সোমবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

স্বাভাবিক জীবনের অপেক্ষায় বৃক্ষমানব

মাহবুব মমতাজী

স্বাভাবিক জীবনের অপেক্ষায় বৃক্ষমানব

প্রায় এক বছর হলো তিনি হাসপাতালের কেবিনে ভর্তি আছেন। এখন স্বাভাবিক জীবনে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন খুলনার আবুল বাশার বাজনদার, যিনি ‘বৃক্ষমানব’ নামে পরিচিতি পেয়েছেন। সর্বশেষ ৩১ ডিসেম্বর তার চার হাত-পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। দুই হাতে গাছের শাখা-প্রশাখার মতো আঁচিলের ভার থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে আর মাসখানেক অপেক্ষা করতে হবে তাকে। এ জন্য ছোট তিন থেকে চারটি অস্ত্রোপচারের পরই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন বাজনদার। স্বাভাবিক জীবনে ফেরার স্বপ্ন ছুঁতে পারবেন শিগগিরই। এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাজনদারের দুই হাতে পাঁচবার করে ১০টি আর দুই পায়ে দুইবার করে চারটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। সর্বশেষ অস্ত্রোপচারের পর আজও (শনিবার) তার ড্রেসিং করা হয়েছে। আমরা আশা করছি এক মাসের মধ্যে আবুল পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন।’ ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘তার প্রধান অস্ত্রোপচারটি হয়ে গেছে। এখন শুধু আঙ্গুল সুন্দর করার কাজটি করা হচ্ছে। বাজনদার এখন ৯৫ শতাংশ সুস্থ। যে মানুষটি আগে খেতে পারত না, নিজের বাচ্চাকে কোলে নিতে পারত না, সে এখন তা করতে পারছে।’ চিকিৎসকদের মতে, বিরল এ রোগটিকে ‘এপিডারমোডাইসপ্লাসিয়া ভেরাসিফরমিস’ বলা হয়। বিশ্বে তা আবার ট্রি-ম্যান সিনড্রম নামেও পরিচিত। এ রোগে আক্রান্ত বাজনদার বাংলাদেশের প্রথম রোগী। আর বিশ্বে তৃতীয়। এর আগে ইন্দোনেশিয়ায় দুই ব্যক্তি এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। গত বছর ৩০ জানুয়ারি এ রোগে আক্রান্ত হয়ে দুই হাত ও পায়ে প্রায় ১০ কেজি ওজনের আঁচিল নিয়ে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হন বাজনদার। ২৫ বছর বয়সী এই যুবক পুরোপুরি স্বাভাবিক হলে এটি হবে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় বড় মাইলফলক। জানা গেছে, এ পর্যন্ত সরকারিভাবেই চলছে তার সব ধরনের চিকিৎসা। ১৫ বার ছোট-বড় অস্ত্রোপচারের পর তার হাত-পায়ের আঁচিলগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে। সদা হাস্যোজ্জ্বল বাজনদার জানান, প্রায় এক বছর ধরে তিনি নিজের বাড়ি যেতে পারছেন না। অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছেন তিনি বাড়ি ফেরার জন্য। শৈশবের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফেরার। তিনি বলেন, ‘আমি যখন এখানে এসেছিলাম তখন কেমন ছিলাম আর এখন কত পরিবর্তন হয়েছে। মনে হয় দুই হাত ও পায়ে আর কিছুই নাই।’ তিনি জানান, কয়েকবার তার স্ত্রী-সন্তান বাড়ি গিয়ে ঘুরে এসেছেন। কিন্তু তিনি একবারের জন্যও হাসপাতাল থেকে বাড়ি যাওয়ার ছুটি পাননি। এখনো তিনি ঠিকমতো ওঠা-বসা করতে পারেন না। তার স্ত্রী হালিমা বলেন, ‘ওর জীবন এভাবে ফিরে পাব কোনো দিন ভাবতে পারিনি। সত্যি এত ভালো লাগার কথা প্রকাশ করতে পারব না।’

 

সর্বশেষ খবর