শিরোনাম
বুধবার, ৪ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জাইকার

বাধাগ্রস্ত হতে পারে ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ ছাড়ে এবার বাংলাদেশ ব্যাংকের দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে অভিযোগ করেছে জাপান। দেশটির আন্তর্জাতিক সহায়তাকারী সংস্থা জাইকা সম্প্রতি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) চিঠি লিখে জানিয়েছে, তাদের দেওয়া অর্থ ছাড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক  কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত বিলম্ব করছে। বিষয়টি নিয়ে অধিকাংশ প্রকল্পের পরিচালক তাদের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বিলম্বিত অর্থ ছাড়ের কারণে সরকারের যে অগ্রাধিকার প্রকল্প রয়েছে (ফাস্ট ট্র্যাক) তা বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে জাইকা বলেছে, সরকারের বড় বড় প্রকল্প সময়মতো বাস্তবায়ন না হলে সেটি বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। জাইকার বাংলাদেশ অফিসের সিনিয়র প্রতিনিধি টাকু ইয়ামাবে স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়,  এজেন্ট ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব সাপ্লায়ার্স কর্তৃক পাঠানো টাকা সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের অ্যাকাউন্টে ছাড় করে দেওয়া। ঋণ চুক্তি অনুযায়ী স্বাভাবিকভাবে সেটি না ঘটায় বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পে জাইকার অর্থায়নে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। জাইকার অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবহিত নন। সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে কথা না বলে এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না।  তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্রগুলো জানায়, জাইকার দেওয়া অর্থ ছাড়ে জটিলতার কারণ ভিন্ন। সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় রাজধানীতে যে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে, এর অর্থ ছাড়ে জাপানের ব্যাংক অব টোকিও-মিতসুবিসি ট্রান্সফার ফি বাবদ বেশি কমিশন দাবি করছে। জাইকার ঋণ সহায়তার কিস্তি এই ব্যাংক অব টোকিও-মিতসুবিসির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে পৌঁছে। এরই মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রগুলো। জাইকার কাছ থেকে ঋণ হিসেবে যে সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা পাওয়া যাবে, সেটি জাপানের ব্যাংক অব টোকিও-মিতসুবিসি থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে স্থানান্তর হবে। এ জন্য সম্প্র্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ওই অর্থছাড়ে একটি চুক্তির খসড়া পাঠায় জাপানের ব্যাংকটি। ওই খসড়ায় তারা প্রতি কিস্তি অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে ১/২০ শতাংশ হার বা মোট কিস্তির ২ হাজার ভাগের ১ ভাগ অর্থ ট্রান্সফার ফি হিসেবে চেয়েছে। এ হারকে অনেক বেশি উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংক ইআরডিকে জানিয়েছে, এর ফলে অনেক বেশি পরিমাণ অর্থ কমিশন হিসেবে চলে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের  কর্মকর্তারা বলেন, এর আগে এ ধরনের ঋণে অর্থ স্থানান্তরে যে ফি ছিল, সেটি ১/৩০ শতাংশ অর্থাৎ মোট কিস্তির ৩ হাজার ভাগের ১ ভাগ ফি ধরা হতো। এবার সেটি ১/২০ বা ২ হাজার ভাগের ১ ভাগ ধরা হয়েছে। অর্থাৎ আগের চেয়ে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বেশি ফি  পরিশোধ করতে হবে। এটি অবশ্যই কমিশন হিসেবে অনেক বেশি। সে কারণে আমরা বিষয়টি ইআরডিকে জানিয়েছি। প্রসঙ্গত, ইয়েন লোনের আওতায় (৩৭তম ওডিএ লোন প্যাকেজ) বাংলাদেশের ছয়টি মেগা প্রকল্পে সহায়তা করছে জাপান। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ঢাকা মাস রোড ট্রান্সপোর্টের (এমআরটি) উন্নয়ন প্রকল্প (মেট্রোরেল)। গত বছর জুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এরই মধ্যে প্রকল্পের কাজও শুরু হয়েছে। প্রকল্পটিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ হাজার কোটি টাকা। মোট ব্যয়ের ১৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা অর্থায়ন করছে জাইকা এবং অবশিষ্ট টাকা যাবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে।

সর্বশেষ খবর