শনিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

উত্তরকে বদলানোর চ্যালেঞ্জ অব্যাহত আনিসের

উত্তরকে বদলানোর চ্যালেঞ্জ অব্যাহত আনিসের

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নগরীকে ঢেলে সাজাতে বিভিন্ন রকমের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন মেয়র আনিসুল হক। আর তার হাত ধরে বদলে যেতে শুরু করেছে ডিএনসিসি এলাকার বর্জ্য অপসারণ, নিরাপত্তা রক্ষা এবং উন্নয়নমূলক সার্বিক কার্যক্রম। মাস্টার প্ল্যানের আওতায় গুলশান-বনানীর কূটনৈতিক এলাকাকে ঘিরে ফেলা হয়েছে নিরাপত্তার চাদরে। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি এবং জনগণের সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে মেয়র এ কাজগুলো করে চলেছেন। জানা যায়, মাস্টার প্ল্যানের আওতায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) কর্তৃপক্ষ নগরীর কয়েকশ ছোট-বড় রাস্তার সংস্কার ও উন্নয়ন শেষ করেছে। অনেকগুলোর কাজ চলমান। চলছে জলাধার (নদী-খাল-লেক) সংরক্ষণ ও উন্নয়ন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নসহ পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ে তোলার কাজ। দায়িত্ব নেওয়ার পর মেয়রের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল এলাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, কিছু গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ও সড়ক দখলমুক্ত করা। মেয়রের হস্তক্ষেপে রাজধানীর তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে কারওয়ানবাজার পর্যন্ত সড়ক বদলে গেছে আমূল। আগের মতো অসহনীয় যানজট, ঘিঞ্জি অবস্থা এখন চোখে পড়ে না। ঝকঝকে-তকতকে এই সড়কে এখন স্বস্তিতে চলছে যানবাহন, মানুষ। কয়েক দফা চেষ্টার পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের নেতৃত্বে ২০১৫ সালের ২৭ নভেম্বর সড়কটি চূড়ান্তভাবে দখলমুক্ত করা হয়।

অন্যদিকে পানি নিষ্কাশনের জন্য ডিএনসিসি এলাকায় তৈরি করা হয়েছে গভীর ড্রেন। বৃষ্টি হলে পানি জমার আগেই যেন তা নিষ্কাশন করা সম্ভব হয় এ জন্য পুরো এলাকায় সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে বছর ধরেই তৈরি করা হচ্ছে গভীর ড্রেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের রাস্তাজুড়ে আগে ৬৩টি স্থানে প্রতিদিন ২-৪ টন করে বর্জ্য স্তূপাকারে জমা হতো। মেয়র দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন ওয়ার্ডে ৪০টির বেশি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন নির্মাণের ফলে বর্জ্যের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলেছে নগরবাসীর। গত বছর জুনে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পরে উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যে থাকা গুলশানের কূটনৈতিক জোনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়ে। সেই লক্ষ্যে সিটি করপোরেশন এলাকাতে ৫০০ সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছে। এতে ওই এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার হয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। গুলশান, বনানী ও বারিধারার বাসিন্দাদের জন্য বিশেষ বাস ও রিকশা সার্ভিস কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই এলাকায় ২০টি বাস চলাচল করছে এবং আরও ২০টি বাস নামার অপেক্ষায়। আর নগরবাসীর সুবিধার্থে ৫০০ রিকশা চালু করা হয়েছে। খুব কম ভাড়ায় যাত্রীরা এসব বাসে চলাচল করতে পারবেন। মেয়র আনিসুল হকের অন্যতম চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে ডিএনসিসি এরিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠা বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা। সেগুলো উচ্ছেদে মেয়রের উপস্থিতিতে চলছে উচ্ছেদ অভিযান। রাস্তা ও ফুটপাথ অবৈধ দখলমুক্ত করে সেগুলো স্থায়ীভাবে পথচারীদের চলাচলের জন্য কাজ শুরু হয়েছে। এর পাশাপাশি গত বছর প্রায় ২০ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে দাবি করেছে সিটি করপোরেশন। এ ঘটনায় ১০০টির বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে দায়ী ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া সবুজ ঢাকা গড়তে বৃক্ষ রোপণ কার্যক্রম শুরু করেছে ডিএনসিসি। ‘ঢাকা বাঁচুক সবুজে, আমরা বাঁচব ঢাকাতে’— এই স্লোগান সামনে রেখে আড়াই লাখ গাছের এক সবুজ মহানগরী গড়ার সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে ডিএনসিসির তত্ত্বাবধানে দুই বছর ধরে ‘সবুজ ঢাকা’ কার্যক্রম চলছে। এ প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে ৪০টি স্কুল, ১০৮টি মসজিদ ও ৫০০ বাড়ির ছাদে বাগান করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ডিএনসিসি এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহযোগিতায় বর্তমান কর্মসূচির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে ডিএনসিসির ৩৬টি ওয়ার্ডে ১৯ হাজার টবসহ গাছ বিতরণ করা হবে। এ প্রকল্প সফল হলে আগামী ৫০ বছর ডিএনসিসি এলাকা হবে সবুজে ঘেরা বাসযোগ্য নগরী। ডিএনসিসি এলাকার মধ্যে জনবহুল জায়গায় সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে তৈরি করা হচ্ছে অত্যাধুনিক পাবলিক টয়লেট। এর মধ্যে ১৪টি মেয়র উদ্বোধন করেছেন এবং বাকিগুলোর কাজ চলছে। এর বাইরেও জনবহুল এলাকায় সিটি করপোরেশনকে জায়গা দিলে আরও অত্যাধুনিক পাবলিক টয়লেট তৈরি করে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র। নগরবাসীর সার্বিক সুবিধা নিশ্চিত করাই মেয়র আনিসুল হকের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।

সর্বশেষ খবর