সোমবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

হকার উচ্ছেদে গুলিস্তানে ফের সংঘর্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

হকার উচ্ছেদে গুলিস্তানে ফের সংঘর্ষ

গুলিস্তানের ফুটপাথ থেকে গতকাল সিটি করপোরেশন হকার উচ্ছেদ করতে গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে —বাংলাদেশ প্রতিদিন

হকারদের ফুটপাথ থেকে উচ্ছেদ করতে অভিযানে নেমেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। গতকাল গুলিস্তানে উচ্ছেদ অভিযানে গেলে ডিএসসিসির সঙ্গে হকারদের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় উভয় পক্ষে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে ডিএসসিসি সিদ্ধান্তে অটুট থাকায় হকাররা ফুটপাথ থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়। এতে ওই এলাকার যানজট শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। পথচারীদের মধ্যে ফিরে আসে স্বস্তি। রাজধানীকে  যানজটমুক্ত করতে অফিস সময়ে ফুটপাথে হকার বসতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে একচুলও নড়বে না ডিএসসিসি। গতকাল বিকালে নগর ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ১১ জানুয়ারি নগর ভবনে হকার প্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আলাপ করে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা বহাল থাকবে। মেয়র বলেন, সাপ্তাহিক কর্মদিবসে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার আগে কাউকে ফুটপাথ ও সড়ক দখল করে বসতে দেওয়া হবে না। যান চলাচল ও পথচারী চলাচলে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে দেওয়া হবে না। গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন, জিরোপয়েন্ট, বায়তুল মোকাররম এলাকা যানজট মুক্ত রাখতে গতকাল হকার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। ডিএসসিসির উচ্ছেদ অভিযানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খান মোহাম্মদ নাজমুস শোয়েব, দেবাশীষ নাগ ও মামুন সরদার নেতৃত্ব দেন। তারা বলেন, ‘ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকনের নির্দেশে গতকাল ফুটপাথের দোকান উচ্ছেদ অভিযান মতিঝিল থেকে শুরু হয়। মেয়র ঢাকা দক্ষিণকে যানজটমুক্ত ও ফুটপাথ হকারমুক্ত করতে চান। তবে তাদের জন্য প?ুনর্বাসন ব্যবস্থা করারও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। হকারদের জন্য পুনর্বাসন ব্যবস্থা করা এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। তবে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন মেয়র। রাজধানীর দক্ষিণ সিটিতে ফুটপাথ থেকে হকারমুক্ত করার আগ পর্যন্ত এ উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে। উচ্ছেদ অভিযানে এসে অল্প কিছুসংখ্যক হকার ও ফুটপাথে তাদের চৌকি পড়ে থাকতে দেখেছি। তাই আমরা সিটি করপোরেশনের নির্দেশে এগুলোর ওপর উচ্ছেদ অভিযান চালাই। চৌকিগুলো নষ্ট করে দিয়েছি, যেন তারা আর ফুটপাথে বসতে না পারে। এ উচ্ছেদ অভিযানে আমাদের মোট তিনটি টিম কাজ করেছে। উচ্ছেদ অভিযানটি মতিঝিল থেকে শুরু হয়ে দৈনিক বাংলা, গুলিস্তান, গোলাপশাহ মাজার, পল্টন, জিরোপয়েন্ট, বায়তুল মোকাররম পর্যন্ত চলেছে।’ গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, উচ্ছেদ অভিযানের খবর পেয়ে সকালেই হকাররা নিজ দায়িত্বে তাদের মালামাল সরিয়ে নিতে শুরু করেন। সকাল থেকে পুরো এলাকার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে পুলিশের অবস্থান দেখা গেছে। এ ছাড়া পুলিশের জলকামান, কাভার্ড ভ্যান ও সিটি করপোরেশনের নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সও ছিল। উচ্ছেদ অভিযানের সময় হকারদের সঙ্গে ডিএসসিসির ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মতিঝিল সোনালী ব্যাংকের সামনে হৃদয় নামে এক হকার বলেন, ‘মেয়রের কথায় তারা দোকান উঠিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু দোকান বসাতে যে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে, তখন কাস্টমার থাকে না। সংসার নিয়ে এখন পথে বসতে হবে।’ তবে চিরচেনা মতিঝিলের চিত্র গতকাল ভিন্নরূপ ধারণ করে। ফুটপাথমুক্ত ও যানজটহীন মতিঝিলের চেহারাই পাল্টে যায়। যাত্রীদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে ফুটপাথ দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা যায়। এ সময় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জাকির বলেন, ‘আগে ফুটপাথ দিয়ে হাঁটা অসম্ভব ও অস্বস্তিকর ছিল। হকারমুক্ত থাকায় এখন খুব ভালো লাগছে।’ জিরোপয়েন্টের এক টাই-স্যুট ব্যবসায়ী বলেন, ‘মেয়রের নির্ধারিত সময়ে দোকান খুললে তো মালামাল বিক্রি হবে না। এখানকার ক্রেতাদের প্রায় সবাই চাকরিজীবী। তারা না থাকলে কার কাছে মালামাল বিক্রি করব। পরিবার-পরিজন নিয়ে পথে বসা ছাড়া উপায় নাই।’ তবে ঢাকা ট্রেড সেন্টারের সামনে ফুটপাথের বেশ কিছু দোকান বহাল তবিয়তে রয়েছে। জানতে চাইলে এক জুতার দোকানদার বলেন, ‘আমরা উচ্ছেদের বিষয় কিছু জানি না। এ ছাড়া আমরা তো পজেশন কিনে এখানে বসেছি।’ বায়তুল মোকাররমের সামনে কামরুল নামে এক ক্রেতা জানালেন, তিনি একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। যে টাকা বেতন পান তা দিয়ে সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হয়। ভালো মার্কেটে গিয়ে পরিবারের জন্য কাপড়চোপড় কেনা অনেকটা স্বপ্নের মতো। ফলে ফুটপাথ থেকেই বেশির ভাগ মাল কিনতে হয়। ফুটপাথ উচ্ছেদের ফলে তার মতো নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের কষ্ট বাড়বে। গুলিস্তান, মতিঝিল ও পল্টনের বেশির ভাগ ক্রেতাই চাকরিজীবী। অফিস ছুটির পর যে যার মতো বাসায় চলে যাবেন। ফুটপাথের দোকান থেকে কিছু কিনতে হলে তাদের অপেক্ষার মাত্রা বাড়বে। এর আগে ১১ জানুয়ারি নগর ভবনে হলিডে মার্কেট চালু ও হকার সমস্যা নিয়ে হকার নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন মতিঝিল ও গুলিস্তান এলাকা হকারমুক্ত করার ঘোষণা দেন। ঘোষণা অনুযায়ী রবিবার যারা ফুটপাথ ছাড়েননি গতকাল তাদের সরাতে অভিযান চালানো হয়।

 

সর্বশেষ খবর