মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

নব্য জেএমবির ১০ জঙ্গি গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর উত্তরা ও কলাবাগান থেকে ‘উত্তরা লাইফ স্কুল’-এর অধ্যক্ষসহ নব্য জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের ১০ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে এলিট ফোর্স র‌্যাব। রবিবার রাতে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এরা নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা নিহত মেজর জাহিদ (অব.) ও তানভীর কাদেরীর ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে র‌্যাব জানিয়েছে। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন আবু সাদাত মো. সুলতান আল রাজী ওরফে লিটন (৪১), আল মিজানুর রশিদ (৪১), জান্নাতুল মহল ওরফে জিন্নাহ (৬০), জিয়াউর রহমান (৩১), কৌশিক আদনান সোবহান (৩৭), মিজানুর রহমান (৪৩), মেরাজ আলী (৩০), মুফতি আবদুর রহমান বিন আতাউল্লাহ (৩৭), শাহরিয়ার ওয়াজেদ খান (৩৬) ও শরিফুল ইসলাম (৪৬)। গতকাল বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস্) কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান বলেন, গ্রেফতার ব্যক্তিরা নব্য জেএমবির মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ। এরা বিভিন্ন সময় জঙ্গি নেতা তামিম ও সারোয়ারকে সহযোগিতা করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা বিষয়টি স্বীকারও করেছেন। যে কোনো সময় তারা বড় ধরনের নাশকতা ঘটানোর প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। তিনি বলেন, উত্তরা লাইফ স্কুলে একাডেমিক শিক্ষার বাইরে বিভিন্ন ধরনের উগ্র মতবাদের চর্চা হতো। অভিভাবক ছাড়াও বাইরের লোকজন ওই স্কুলের হালকায় অংশ নিতেন। র‌্যাবের কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি ও অভিযানের ফলে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা পুনরায় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা চালিয়েও বার বার ব্যর্থ হয়েছেন। তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে আটক হয়েছেন। জানা গেছে, গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে লাইফ স্কুলের বর্তমান অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান, সাবেক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম ও তার ভাগ্নে জিয়াউর রহমান রয়েছেন। জিয়াউর এ স্কুলের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন। তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সাবেক শিক্ষকও। গত বছর জুলাইয়ে শরিফুল, জিয়াউরসহ চারজন লাইফ স্কুল ছেড়ে চলে যান। উত্তরার ৯ নম্বর সেক্টরে ‘নলেজ হোম’ নামে একই ধরনের নতুন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন তারা। তাদের পরিবারের অভিযোগ, গতকাল ভোরের দিকে নিজ বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তাদের তুলে নেওয়া হয়। জানতে চাইলে শরিফুল ইসলামের স্ত্রী সোনিয়া ইসলাম বলেন, উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের ১৮ নম্বর রোডের ৭ নম্বর ভবন থেকে ভোর ৫টা থেকে সোয়া ৫টার দিকে ছয় থেকে সাত ব্যক্তি সাদা পোশাকে তাদের বাসায় ঢোকেন। ওই সময় তারা তার স্বামী শরিফুলকে তুলে নিয়ে যেতে চাইলে তিনি তাদের পরিচয়পত্র দেখতে চান। কোথা থেকে এসেছেন, কেন এসেছেন এবং তার স্বামীকে কোথায় নিয়ে যাবেন, সেসব জানতে চাইলে তারা তাকে কোনো কথার জবাব দেননি। এমনকি পরিচয়পত্রও দেখাননি। এরপর তার স্বামীকে নিয়ে চলে যান তারা। সকালে জানতে পারেন, র‌্যাবের লোকজন তাকে তুলে নিয়ে গেছে। তিনি দাবি করেন, শরিফুলকে তুলে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর রোডের ৪৯ নম্বর বাসা থেকে ভাগ্নে জিয়াউরকে একইভাবে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। একই ধরনের বক্তব্য শাহিরয়ার ওয়াজেদ খানের স্ত্রী নুসরাত জাহানেরও। তারও দাবি, একসময় লাইফ স্কুলে বিনিয়োগ করেছিলেন তার স্বামী। তবে দুই বছর আগে মতাদর্শগত পার্থক্যের কারণে তার স্বামী বিনিয়োগ উঠিয়ে নেন। উল্লেখ্য, ৮ অক্টোবর ঢাকার আশুলিয়ার এক বাড়িতে র‌্যাবের অভিযানের সময় পাঁচ তলা থেকে পড়ে একজনের মৃত্যু হয়। পরে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ওই ব্যক্তির প্রকৃত নাম সারোয়ার জাহান। তিনি নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা।

সর্বশেষ খবর