বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

আতঙ্ক জঙ্গি মুসাকে নিয়ে

রাজধানীতে আরও ভয়ঙ্কর আস্তানা । দুই নারীকে নিয়ে অভিযান

সাখাওয়াত কাওসার

নব্য জেএমবির শীর্ষ জঙ্গি মাইনুল ইসলাম ওরফে মুসাকে নিয়েই যত আতঙ্ক। অস্ত্র চালনা ও বোমা তৈরিতে সিদ্ধহস্ত এ ভয়ঙ্কর জঙ্গিই সংগঠিত করছেন নব্য জেএমবির অন্য সদস্যদের। তার দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে পরিচালিত হচ্ছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। খোদ রাজধানীতেই রয়েছে আরও কয়েকটি জঙ্গি আস্তানা।

এসব আস্তানা কোন কোন এলাকায়, তা নিশ্চিত হলেও ঠিক কোন বাড়িতে, সে সম্পর্কে গতকাল পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারেননি গোয়েন্দারা। তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) হেফাজতে থাকা নারী জঙ্গি জেবুন্নাহার শিলা ও তৃষামণিকে নিয়ে দফায় দফায় গোপন অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছেন, দ্বিতীয় দফায় আট দিনের রিমান্ডে থাকা শিলা ও তৃষামণি নানা ধরনের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছেন তাদের। গতকাল দ্বিতীয় দফা রিমান্ডের দুই দিন অতিবাহিত হয়েছে। এ দুই নারী জঙ্গির রিমান্ডে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিটিটিসির উপ-কমিশনার (ডিসি) মহিবুল ইসলাম  বলেন, জঙ্গি নেতা মুসা সম্পর্কে দুই নারী অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তারা মুসার নিয়ন্ত্রণে থাকা সম্ভাব্য জঙ্গিঘাঁটি, অস্ত্র, গ্রেনেডের ধারণা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে ধরা না পড়া আত্মঘাতী নারী জঙ্গিদের সম্পর্কেও তথ্য দিয়েছেন। তাদের তথ্যানুযায়ী মুসাকে ধরতে এরই মধ্যে রাজধানী এবং আরও কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনাবিষ্কৃত ওই আস্তানাগুলোয় আরও কয়েকজন আত্মঘাতী নারী জঙ্গি থাকতে পারেন। তাদের হামলার উদ্দেশ্যে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সুযোগ পেলেই ওইসব অস্ত্র ও আত্মঘাতী নারীদের ব্যবহার করে নাশকতা চালাতে পারেন মুসা। আশকোনার সূর্য ভিলা থেকে গ্রেফতার দুই নারী জঙ্গি জেবুন্নাহার শিলা ও তৃষামণি সাত দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে সিটিটিসিকে এ রকম নানা তথ্য জানিয়েছেন। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, গেল বছরের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারি, ২৬ জুলাই কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানা, ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় জঙ্গিঘাঁটি থেকে উদ্ধার অস্ত্র-বিস্ফোরক ও আশকোনার সূর্য ভিলার অস্ত্র-বিস্ফোরকের উৎস একই সূত্রে গাঁথা। অস্ত্র-বিস্ফোরকের মানও একই। তবে সুইসাইড ভেস্টের বিষয়টি দেশের জঙ্গিবাদে একেবারেই নতুন। এসব বিষয়ে মুসার অসাধারণ দক্ষতা রয়েছে বলে দাবি রিমান্ডে থাকা দুই নারী জঙ্গির। মুসা যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারেন সেজন্য সব কটি সমুদ্র, বিমান ও স্থলবন্দরে তার বিভিন্ন ধরনের ছবি-বায়োডাটাসহ নানা তথ্য দেওয়া হয়েছে। সূত্র বলছেন, বড় ধরনের আত্মঘাতী হামলা চালানোর মানসিক প্রস্তুতি ছিল আস্তানার জঙ্গিদের। তারা অপেক্ষায় ছিলেন মুসার নির্দেশের। ঢাকার মিরপুর, মোহাম্মদপুর, উত্তরা, উত্তরখান, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী এবং কেরানীগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের আশপাশ এলাকায় এখনো নব্য জেএমবির ঘাঁটি আছে। এ ছাড়া রাজশাহীর বাগমারা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম ও সিলেটেও জঙ্গিঘাঁটি রয়েছে। প্রতিটি জঙ্গি আস্তানায় বিস্ফোরক, গ্রেনেড-অস্ত্র মজুদ আছে। তামিম, মেজর জাহিদ, তানভীর কাদেরী, সারোয়ার জাহান একের পর এক নিহত হওয়ায় মুসার নেতৃত্বে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন জঙ্গিরা। বর্তমানে মুসার সঙ্গে রয়েছেন রাশেদুর রহমান সুমন, সেলিম ও ফিরোজ। এরা নব্য জেএমবির বোমার কারিগর। আশকোনার সূর্য ভিলায় এরা নিয়মিত আসতেন। এ ছাড়া নব্য জেএমবিতে সোহেল মাহফুজের মতো আরও একজন অস্ত্র ও বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। তিনিই মূলত নব্য জেএমবিতে অস্ত্র-বিস্ফোরক সরবরাহের দায়িত্ব নেন।

সুমনকে জিজ্ঞাসাবাদের উদ্যোগ : জঙ্গি আস্তানায় নিহত নারী জঙ্গি শাকিরার স্বামী রাশেদুর রহমান সুমন বর্তমানে কারাবন্দী। তাকে আশকোনার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে শিগগির জিজ্ঞাসাবাদ করবে সিটিটিসি। তাদের ধারণা, এ ক্ষেত্রে অস্ত্র ও পলাতক জঙ্গিদের ব্যাপারে তথ্য মিলতে পারে। শাকিরার প্রথম স্বামী ইকবাল এক বছর আগে ক্যান্সারে মারা গেলে সুমন তাকে বিয়ে করেন। এরপর শাকিরাকে জেএমবির নারী ইউনিটে যুক্ত করেন। ২১ নভেম্বর রাজধানীর কাজলা থেকে সুমনকে গ্রেফতার করা হলে শাকিরা সন্তানসহ সূর্য ভিলায় আশ্রয় নেন।

সর্বশেষ খবর