শনিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
প্রথম পর্বে লাখো মুসল্লি

বিশ্ব ইজতেমায় বৃহত্তম জুমার জামাত

মোস্তফা কাজল, খায়রুল ইসলাম ও আফজাল, টঙ্গী থেকে

বিশ্ব ইজতেমায় বৃহত্তম জুমার জামাত

বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে গতকাল জুমার নামাজে অংশ নিয়েছেন দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লি। গাড়ির ছাদে দাঁড়িয়েও নামাজ আদায় করেন অনেকে। টঙ্গী স্টেশন রোড থেকে তোলা ছবি —রোহেত রাজীব

রাজধানীর উপকণ্ঠ টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে তাবলিগ জামাতের বার্ষিক মহাসম্মেলন বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দিনে গতকাল অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জুমার জামাত। লাখ লাখ মুসল্লি ছাড়াও রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার সাধারণ মানুষ দলে দলে এ জামাতে শরিক হন।

ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে গতকাল বাদ ফজর ভারতের মাওলানা ওবায়দুল্লাহ খুরশেদের আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ৫২তম বিশ্ব ইজতেমার তিন দিনের প্রথম পর্ব। দিনটি জুমার নামাজের দিন হওয়ায় টঙ্গী, উত্তরা, কামারপাড়া, মিরপুর,         আবদুল্লাহপুরসহ আশপাশের এলাকার মসজিদের জুমার জামাতে মুসল্লির সংখ্যা ছিল খুবই কম। সবাই সমবেত হয়েছিলেন ইজতেমা মাঠের জুমার জামাতে। সুবিশাল প্যান্ডেলের গণ্ডি ছাড়িয়ে এ জামাত বিস্তৃতি লাভ করে চারপাশে। এতে ইমামতি করেন বাংলাদেশের তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি মাওলানা মোহাম্মদ ফারুক হোসেন। জুমায় উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ও স্থানীয় এমপি জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান ও গাজীপুর সিটি মেয়র (ভারপ্রাপ্ত) আসাদুর রহমান কিরণ। আজ ইজতেমার দ্বিতীয় দিন। আগামীকাল রবিবার দুপুরের আগে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের সমাপ্তি ঘটবে। এরপর চার দিন বিরতি দিয়ে পুনরায় ২০ জানুয়ারি শুরু হয়ে ২২ জানুয়ারি জোহরের আগে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব।

যারা বয়ান করলেন : বাদ ফজর ভারতের মাওলানা ওবায়দুল্লাহ খুরশেদের আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। তার বয়ানের ভাষান্তর করেন বাংলাদেশের মাওলানা মো. জাকির হোসেন। বাদ জুমা বয়ান করেন দিল্লির মাওলানা সা’দ, বাদ আসর বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা এহসান, বাদ মাগরিব বয়ান করেন দিল্লির হযরত মাওলানা শওকত আলী।  

৫ মুসল্লির মৃত্যু : টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে আরও ৫ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন নোয়াখালী জেলার দাগনভূঞা থানার মাছিমপুর গ্রামের মৃত আবদুর রশিদ ভুইয়ার ছেলে বাবুল ভুইয়া (৬০), সাতক্ষীরা সদরের খেজুরডাঙ্গা গ্রামের মৃত আবদুস সোবহানের ছেলে আবদুস সাত্তার (৬৫), টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী থানার নিজবন্নি গ্রামের মৃত গোলাম হোসেন ফকিরের ছেলে জানু ফকির (৭০), পাটুরিয়া মানিকগঞ্জের সাহেব আলী (৬৫), কক্সবাজার জেলার বাসিন্দা হোসেন আলী (৬৫)। এ নিয়ে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে ৬ মুসল্লির মৃত্যু হলো। তাদের জানাজা শেষে মরদেহ নিজ নিজ গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

চিকিৎসা সেবা : টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে গতকাল দুপুর ৩টা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫০০ মুসল্লি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ছাড়া ইজতেমাস্থলের পার্শ্ববর্তী ফ্রি-মেডিকেল ক্যাম্প, র‌্যাব, টঙ্গী থানা প্রেস ক্লাব, রোটারেক্ট ক্লাব অব টঙ্গী, হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ, ইবনে সিনাসহ বেশ কয়েকটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ করেছে।

মোবাইল চার্জ ২০ টাকা : ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের জন্য মোবাইল চার্জের একাধিক দোকান খোলা হয়েছে। এতে ২০ টাকায় মোবাইল চার্জ করা যাচ্ছে। এক দোকান মালিক রঞ্জু সরকার বলেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকে মুন্নু মাঠে মোবাইল চার্জের দোকান দিয়েছি। এ পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার টাকা আয় করেছি।

পকেটমার ও ছিনতাইকারী গ্রেফতার : টঙ্গী মডেল থানা পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা গতকাল ইজতেমা মাঠ ও এর আশপাশ থেকে ১৮ জন পকেটমার ও ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে। আজ তাদের গাজীপুর আদালতে পাঠানো হবে। এ ছাড়া জুমার নামাজ আদায় করার সময় এবং নামাজ শেষে বাড়ি ফিরতে গিয়ে পকেটমারের হাতে মুসল্লিদের কমপক্ষে ২০টি মোবাইল চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আইন প্র্রয়োগকারী সংস্থার হাতে ৪ জন পকেটমার গ্রেফতার হয়েছে।

অজুু ও গোসলের পানি বিক্রি : স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে মুসল্লিদের অজুুর পানি ৫ টাকা, গোসলের পানি ১০ টাকা এবং নামাজ পড়ার প্লাস্টিকের কাগজ ১০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

যানজট : গতকাল জুমার নামাজ পড়ার জন্য কয়েক লাখ মুসল্লি সমবেত হন ইজতেমা মাঠে। এ কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, কালিগঞ্জ সড়ক ও আশুলিয়া-সাভার সড়কে প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বাস, মিনিবাস, ট্রাক, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন এ সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা পড়ে থাকে। কয়েকটি সড়ক প্রায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকে। ফলে ইজতেমায় আসা লাখ লাখ মুসল্লি এ সময় হেঁটে ইজতেমাস্থলে আসেন। জুমার নামাজ শেষে নিজ নিজ গন্তব্যে যার যার মতো চলে যান। তীব্র যানজটের কারণে অনেক মুসল্লিকে অহেতুক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এ রুটে চলাচলকারী যানবাহনগুলো মুসল্লিদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সর্বশেষ খবর