রবিবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

২০ রকমের চায়ে মুগ্ধতা

বসুন্ধরায় পর্দা নামল মেলার

নিজস্ব প্রতিবেদক

টেবিলে পাশাপাশি কাপে রাখা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের চা। কোনোটি থেকে আসছে মনমাতানো সুগন্ধ আবার কোনোটি পান করে চা-প্রেমীরা নিচ্ছেন লেবুর স্বাদ। এদিকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা চিন্তা করে অনেকেই হাতে তুলে নিচ্ছেন গ্রিন টি। এ ছাড়া সাত কড়া, অর্থডক্স বা ব্ল্যাক টিও বাদ পড়ছে না দর্শনার্থীদের পছন্দের তালিকা থেকে। দেশে চা উত্পাদনের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আয়োজিত চা মেলার শেষ দিনের দৃশ্য ছিল এমনই। গতকাল ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) আয়োজিত এ মেলার সমাপনীতে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। মেলায় চা প্রদর্শনীর পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে গান আর নাচের তালে বিমোহিত হন দর্শনার্থীরা। মেলার আয়োজক বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, প্রথমবারের মতো আয়োজিত এ মেলায় ১৬টি স্টলে ৩০টি প্যাভিলিয়নে দেশের স্বনামধন্য চা উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অংশগ্রহণ করেছে। মেলায় প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে বাজারে আসছে নতুন চা উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘কসমো টি’। এ প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক খুন্দ্কার মুহাম্মদ সাদমান আজমল বলেন, ‘এবারই প্রথম চা প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। আমাদের এ পণ্যটি মানুষের মধ্যে পরিচিত করার জন্য এ মেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’ বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ১৯৫৭ সালে চা গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ২০টি চায়ের জাত আবিষ্কার করা হয়েছে। সম্প্রতি অবমুক্ত করা হয়েছে বিটি ১৯ ও বিটি ২০ জাতের চারা। বিভিন্ন জাতের চায়ের রয়েছে বিভিন্ন স্বাদ। যেমন বিটি ২ ও বিটি ১৯ জাতের চা থেকে আসবে সুন্দর মিষ্টি গন্ধ, যা দার্জিলিং টি নামে বিশ্বে পরিচিত। এই চা বাংলাদেশে উত্পাদিত হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। এ ছাড়া কাপ কোয়ালিটি অর্থাত্ কড়া লিকারের চায়ের জাতের মধ্যে রয়েছে বিটি ৪, ৫, ৬ ও ২০। সবচেয়ে দামি জাতের চা হচ্ছে হোয়াইট টি, যা ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যরা পান করে থাকেন। বর্তমানে দেশে এই চা-ও উত্পাদিত হচ্ছে। এটি প্রতি কেজি পাঁচ-ছয় হাজার টাকায় বিক্রি হয়। নতুন প্রযুক্তি ও পদ্ধতি ব্যবহার করায় চা উত্পাদন এখন আগের তুলনায় দ্বিগুণ। দেশে প্রথমবারের মতো ইরিগেশন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে চা উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠান হালদা ভ্যালি চা কোম্পানি। এর স্বত্বাধিকারী নাদের খান বলেন, ‘২০০৩ সালে প্রথমে যখন চা ব্যবসা শুরু করি তখন ফলন হতো অনেক কম। অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমি ইরিগেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে যে পরিমাণ ফলন পাচ্ছি তা অবিশ্বাস্য। আর আমাদের বাগানে উত্পাদিত চা আমরা প্রথমবারের মতো চীনে রপ্তানি করেছি।’ বাংলাদেশ চা বোর্ডের পরিকল্পনা বিভাগের ডেপুটি পরিচালক মুনির আহমদ বলেন, চা শিল্পের উন্নয়নে যেভাবে কার্যক্রম চলছে তা দৃশ্যমান। ২০১৫ সালে প্রতি মিটারে উত্পাদন ছিল ৬৭ দশমিক ৩৮ কেজি, আমদানি ছিল ১১ দশমিক ৪ কেজি আর রপ্তানি ছিল শূন্য দশমিক ৫৫ কেজি। সে তুলনায় ২০১৬ সালে প্রতি মিটারে উন্নয়ন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ দশমিক শূন্য ৫ কেজি, আমদানি কমে এসেছে ৭ দশমিক ৭০ কেজি আর রপ্তানি হয়েছে শূন্য দশমিক ৪৭ কেজি। নিজেদের দেশের চাহিদা মেটাতে চট্টগ্রাম-সিলেটের চা বাগানের পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলে গড়ে উঠছে আরও একটি চা উত্পাদনক্ষেত্র। চা চাষের সার্বিক অবস্থা বিষয়ে বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের চা চাষে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন নিয়ে আসতে আমরা পুরো বিষয়টিকে তিনটি প্রজেক্টে ভাগ করে কাজ করছি। প্রজেক্টগুলোর মধ্যে আছে দেশের উত্তরাঞ্চলে চা-বাগান সম্প্রসারণ এবং চাষিদের সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া; চট্টগ্রাম-সিলেটের পাহাড়ে যে চা-বাগানগুলো আছে সেগুলোর উন্নয়নে বাধাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করা; আর এই বৃহত্ শিল্পের প্রাণ শ্রমিকদের সার্বিক উন্নয়নে নেওয়া হয়েছে আরেকটি বৃহত্ পরিকল্পনা। এ পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে চলেছি। আর এর ফলে এগিয়ে যাচ্ছে দেশের চা শিল্প।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর