শনিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ছুটির দিনে জমজমাট বাণিজ্য মেলা

জয়শ্রী ভাদুরী

ছুটির দিনে জমজমাট বাণিজ্য মেলা

মৃদু বাতাস আর মিষ্টি রোদ গায়ে মেখে সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটছেন নগরবাসী। পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের হাতেই রয়েছে কেনাকাটার আলাদা তালিকা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে মানুষের ভিড়। গতকাল ছুটির দিনে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা প্রাঙ্গণের দৃশ্য ছিল এমনই।

দুপুর ১২টার দিকে মেলার প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে ১৫-২০ মিনিটে সরাসরি ছবি আঁকা হয় এমন একটি লেখা। এগিয়ে যেতেই দেখা যায়, বিভিন্ন বয়সের মানুষ স্থির হয়ে বসে অপলক তাকিয়ে আছে সামনের দিকে আর চিত্রকর নিখুঁত তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলছেন অবিকল মুখশ্রী। মেলায় এসে ছবি আঁকার অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাইলে চিত্রকর আতিক জানান, ‘পাঁচ বছর ধরে আমি মেলায় এসে ছবি আঁকছি। সারা বছর ধরে যে পরিমাণ ছবি আঁকার ডাক পাই তার চাইতে এক শুক্রবারেই বেশি ছবি আঁকা হয়। আর লাভটাও থাকে অনেক বেশি। প্রতিটি ছবি ৩০০ টাকা করে নেই। সরেজমিন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন রকমের স্টলে সুসজ্জিত মেলা কেন্দ্র। শীতের আঁচ থাকায় মেলায় কাশ্মীরি শাল আর ছেলেদের মোদি কোর্ট ও ব্লেজারের দোকানে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। মেয়েদের সিঙ্গেল হালকা ডিজাইনের শালগুলো মেলায় ২০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে আর বেশি নকশা এবং ডবল শালগুলো ৬০০ টাকা থেকে শুরু করে কাপড়ের মান এবং নকশার ভিন্নতায় রয়েছে বিভিন্ন দামের। মেলায় কেনাকাটা করতে আসা গুলিস্তানের বাসিন্দা মেহেরুন্নেসা বলেন, ‘শালের শো-রুমে যে দামে কিনে থাকি মেলায় তার চেয়ে দাম কিছুটা কম। আর অনেক স্টল থাকায় ঘুরে ঘুরে কিনতে পারছি পছন্দ মতো জিনিস। ক্রেতার পাশাপাশি কথা হয় কাশ্মীরি শাল ঘরের বিক্রেতা হৃদয়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, মেলায় বিক্রির পরিমাণ বেশি থাকায় দাম একটু কম রাখলেও আমাদের পুষিয়ে যায়। আর অন্য দোকানগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকতে আমরা চেষ্টা করছি খুব কম দামে নিজেদের পণ্য ক্রেতার হাতে পৌঁছে দিতে। মেলায় ছেলেদের পোশাকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে মোদি কোর্ট এবং ব্লেজার। টাচ পয়েন্টের বিক্রেতা মুন্না বলেন, আমরা ১২০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত কোর্টগুলো বিক্রি করছি আর কাপড়ের মানের ওপর নির্ভর করে ১৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ব্লেজার রয়েছে বিভিন্ন দামের। আর মেলার কারণে ক্রেতাদের জন্য পণ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন উপহারের ব্যবস্থা করেছে বিক্রিতা প্রতিষ্ঠানগুলো। মেলায় শিশুদের স্টলগুলোতে হৈ-হুল্লোড় ছিল সবচেয়ে বেশি। বিভিন্ন রকমের খেলনায় আগ্রহ দেখা যায় শিশুদের। কেউ কিনছে রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি কেউবা প্লেন আর পুতুল-পাণ্ডা এগুলো তো রয়েছেই। এ ছাড়াও প্রযুক্তির সমন্বয়ে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান শিশুদের মনোরঞ্জনে নিয়ে এসেছে বিভিন্ন ফিচারসমৃদ্ধ খেলনা। এবারের মেলায় রিমোট কন্ট্রোল ছোট রোবটগুলোর ওপর শিশুদের ঝোঁক বেশি বলে জানান বিক্রেতারা। শুধু খেলনায় নয় শিশুদের জন্য আলাদা খেলার ব্যবস্থাও করেছে মেলার আয়োজকরা। সেখানে ট্রয় ট্রেন থেকে শুরু করে রয়েছে নাগরদোলা, নৌকা আরো বিভিন্ন রকমের খেলার সরঞ্জাম। শুধু পণ্য নয় ভিন্ন রকমের কিছু স্টলের দেখা মিলে মেলা প্রাঙ্গণে। ‘উত্তরণ’ নামে জাবিদুল ইসলাম রুবেল একটি স্টল নিয়েছেন। সেখানে ছোট ছোট চৌবাচ্চার মধ্যে দেখা মেলে বিভিন্ন সাইজের কাকড়ার। মেলায় জ্যান্ত কাকড়া নিয়ে স্টল দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কাকড়া প্রদর্শনী বা বিক্রির জন্য নিয়ে আসিনি। আমি এই কাকড়াগুলো চাষ করেছি বক্সের মধ্যে। যা এর আগে বাংলাদেশে কেউ করেনি। দেশের শিক্ষিত বেকার যুবকরা যদি এ বিষয়ে ধারণা পায় এবং আগ্রহী হয় তাহলে বেকারত্ব দূর হওয়ার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করবে দেশ। মেলায় বিদেশি পণ্যের পাশাপাশি দেশি পণ্যও জাঁকিয়ে বসেছে নিজেদের প্রসার। দেশি পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের প্যাভিলিয়নে দেখা যায়, মেলা উপলক্ষে তাদের সব পণ্যেই দিয়েছে বড় রকমের ছাড় আর পণ্য কিনলেই ক্রেতাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় উপহার। মেলায় কেনাকাটা করতে আসা পল্লবীর বাসিন্দা নিলুফার বেগম বলেন, আমাদের দেশি প্রতিষ্ঠানের পণ্য এখন অনেক বেশি মানসম্মত। বিভিন্ন রকমের পণ্য একসঙ্গে পাওয়া যাওয়ায় সবাই প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো মেলা থেকেই কিনে নিচ্ছি।

সর্বশেষ খবর