বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

যানজটে অচল হয়ে পড়েছিল রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাম্প্রতিক সময়ে নগরবাসী এমন যানজটের কবলে আর পড়েননি। বছরের প্রথম সপ্তাহের এমন যানজটে নগরীর মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। সকালে রাস্তায় নামা যানবাহন দুপুর পর্যন্ত ঠায় দাঁড়িয়েছিল একই জায়গায়। সকাল ১১টায় মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে সচিবালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া মোহাম্মদ খালিদ নামে একজন ব্যবসায়ী যানজটের বর্ণনা দিয়ে বলেন, সচিবালয়ে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে প্রথমে আসাদগেট হয়ে মানিক মিয়া এভিনিউয়ের দিকে যাচ্ছিলাম। সংসদ ভবনের সামনে যেতেই চোখে পড়ল খামারবাড়ি মোড়ে গাড়ির দীর্ঘ লাইন। রাস্তা পরিবর্তন করে মিরপুর রোড ধরে নিউমার্কেট হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু ৩২ নম্বরে পৌঁছে আর গাড়ি এগোয় না। পুরো দুই ঘণ্টায় দুপুর ১টায় নীলক্ষেত মোড়ে পৌঁছার পর পলাশী মোড় হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও কোনো কাজ হলো না। ছাত্রলীগের র‌্যালির কারণে কোনো দিকেই যাওয়া যাচ্ছিল না। অগত্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরেই ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে কেটে গেল আরও ঘণ্টা দেড়েক। পুরো দিনই মাটি হয়ে গেল। অগত্যা সচিবালয়ের দিকে না গিয়ে আবার উল্টো যাত্রা। শুধু খালিদ নয়, গতকাল যারাই রাস্তায় বের হয়েছেন তাদের সঙ্গী ছিল শুধুই দুর্ভোগ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সাধারণ ও কর্মজীবী মানুষকে রাস্তায় কাটাতে হয়েছে। গতকালের এই যানজটের প্রধান কারণ ছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। সরকারি দল আওয়ামী লীগের সহযোগী এই ছাত্র সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আনন্দ র‌্যালির কর্মসূচি ছিল। এতে অংশ নিতে রাজধানীর বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড, পাড়া-মহল্লা, কলেজ ও ঢাকার আশপাশের উপজেলা থেকে ট্রাক, বাস, পিকআপ করে এবং হেঁটে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। এ কারণে সকাল থেকে নগর জুড়ে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ যানজট। বড় রাস্তা ছেড়ে এই যানজট ছড়িয়ে পড়ে অলিগলিতে। দুপুর ১২টার দিকে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা অপরাজেয় বাংলা থেকে আনন্দ র‌্যালি বের করলে যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। হাজার হাজার নেতা-কর্মী হেঁটে এবং ট্রাকে করে র‌্যালিতে অংশ নিলে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, শাহবাগ, কাঁটাবন, নীলক্ষেত, মত্স্যভবন, কাকরাইল মসজিদ মোড়, দোয়েল চত্বর, শহীদ মিনার এলাকা, প্রেস ক্লাব, পল্টন, জিপিও, গুলিস্তানসহ আশপাশের সব সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুরো সড়ক জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকে শত শত ছোট-বড় যানবাহন। এই যানজটের প্রভাব পড়ে পুরো নগরজুড়ে। রাজধানীর বাংলামোটর, পান্থপথ, ফার্মগেট, মিরপুর রোড, বিজয় সরণি, মহাখালী, বিমানবন্দর সড়ক সর্বত্রই যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। নগরীর বাইরে থেকে মতিঝিলমুখী সব রাস্তার যানবাহনকেই এই ভোগান্তি পোহাতে হয়। বিকাল ৪টার দিকে ফার্মগেট থেকে বিমানবন্দরের দিকে যেতে দেখা গেছে, মতিঝিলমুখী সড়কটিতে যানবাহন ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল। হোটেল র‌্যাডিসনের সামনে পর্যন্ত এমন চিত্র দেখা গেছে। এতে করে কর্মজীবী ও জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। রোগী পরিবহনের ক্ষেত্রে অ্যাম্বুলেন্সকেও অনেক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। সরেজমিন দেখা গেছে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহনের চাকা না ঘোরায় অধিকাংশ পরিবহন থেকেই যাত্রীরা নেমে হেঁটে গন্তব্যের দিকে যাত্রা করেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিউমার্কেট এলাকায় কথা হয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মুনতাছিরুল হকের সঙ্গে। সায়েন্স ল্যাবরেটরি থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত পৌঁছতেই তার এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় নিজের গাড়িতে বসে থেকে শেষ পর্যন্ত গাড়ি ছেড়ে দিয়ে পায়ে হেঁটে পুরান ঢাকার অফিসের দিকে রওনা হন। এভাবেই গতকাল দিনভর শত শত সাধারণ মানুষ হেঁটে তাদের নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছেন।

সর্বশেষ খবর