শনিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

শীতের দাপট উত্তরাঞ্চলে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর ও দিনাজপুর প্রতিনিধি

তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ায় শীতে কাঁপছে উত্তরাঞ্চলের মানুষ। ঘন কুয়াশার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হিমেল হাওয়ার কারণে বেকায়দায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ। নিম্ন আয়ের ও দরিদ্র মানুষের ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে এসেছে ৬ ডিগ্রি  সেলসিয়াসে। রংপুর আবহাওয়া অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ আলী বলেন, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রিতে নেমে আসায় এবং ঘন কুয়াশার সঙ্গে হিমেল হাওয়া বয়ে চলায় রংপুর বিভাগের আট জেলায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। এদিকে শীতের কারণে অ্যাজমা, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগের প্রকোপ বাড়ছে। এসব রোগ নিয়ে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. হিমাংশু লাল রায় জানিয়েছেন। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অজয় কুমার রায় বলেন, গত বুধবার থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শীতজনিত রোগে আক্রান্ত ৫৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে ২২ জন শিশু ও ২০ জন বৃদ্ধ। ভর্তির পর কারও অবস্থার অবনতি হয়নি। শীতে কাবু হয়ে পড়েছেন নগরীর ভাসমান মানুষ ও তিস্তাপাড়ের দরিদ্র বাসিন্দারা। শীতবস্ত্রের অভাবে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন তারা। রংপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ফরিদুল হক জানান, জেলার আট উপজেলায় ছয় হাজার ৫০০টি কম্বল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তারা বিতরণও শুরু করেছেন। এ ছাড়া আরও ৫০ হাজার কম্বল চেয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে যানবাহন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। রাজধানী থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন দুই থেকে তিন ঘণ্টা বিলম্বে রংপুরে এসেছে। রংপুর রেলওয়ে স্টেশনের তত্ত্বাবধায়ক শেখ আবদুল জব্বার বলেন, রংপুর এক্সপ্রেস সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রংপুর স্টেশনে আসার কথা। সেটা আসছে রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০টায়। ঘন কুয়াশার কারণে হেডলাইটের আলোতে রেললাইন দেখা যাচ্ছে না, তাই ধীরগতিতে ট্রেন চালাতে হচ্ছে। অন্যদিকে ঢাকা-রংপুর চলাচলকারী বাসগুলোও বিলম্বে আসছে। আগমনী এক্সপ্রেসের আবদুস শহীদ বলেন, বগুড়ার পর থেকে কুয়াশা বেশি মাত্রায় ঘন। হেডলাইটের আলোতেও সামনের রাস্তা দেখা যাচ্ছে না। ফলে গতি কমিয়ে ঘণ্টায় ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটারে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। ঘন কুয়াশা এবং হিমেল হাওয়ার কারণে আলু খেত ও বোরো বীজতলা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। কুয়াশা ও তীব্র শীতের মধ্যে আলুর চারায় নাভী পচা রোগ দেখা দিয়েছে। বোরো বীজতলাও ক্ষতির মুখে পড়েছে। এ মৌসুমে পৌষ মাসের শুরুতে তেমন শীত না থাকলেও শেষে এর তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কনকনে শীত জেঁকে বসেছে। সকাল ও রাতে হিমেল হাওয়া আর কুয়াশায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে এ অঞ্চলের ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ। বীজতলা নিয়ে চিন্তিত কৃষক। শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। এর প্রভাবেই কাঁপছে দিনাজপুরবাসী। দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ও রাতে কুয়াশা আর হাড় কাঁপানো কনকনে শীতে আগুন জ্বালিয়েও নিস্তার পাচ্ছেন না শীতে কাবু মানুষগুলো। সকালে মহাসড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যান চলাচল করেছে। শনিবার শুরু হচ্ছে মাঘ মাস।

এ কনকনে শীত আরও কয়েক দিন থাকবে বলে আবহাওয়া অফিস জানায়।

দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা গোলাম রব্বানী জানান, দিনাজপুরের ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ প্রবাহিত হওয়ায় ঠাণ্ডার পরিমাণ বেড়ে গেছে। শুক্রবার সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। তাপমাত্রার সঙ্গে পশ্চিমা বাতাস থাকায় কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে।

বিরূপ আবহাওয়ার কারণে কষ্টে আছে খেটে খাওয়া মানুষগুলো। রাতে শহরে লোকজনের সংখ্যা একেবারে কম। খুব দরকারি ছাড়া কেউ যেন বের হতে চান না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর