ ডিসেম্বর তাকে আটক করা হয়। ২৪ ডিসেম্বর আশুলিয়া থানায় আইসিটি আইনে নাজমুলের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ওই মামলায়  ইতিমধ্যে নাজমুলকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। ৩০ ডিসেম্বর পুনরায় তাকে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। আদালত আজ সোমবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেছে। এদিকে সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন রিপোর্টার্স ইউদাউট বর্ডার মিথ্যা মামলায় আটক সাংবাদিক নাজমুল হুদার অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেছে। জার্মানভিত্তিক বার্তা সংস্থা ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে সাভারের পুলিশের বিরুদ্ধে নাজমুল হুদার মামলার এজাহারে অসত্য তথ্য উপস্থাপনের অভিযোগ করা হয়েছে। নাজমুলের পরিবার বলছে, নাজমুলকে গ্রেফতারের আগের দিন ২২ ডিসেম্বর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নাজমুলের কথা কাটাকাটি হয়। তারা নাজমুলকে গার্মেন্ট নিয়ে কোনো নিউজ না করতে হুমকি দেন। সব স্বাভাবিক রয়েছে এই মর্মে নিউজ করতে পুলিশ কর্মকর্তারা নির্দেশ দেন। পরদিন আবার গার্মেন্ট নিয়ে নিউজ করলে পুলিশ কর্মকর্তারা ক্ষিপ্ত হন। এক পর্যায়ে তাদের সঙ্গে আরেক দফা বাকবিতণ্ডা হয়। পুলিশের ওই কর্মকর্তারা নাজমুলকে শাসিয়ে চলে যান। ওইদিন সন্ধ্যায়ই নাজমুলকে আটক করা হয়। এদিকে নাজমুলকে গ্রেফতারের পর একের পর এক রিমান্ড চেয়ে পুলিশ প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে বলে মনে করছেন সাংবাদিক মহল ও সমাজের বিশিষ্টজনরা। তারা বলছেন, এ ধরনের মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা থেকে পুলিশকে বেরিয়ে আসতে হবে। পুলিশের এ ধরনের আচরণে আমরা উদ্বিগ্ন। অবিলম্বে নাজমুলের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি করেন তারা। নাজমুলকে গ্রেফতারের কারণে শুধু দেশের ভিতরেই ক্ষোভের সৃষ্টি হয়নি, বিদেশি সাংবাদিক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করেছে।  জার্মানভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ডয়েচে ভেলে (ডিউব্লিউ) বলছে, বাংলাদেশের সাংবাদিক নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় পুলিশ তথ্য বিকৃতি করেছে। এ ধরনের মামলার মাধ্যমে পুলিশ সাংবাদিকদের চাপের মুখে রাখতে চায়। নাজমুলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা মিথ্যা এবং হয়রানিমূলক। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান বলেন, আমরা দেখেছি সাংবাদিক নাজমুল কোনো মিথ্যা বা উদ্দেশ্যমূলক তথ্য পরিবেশন করেননি। বরং পুলিশই এজাহারে তথ্য বিকৃতি ঘটিয়েছে? নাজমুলের প্রতিবেদনে কোথাও ছয়শ’ পোশাক কারাখানা বন্ধের তথ্য নেই? আছে ৫৫টি পোশাক কারাখানা বন্ধের কথা? কিন্তু পুলিশ তথ্য বিকৃত করে এজাহারে বলেছে নাজমুল ছয়শ’ কারখানা বন্ধের কথা লিখেছে? পুলিশের এই তথ্য বিকৃতি নিন্দনীয় এবং ন্যক্কারজনক? সাংবাদিক নাজমুল হুদার আইনজীবী বলছেন, আমরা আদালতে বলেছি এজাহারে নাজমুলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সত্য নয়? নাজমুলের প্রতিবেদনে বাড়তি বা ঘটনার বাইরে কোনো তথ্য নেই? মামলাটি হয়রানিমূলক? কারাগারে আটক সাংবাদিক নাজমুল রানা প্লাজা ধসের সময় তার ধারণ করা ফুটেজের জন্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে আলোচিত হন? তিনিই একমাত্র সাংবাদিক যিনি রানা প্লাজা ধসের আগের দিন ভবনের ফাটলের ভিডিও ধারণ এবং প্রচার করেন। ভবন ধসের দিন সকালে শ্রমিকদের জোর করে ভবনে ঢোকানোর ভিডিও ফুটেজও তিনিই ধারণ করেছিলেন? রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার বিরুদ্ধে হত্যা মামলায় নাজমুলের ধারণ করা ভিডিও ফুটেজই প্রধান সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। রানা প্লাজা ধসের সময় নাজমুলের সাহসী সাংবাদিকতার জন্য তাকে নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম তথ্যচিত্রও নির্মাণ করেছে?

সর্বশেষ খবর