রবিবার, ৮ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঝুঁকিতে চট্টগ্রামের মার্কেট কারখানাও

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম নগরের অন্যতম অভিজাত বিপণি সেন্ট্রাল প্লাজায় গত এক বছরে দুবার আগুন লাগে। ১৬৬টি দোকানের এই মার্কেটে জরুরি অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই, নেই ফায়ার সার্ভিসের কোনো ছাড়পত্রও। প্রতিদিন হাজার হাজার গ্রাহকের সমাগম ঘটলেও মার্কেটের তিনটি সি?ঁড়ির একটি থাকে বন্ধ। এসব অভিযোগে গত বুধবার সেন্ট্রাল প্লাজা কর্তৃপক্ষকে এক লাখ টাকা জরিমানা এবং এক মাসের মধ্যে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান ও সাবরীনা রহমান। একইভাবে নগরের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ মার্কেট রেয়াজুদ্দিন বাজারে ছোট-বড় প্রায় ১৫০টি মার্কেটে আছে ১০ হাজার দোকান। মার্কেটের গলিগুলো অত্যন্ত সরু, নেই গ্রাহকের হাঁটার পথ, দখল হয়ে গেছে সড়ক, বসানো হয়েছে অবৈধ দোকান। দুর্ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই। রেয়াজুদ্দিন বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, শতবর্ষী এ বাজারে প্রবেশের চারটি সড়ক ৩০ ফুট প্রস্থের। কিন্তু নানাভাবে দখল হয়ে যাওয়ায় দেখলে মনে হয় এসব সড়ক ১০ ফুটের। কার্যত কারণেই অনেক গ্রাহক ঐতিহ্যবাহী এ বাজার থেকে বিমুখ হয়েছেন। আমরা চাই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এসব সড়কের অবৈধ দোকান উচ্ছেদ হোক। ফিরে আসুক এ বাজারের ঐতিহ্য। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাবরীনা রহমান বলেন, চট্টগ্রামের অধিকাংশ মার্কেটই অগ্নিঝুঁকিতে। দুর্ঘটনা ঘটলে রক্ষার সুযোগ অনেকটাই কম। তাই আমরা মার্কেটগুলোতে অভিযান শুরু করেছি। ইতিমধ্যে জরিমানা ও সতর্ক করা হয়েছে। খুব শিগগিরই অগ্নিনির্বাপণ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জেলা পরিষদ, চিটাগাং চেম্বার, ব্যবসায়ী সমিতিগুলোকে নিয়ে একটি সভার আয়োজন করা হবে। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের চট্টগ্রাম জেলা ইনচার্জ মো. জসিম উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রামের মার্কেট ও দোকান নিয়ে একটি তালিকা তৈরির কাজ চলছে। একই সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন না থাকা মার্কেট ও মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সের তালিকাও তৈরি করা হচ্ছে। এসব তালিকার মাধ্যমে প্রতিনিয়তই অভিযান পরিচালিত হবে। জেলা প্রশাসন পুরো বিষয়টি তদারকি করছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তামাকুমন্ডি লেনের বিদ্যুতের তারগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। দুতলায় আছে গোডাউন, তৃতীয় তলায় আবাসিক। আছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন। ভিতরে নেই পানির কোনো সোর্স। মার্কেটে রাতের বেলায় গেইটগুলো থাকে বন্ধ। এখানকার মুরগি গলি, ফ্রুট গলি, মাংস গলি ও চৈতন্য গলি এমন সরু, মানুষ হাঁটাও দায়। অগ্নিকাণ্ড বা ভূমিকম্পে চরম ঝুঁকিতে এসব মার্কেট ও দোকান। অন্যদিকে, মহানগরের অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা আছাদগঞ্জের বিভিন্ন ক্যামিকেলের প্রায় ১০০ দোকান আছে। প্রতি দোকানের রয়েছে একাধিক গোডাউন। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশেরই ফায়ার সার্ভিসের কোনো লাইসেন্স নেই বা লাইসেন্স নবায়ন করা নেই। অনেক গুদামে ব্যাপক পরিমাণ ক্যামিকেল গুদামজাত করা হলেও নেই কোনো অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। অনেক গোডাউনের ভিতরের বিদ্যুতের তারগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। এসব গুদামের পাশেই আছে ঝুঁকিপূর্ণ দোকান-বসতঘর। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে রক্ষার কোনো সুযোগ নেই। এভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে নগরের মার্কেট ও দোকানগুলো।

সর্বশেষ খবর