শুক্রবার, ৬ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

শেষ সম্বলের খোঁজে ব্যবসায়ীরা ধ্বংসস্তূপে এখনো ধোঁয়া

গুলশান ডিএনসিসি মার্কেটে আগুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর গুলশান-১ নম্বরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মার্কেটে আগুনে পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপ সরাচ্ছে সিটি করপোরেশন। গতকালও শত শত দোকানির শেষ সম্বল কেড়ে নেওয়া আগুনের অস্তিত্ব মিলেছে। ফলে ব্যবসায়ীরা ফায়ার সার্ভিসের কাজে গতি না থাকা এবং উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন।

গত সোমবার মধ্যরাতে ভয়াবহ আগুনে গুলশান-১ এর ডিএনসিসি মার্কেটের কয়েকশ দোকান পুড়ে যায়। ধসে পড়ে মার্কেটের একটি অংশ। দেড় দিনের চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিস বুধবার আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও গতকাল সকালে কাঁচাবাজার মার্কেটের অংশ থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা গেছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কমান্ডার এ কে এম শাকিল নেওয়াজ জানান, মার্কেটের আগুন নিভে গেলেও এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। বুলডোজার দিয়ে ধসে পড়া ভবনটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এই মার্কেটের দ্বিতীয়তলার দোকানগুলোতে বিভিন্ন ধরনের দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

সরেজমিন গতকাল দেখা গেছে, ধসে পড়া কাঁচা মার্কেট থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল। পাকা মার্কেটের নিচ দিয়ে ধসে পড়া কাঁচা মার্কেটে তাকালে আগুনের কুণ্ডলী দেখা যায়। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আগুন নেভানোর পাশাপাশি মেঝে মুছার কাজ করছিলেন। ধসে পড়া মার্কেটের অনেকাংশই হেলে ছিল পাশের গুলশান শপিং কমপ্লেক্সের ওপর।

ডিএনসিসির একটি বুলডোজার দিয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ধসে পড়া মার্কেটের পূর্ব-দক্ষিণ পাশ থেকে ভাঙা হচ্ছে। যে অংশটুকু ধসে পড়েছে তা মূল ডিএনসিসি মার্কেট থেকে আলাদা একটি বিল্ডিং। ওই বিল্ডিংয়ের নিচতলায় কাঁচাবাজার আর দ্বিতীয়তলায় ছিল কসমেটিকস, মুদি ও মনোহরি দোকান। সেখানে দাঁড়িয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এক ব্যবসায়ী বলেন, দোকান পুড়ে গেছে। সর্বস্বান্ত করেছে আমাকে। পরিবার নিয়ে এখন পথে বসতে হবে। কিন্তু আমরা ব্যবসা করতে চাই। দোকান ফেরত চাই। ব্যবসা শুরুর জন্য সুদমুক্ত ঋণ চাই। আগুন লাগার পর থেকেই একে নাশকতা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে আসছেন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের এই দাবি নাকচ করে ডিএনসিসি মেয়র আনিসুল হক বলেন, এটি একটি দুর্ঘটনা। বৈদ্যুতিক ত্রুটি থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে নাশকতা না হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ ভাগ। তিনি আরও বলেন, আগুনের ঘটনায় একটি স্বার্থান্বেষী মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত চলছে। সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনার মূল কারণ বেরিয়ে আসবে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পাশে আমরা আছি, থাকব।

জানা গেছে, গুলশান-১ এর ডিএনসিসি মার্কেটে আগুন লাগার আগে দোকান মালিকদের সঙ্গে বর্তমান কাঁচা মার্কেটের সভাপতি শের মোহাম্মদ ও বর্তমান পাকা মার্কেটের সভাপতি তালাল রেজভী বিভিন্ন স্থানে বৈঠক করেছেন। কিন্তু সমস্যার সমাধান ছাড়াই শেষ হয়  বৈঠকগুলো। এমন পরিস্থিতিতে বছরখানেক আগে গুলশানের সাবেক এমপি ও বিএনপি নেতা মেজর (অব.) কামরুল ইসলামের বাসায় বৈঠকের আয়োজন করা হয়। ওই  বৈঠকে একটি আবাসন কোম্পানির প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু ভবন না ভাঙার বিষয়ে বর্তমান সভাপতি অনড় থাকায় ওই বৈঠকেও কোনো সমাধান হয়নি। এরই মধ্যে সোমবার রাতে ওই মার্কেটে আগুন লাগে। সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যান কয়েকশ ব্যবসায়ী। এ বিষয়ে মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বেশ কিছুদিন আগে শের মোহাম্মদ ও তালাল রেজভী আমার বাসায় এসেছিলেন। তারা মার্কেটের বিষয়ে আলোচনা করলেও সমাধানে আসতে পারেননি।

মেয়রের আশ্বাস : আগুনের ঘটনায় ক্ষতিপূরণ ও মার্কেটের বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে গতকাল মেয়র আনিসুল হকের কার্যালয়ে যায় ১৪ সদস্যের ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধি দল। এর আগে মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের তার দফতরে ডাকেন মেয়র। মেয়রের কার্যালয় থেকে বের হয়ে কাঁচা মার্কেট মালিক সমিতির সভাপতি শের মোহাম্মদ বলেন, মেয়র ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়েছেন। মার্কেট ঠিক করতে যত টাকা খরচ হবে-সবই তিনি বহন করবেন। পাকা মার্কেট সমিতির সভাপতি তালাল রেজভীও একই কথা বলেন। গত সোমবারের আগুনের ঘটনায় চার শতাধিক দোকান পুড়েছে। কোনো মানুষ অবস্থান না করায় শুধু সম্পদই পুড়িয়ে ক্ষান্ত হয়েছে ডিএনসিসি কাঁচাবাজার ও সুপার মার্কেটের আগুন। পুড়ে গেছে উপার্জনস্থল, হয়েছেন নিঃস্ব, তবুও মার্কেটের পাশে রাত জেগে বসে আছেন ব্যবসায়ীরা। শীতের রাতে যে আগুন স্বস্তি এনে দেয় শীতার্ত মানুষের, সে আগুন ক্ষণে ক্ষণে ঝলসে দিচ্ছে ব্যবসায়ীদের।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর