রবিবার, ৮ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

অস্ত্র ও গুলিসহ ‘নোয়া বাহিনী’র আত্মসমর্পণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল ও পটুয়াখালী প্রতিনিধি

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন সুন্দরবনের কুখ্যাত জলদস্যু ‘নোয়া ভাই বাহিনী’র প্রধান মো. বাকী বিল্লাহ ওরফে নোয়াসহ ১২জন সদস্য।

সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফেরার লক্ষ্যে তারা গতকাল দুপুরে সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা রাখাইন মার্কেট মাঠে র‌্যাব-৮ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ২৫টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১ হাজার ১০৫ রাউন্ড গুলি জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। অবশ্য এর আগে গত শুক্রবার বিকালে তারা র‌্যাব-৮ এর একটি দলের কাছে আত্মসর্মপণ করেন। এ সময় তারা অন্ধকার জগৎ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আশায় তাদের হেফাজতে থাকা অস্ত্র ও গোলাবারুদও র‌্যাবের কাছে সমর্পণ করেন। গতকালের আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণ পর্বে প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখনো যারা সুন্দরবনের গহিনে লুকিয়ে রয়েছেন তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে হবে। সরকার অহেতুক রক্তপাত চায় না। তাই প্রাণে বাঁচতে হলে সুন্দরবন দাপিয়ে বেড়ানো অন্যান্য জলদস্যু বাহিনীকে দ্রুত সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ করে আইনের আশ্রয় গ্রহণ করা উচিত।  মন্ত্রী আরও বলেন, সরকার যেভাবে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করেছে, ঠিক তেমনি জনগণের সহায়তায় সুন্দরবনও জলদস্যুমুক্ত করার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। এর আগে আত্মসমর্পণকারী ৭ দস্যুবাহিনীর ৬০ সদস্যকে সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে এসে তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রধানমন্ত্রী দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। সরকার তাদের পুনর্বাসনের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। র‌্যাব-৮ কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল মো. আনোয়ার উজ জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ বলেন, এখনো পূর্ব সুন্দরবনে ২টি এবং পশ্চিম সুন্দরবনে ৬টি জলদস্যু গ্রুপ সক্রিয়। তারা র‌্যাবের নজরদারিতে রয়েছে। তিনি তাদের প্রাণে বাঁচতে চাইলে দ্রুত আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান। আত্মসমর্পণ করা ‘নোয়া বাহিনী’র প্রধান মো. বাকী বিল্লাহ ওরফে নোয়া এ অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেন, কু-পরামর্শে অন্ধকার জগতে গিয়েছিলেন। দস্যুতা করে তেমন কিছুই করতে পারেননি। কামিয়েছেন শুধুই বদনাম। ওই জীবনের কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। অনিশ্চিত জীবন ছেড়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাভাবিক জীবন-যাপনের আশায় সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন। তিনিসহ অন্যরা যাতে স্বাভাবিক জীবনে থাকতে পারেন, সেই লক্ষ্যে সরকারসহ জনগণের সহায়তা কামনা করেন। এখনো দস্যুতায় লিপ্ত থাকা অন্য বাহিনীগুলোকেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সরকারি আহ্বানে সাড়া দেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি। র‌্যাব-৮ এর উপ-অধিনায়ক মেজর আদনান কবিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি শেখ মারুফ হাসান, পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক কেএম শামীমুল হক সিদ্দিকী এবং পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার মুশফিকুর রহমান বক্তব্য রাখেন। উল্লেখ্য, সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এর আগে গত বছর মোট ৬ দফায় ৭ দস্যু বাহিনীর ৬০ জন সদস্য ১৩৯টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৭ হাজার ৫৩১ রাউন্ড গুলিসহ আত্মসমর্পণ করেন। এ নিয়ে মোট ৭২ জন জলদস্যু ১৬৪টি স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৮ হাজার ৬৩৬ রাউন্ড গুলি জমা দিয়ে সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।

সর্বশেষ খবর