বুধবার, ৪ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

প্রকৃতির অলঙ্কার প্রজাপতি

মোস্তফা কাজল

প্রকৃতির অলঙ্কার প্রজাপতি

প্রজাপতিকে বলা হয় প্রকৃতির অলঙ্কার। প্রজাপতিই সবচেয়ে রঙিন ও স্পন্দনশীল। কয়েক দিন ধরে রাজধানীর মিরপুরের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে (বোটানিকাল গার্ডেন)        যেন প্রজাপতির মেলা বসেছে। প্রতিদিন প্রজাপতি দেখতে অনেকে ছুটে আসছেন। ফুল থেকে ফুলে, সমতল কিংবা পাহাড়ে, ঝোপে-ঝাড়ে, বাড়ির আঙিনার গাছপালায়, নদীর কিনার থেকে গাছ পেরুনো উঁচুতে এদের ছুটে চলা সবার মনে খুশির দোলা দিয়ে যায়। তবে বন বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, দিন দিন কমে আসছে প্রকৃতির শোভা নানা বর্ণের প্রজাপতির সংখ্যা। প্রজাপতি আকর্ষণীয় রঙের শীতল রক্তযুক্ত পতঙ্গ। সাধারণত প্রজাপতির শরীর লম্বাটে ও উজ্জ্বল রঙের হয়ে থাকে। উড়ে দিনের বেলায়। তাপমাত্রা ৮২-১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের মধ্যে থাকলে প্রজাপতি খুব সহজেই চলাফেরা করতে পারে। প্রজাপতির ঘ্রাণ ও দৃষ্টিশক্তি অত্যন্ত প্রখর হয়। যা দিয়ে সে অনেক দূর থেকেই কাঙ্ক্ষিত ফুলের গন্ধ ও রং নিরূপণ করতে পারে। প্রজাপতি সাধারণত ১২টি গোত্রে বিভক্ত। সারা পৃথিবীতে কয়েক হাজার প্রজাতির প্রজাপতি রয়েছে। বাংলাদেশে প্রায় ৪০০টি বিভিন্ন প্রজাতির প্রজাপতি চিহ্নিত করা গেছে বলে জানা যায়। প্রজাপতি পাগুলোকে ব্যবহার করে কোনো উদ্ভিদ বা বিভিন্ন খাবার খুঁজে বেড়ায়। এ পতঙ্গটি সাধারণত ফুলের মধু খেয়ে বাঁচে। তবে এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে ফুলের রেণু, গাছের রস, পচা ফল, গোবর, পচনশীল মাংস অথবা ময়লায় দ্রবীভূত অবস্থায় থাকা খনিজ পদার্থ। প্রজাপতি বিভিন্ন গাছের ফুলকে জড়িয়ে ধরে এর রস আস্বাদন করে থাকে। এদের মেরুদণ্ডের কাছে একটি কেমোরেসিপট রস থাকে, যা বিভিন্ন গাছের রাসায়নিক পদার্থের কোনো মিল খুঁজে পেলে সেখানে সে তার ডিমগুলো স্থাপন করে যায়। প্রজাপতির পাখাগুলো আসলে এক ধরনের চিটিন নামক প্রোটিনের স্তর দিয়ে তৈরি হয়। যেগুলো প্রাণীকে উড়তে সহায়তা করে। হালকা তুলার মতো পদার্থ স্বচ্ছ চিটিনের চারপাশে বেষ্টন করে থাকে। আলো পড়লে তা প্রতিফলিত হয়ে বিভিন্ন রঙের তৈরি করে। এরা সাধারণত ঘণ্টায় ১২ থেকে ২৫ মাইল বেগে উড়তে পারে। পূর্ণবয়স্ক শুঁয়াপোকা পিউপায় পরিণত হওয়ার পর এক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস উপ্তিকাল কাটিয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রজাপতি হয়ে উড়াল দেয়। একটি প্রজাপতির আয়ু মোটামুটি ২-৪ সপ্তাহ। এতটুকু সময়ের মধ্যে তারা শুধু দুটি কাজই করে থাকে— খাওয়া ও প্রজনন করা। গুরুত্বপূর্ণ প্রজাপতির গোত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে সোয়ালোটেইলস, লেমন বাটারফাই। প্রজাপতি অনেক জাতের ফুলের পরাগযোগ ঘটায়। বাংলাদেশে যেসব প্রজাপতি আছে তার মধ্যে হিসপিরিডাই, পেলিপনডাই, পেরিডাই, নিমফেলিডাই, ঢানিডা, সেটিরাইড, লিসানিডাই, এমাথুসাইডি, এক্রিডাই, ব্যামবো ট্রি ব্রাউন, পেঙ্গুইন টাইগার, কমন ডাফার ও রিউডিনাই উল্লেখযোগ্য। প্রজাপতি নিয়ে রয়েছে হাজারো কাহিনী, সৌন্দর্যের তুলনা ও লোকগাথা। তবে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, নগরায়ণ, নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, চিত্র ধারণ কর্মকাণ্ড, দর্শনার্থীদের সৃষ্ট শব্দদূষণ ইত্যাদি কারণে প্রতিনিয়ত প্রজাপতির জীবনকে করে তুলছে বিপন্ন। সৌন্দর্যের প্রতীক প্রজাপতিকে টিকিয়ে রাখতে গণসচেতনতার বিকল্প নেই।

সর্বশেষ খবর