বিশাল প্যান্ডেলে বসা খুদে শিক্ষার্থীর দল। অপেক্ষা যুদ্ধ শুরুর। যুদ্ধটা বিশ্বরেকর্ড গড়ার। মঞ্চে যুদ্ধের কমান্ডার বিশিষ্ট বিজ্ঞান লেখক শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ১২টা। কমান্ডারের নির্দেশে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলো ৩ হাজার ২০০ খুদে শিক্ষার্থী। বিশ্বের সর্ববৃহৎ আইসিটি ও বিজ্ঞানবিষয়ক ব্যবহারিক ক্লাসের মাধ্যমে বিশ্বরেকর্ড গড়ার এ যুদ্ধটা চলে দেড় ঘণ্টা। অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে শেষ হয় বিশাল এ কর্মযজ্ঞ। এখন শুধু অপেক্ষা, কখন ঘোষণা আসবে জয়লাভের। কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর থানার মাঠে উপজেলা প্রশাসন আয়োজন করে বিশ্বের সর্ববৃহৎ আইসিটি ও বিজ্ঞান ক্লাসের।
অনুষ্ঠানের আয়োজক কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ড. ঊর্মি বিনতে সালাম বলেন, গিনেস বুকে নাম লেখানোই এ যুদ্ধের লক্ষ্য। আরেকটি লক্ষ্য হচ্ছে, এর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে বিজ্ঞানমনস্ক হিসেবে গড়ে তোলা এবং বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী ও সাহসী করে তোলা। এতে উপজেলার ২৩টি প্রাথমিক ও ৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৩ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে ইতিহাসের অংশ হয়ে রইল। প্যান্ডেলে ক্লাসরুমের উচ্চতা ছিল ১০ ফুট। এটি দৈর্ঘ্যে ২৪৬ ফুট এবং প্রস্থে ছিল ১৭২ ফুট। অনুষ্ঠানে ২১টি এলইডি মনিটর সিস্টেমের মাধ্যমে ক্লাস নেওয়া হয়। ড. জাফর ইকবালের নেতৃত্বে ৫০ জন শিক্ষক ক্লাস পরিচালনা করেন। উপজেলার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের বিজ্ঞান ও আইসিটি বিষয়ের ৮০ জন শিক্ষক সহায়তা করেন ক্লাস পরিচালনায়। ব্যবহারিক ক্লাসে শেখানো হয় বৈদ্যুতিক চুম্বক ও কম্পাস বানানোর পদ্ধতি। এ ছাড়া মেইল পাঠানো সম্পর্কেও ধারণা দেওয়া হয়। দেড় ঘণ্টাব্যাপী চলে ব্যবহারিক ক্লাস। ক্লাস শেষে সফলতার আনন্দে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা হাত নেড়ে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করে। ড. জাফর ইকবাল বলেন, গিনেস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে ইতিমধ্যে যোগাযোগ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানটির ভিডিও গিনেস কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। ভিডিও দেখে তারা গিনেস রেকর্ডের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। সফল হবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি শিক্ষা খাতে সরকারের কাছে আরও অর্থ বাড়ানোর দাবি জানান।
উল্লেখ্য, গত বছর ১৬ আগস্ট অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে দেশটির জাতীয় বিজ্ঞান সপ্তাহ উপলক্ষে ২ হাজার ৯০০ শিক্ষার্থী নিয়ে বিজ্ঞানবিষয়ক ব্যবহারিক পাঠদান করে গিনেস রেকর্ড বুকে স্থান করে নেয় দেশটি। আর এ রেকর্ডের পাঁচ মাস না পেরোতেই কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে ৩ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী নিয়ে আয়োজন করা হয় বৃহৎ এ অনুষ্ঠানের। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এমপি। এ ছাড়া অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কুলিয়ারচর পৌরসভার মেয়র ইমতিয়াজ বিন মুসা জিসান।