শনিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

খেলাপির বিরুদ্ধে ঝটিকা অভিযান

—— এমডি, রূপালী ব্যাংক

আলী রিয়াজ

খেলাপির বিরুদ্ধে ঝটিকা অভিযান

আতাউর রহমান প্রধান

রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান বলেছেন, খেলাপি ঋণ সংস্কৃতি থেকে বের করে আনতে হবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে। এ মুহূর্তে এটা বড় একটি চ্যালেঞ্জ। খেলাপি ঋণ আদায় করতে না পারলে ব্যাংক খাত আগাবে না। এ জন্য রূপালী ব্যাংক সব খেলাপি ঋণ আদায় করতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ঝটিকা অভিযানে নেমেছি আমরা।

বর্তমানে প্রযুক্তির কল্যাণে ব্যাংকের গ্রাহকসেবা মানুষের দরজায় পৌঁছে গেছে। ভালো উদ্যোক্তাদের খুঁজে বের করে আমরা ঋণ দেব। রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি। মতিঝিলে রূপালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সাক্ষাৎকারে আতাউর রহমান বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ ভালো উদ্যোক্তা খুঁজে পাওয়া ও খেলাপি ঋণ আদায় করা। খেলাপি ঋণ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর জন্য ক্যান্সারের মতো। যা তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে। অতীতে ব্যাংকগুলো ভালো উদ্যোক্তা খুঁজে বের করতে পারেনি। যার জন্য খেলাপির পরিমাণও বেড়েছে। কিছু ভালো উদ্যোক্তাও বিভিন্ন কারণে সময়মতো ঋণ ফেরত দিতে পারেননি। এ জন্য কিছুটা খেলাপি বেড়েছে। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে এখন। তিনি বলেন, আমরা খেলাপি ঋণ আদায় করতে সব শাখায় বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছি। কেন্দ্রীয়ভাবে শীর্ষ খেলাপিদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। অনেকে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ৩৭ জন খেলাপিকে উকিল নোটিস দিয়েছি। অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। বিশিষ্ট এই ব্যাংকার বলেন, ব্যাংকগুলোর হাতে প্রচুর পরিমাণ বিনিয়োগযোগ্য তারল্য রয়েছে। এই অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। বিনিয়োগ না হলে ব্যাংকের লাভ নেই। সে জন্য ভালো উদ্যোক্তা খুুঁজে বের করা ব্যাংকের দায়িত্ব। ব্যাংকে অনেক সময় ভালো উদ্যোক্তারা আসতে চান না। অনেকে আমলাতান্ত্রিক সমস্যার কথা বলেন। আধুনিক ব্যাংকিং সেবায় গ্রাহকদের হয়রানি না করে ঋণ দেওয়ার সংস্কৃতি চালু করতে হবে। রূপালী ব্যাংক সারা দেশের প্রায় সাড়ে পাঁচশ শাখার ম্যানেজারদের নির্দেশ দিয়েছে উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে। এখন উদ্যোক্তা বাছাই করতে ব্যাংকারদের দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। আমাদের সব শাখায় বলা হয়েছে, শুধু ডিপোজিট সংগ্রহ করলেই হবে না, ঋণ দিতে হবে। আতাউর রহমান বলেন, রূপালী ব্যাংক ২০১৬ সালে ৪০০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায় করেছে। এর মধ্যে শীর্ষ ২০ খেলাপির কাছ থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে। এই অর্থ বিনিয়োগে আমরা এসএমই, ক্ষুদ্র শিল্পকে গুরুত্ব দিয়েছি। এসএমই খাতে বিনিয়োগ দেশের অর্থনীতির চেহারা পাল্টে দেবে বলে আমি মনে করি। সোনালী ব্যাংক থেকে আসা এই ব্যাংকার বলেন, ঋণের আবেদন এখন থেকে অনলাইনে করা যাবে। অনলাইনে আবেদন করার পর গ্রাহকের কাছে যাবেন ব্যাংকার। যিনি আবেদন করছেন তাকে এক সপ্তাহের মধ্যে রিপ্লাই দেওয়া হবে। ব্যাংকারদের কাছে হয়রানি হওয়ার সুযোগ থাকবে না। ব্যাংক এখন পরিপূর্ণভাবে প্রযুক্তির দিকে যাচ্ছে। অ্যাকাউন্ট খুলতেও কোনো কাগজপত্র জমা দিতে হবে না। আমরা সেই উদ্যোগ নিচ্ছি। রূপালী ব্যাংকের বর্তমান সমস্যা কী জানতে চাইলে তিনি বলেন,  রূপালী ব্যাংকে একটি জেনারেশন গ্যাপ আছে। প্রায় এক যুগ ধরে এই ব্যাংকে কোনো নিয়োগ হয়নি। এরপরে ২০১২ সালে নিয়োগ শুরু হয়। এই জেনারেশন গ্যাপের কারণে অনলাইন, প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং গড়তে আমাদের কিছু সমস্যা হয়েছে। তবে এটা খুব দ্রুত কেটে যাবে। আমি যোগদান করার পর ব্যাংকের সার্বিক কার্যক্রমে আমূল পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছি। আমরা সিউর ক্যাশ মোবাইল ব্যাংকিং চালু করছি। আগামী মার্চের মধ্যে সম্পূর্ণ অটোমেশন প্রক্রিয়ায় যাবে ব্যাংক।

সর্বশেষ খবর