মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

পদ্মা সেতুর জন্য প্রস্তুত সুপার স্ট্রাকচার

সার্বিক কাজের ৪০ শতাংশ সম্পন্ন

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

দেশের অন্যতম মেগা প্রকল্প পদ্মা বহুমুখী সেতুর কাজ শিডিউল অনুযায়ী দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। সার্বিক কাজের ৪০ শতাংশ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়ে গেছে। চলতি ২০১৭ সালের শুরুতেই পদ্মা সেতুর পিলারের ওপর বসানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছে একটি সুপারস্ট্রাকচার (স্প্যান)। আরও দুটি প্রস্তুতি সম্পন্নের পথে। কয়েক দিনের মধ্যেই পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হবে। মূল পিলারের ওপর উঠে দাঁড়াবে সুপারস্ট্রাকচার।

চোখে দেখার মতো দৃশ্যমান হবে দেশবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু। মোট ৬৬টি পিলার ও ৪১টি সুপারস্ট্রাকচার থাকবে সেতুটিতে। এর দুই পারে ১২টি   করে ২৪টি পিলার ছাড়াও ৪২টি মূল পিলারের ওপর ৪১টি সুপারস্ট্রাকচার বসবে। এর মধ্যে ১১টি তৈরি হয়ে গেছে। বাকিগুলো তৈরির কাজ চলছে চীনের সাংহাই শহরের সিং হোয়াং দাও কারখানায়। এদিকে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা, সংযোগ সড়ক, নদীশাসন, মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় সেতু প্রকল্পের কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ড্রাস্ট হাউসে সেতুর মূল অবকাঠামো সুপারস্ট্রাকচার (স্প্যান) ফিটিংসসহ নানা কর্মে মুখর পদ্মাপাড়। রাত-দিন খেটে চলেছেন প্রকল্পে কর্মরত দেশি-বিদেশি প্রায় ২২ হাজার শ্রমিক, প্রকৌশলী ও কর্মকর্তা। প্রমত্তা পদ্মার বুকে বাংলাদেশের অহংকার হিসেবে জেগে উঠতে শুরু করেছে পদ্মা সেতুর পিলারের ওপর সুপারস্ট্রাকচার। এটি বাংলাদেশের অহংকার ও গর্বের প্রতীক। নিজস্ব অর্থায়নে এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে দেশের দক্ষিণবঙ্গের ২৩ জেলার মানুষের মধ্যে ফুটে উঠেছে আশার আলো। শত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে দেশবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তব রূপ দেখতে অধীর আগ্রহে প্রহর গুনছেন দুই পারের এলাকাবাসী। সেতুর মূল অবকাঠামো সেতুর মূল পিলারের ওপর বসানো হবে আর এটি খুব কাছ থেকে দেখা যাবে এমন খবরে পদ্মাপাড়ের মানুষের মধ্যে উৎসবের আমেজ বইছে। এদিকে প্রায়ই পদ্মাপাড়ে ছুটে আসেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রকল্প এলাকার প্রায় প্রতিটি কাজ সচক্ষে  পরিদর্শন করেন তিনি। সর্বশেষ শুক্রবার প্রকল্পে কর্মরত শ্রমিকদের সঙ্গে তিনি জুমার নামাজ আদায় করে পদ্মা সেতু এবং দেশ ও জাতির কল্যাণে দোয়া কামনা করেন। ইতিমধ্যে সেতুমন্ত্রী কাজের অগ্রগতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পদ্মা সেতু নির্মাণের পথে। শুধু প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়চেতা মনোভাবের কারণেই সম্পূর্ণ নিজ অর্থায়নে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের মতো মেগা প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হতে চলেছে। পদ্মা সেতুর কাজ শিডিউল অনুযায়ী দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এখানে প্রায় ২২ হাজার দেশি-বিদেশি শ্রমিকরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রকল্পের দুই পাশে সংযোগ সড়কের কাজ শেষ হয়ে উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ইতিমধ্যে তিনটি সুপারস্ট্রাকচার ফিটিংসের কাজ সম্পন্নের পথে। একটি সুপারস্ট্রাকচার ফিটিংস শেষে ভর-সক্ষমতা যাচাইসহ পিলারের ওপর বসানোর উপযোগী করা হয়েছে। সেটি এখন পিলারের ওপর ওঠার অপেক্ষায়। এ বছর ২০১৭ সালের প্রথম দিকে এটি মূল পিলারের ওপর উঠে দাঁড়াবে। চোখে দেখার মতো দৃশ্যমান হবে দেশবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এরপর একে একে সেতুজুড়ে ৪২টি পিলারের ওপর বসানো হবে ৪১টি স্প্যান। এই ৪১টি স্প্যানের প্রতিটির দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। তীব্র বায়ুপ্রবাহ ও ভূমিকম্পজনিত ধাক্কা মোকাবিলায় বেছে নেওয়া হয়েছে ওয়ারেন ট্রাস ফর্ম। এর আগে চীনের সাংহাই শহরের সিং হোয়াং দাও কারখানায় তৈরি তিনটি সুপারস্ট্রাকচার মাওয়ায় পৌঁছে কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আরও একটি চীন থেকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে পৌঁছে আনলোড হয়ে মাওয়ার উদ্দেশে রওনা হয়েছে।

এ ছাড়া চীনের সিং হোয়াং দাও কারখানায় আরও সাতটি সুপারস্ট্রাকচার তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। যে কোনো দিন চীন থেকে সেটি বাংলাদেশের উদ্দেশে জাহাজযোগে রওনা হবে বলেও তিনি জানান। পিলারের ওপর স্প্যান বসানোর কাজে ব্যবহারের জন্য প্রকল্প এলাকায় তিন হাজার ৬০০ মেট্রিক টন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি অত্যাধুনিক ক্রেন আনা হয়েছে। এর আগে আনা হয়েছিল দুই হাজার ৫০০ টন ভারবাহী জার্মানি হ্যামার এবং পরে দুই হাজার টন ভারবাহী  হ্যামার। এ ছাড়া নদীশাসন, সার্ভিস এরিয়া টু, অ্যাপ্রোচ রোড মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক বলেও জানান তিনি। মন্ত্রী জানান, পদ্মা সেতুর কাজ তদারকির জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে প্রকল্পের নদীশাসনের জন্য দায়িত্বে রয়েছে  চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড। মূল সেতুর নির্মাণকাজের জন্য রয়েছে চীনের চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। সেতুর দুই পাড়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণ, টোল প্লাজা ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের জন্য যৌথভাবে আবদুল মোনেম লিমিটেড ও মালয়েশিয়ার হাইওয়ে কনস্ট্রাকশন ম্যানেজমেন্ট কাজ করে চলেছে।

সর্বশেষ খবর