মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

হকার উচ্ছেদ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া

ফুটপাথ হকারমুক্ত করতে কঠোর অবস্থানে মেয়র

নিজস্ব প্রতিবেদক

হকার উচ্ছেদ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া

হকার ও অবৈধ দোকানপাটমুক্ত ফুটপাথ গড়তে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। তিনি হকার প্রতিনিধিদের বলেছেন, দিনের বেলায় ফুটপাথে কোনো দোকান দেওয়া চলবে না। নগরীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে যা যা করা দরকার, তাই করা হবে। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও কঠোর ভূমিকা পালন করবে।

গতকাল নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিক ও হকারদের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যৌথসভায় তিনি এ কথা বলেন। মেয়র উল্লেখ করেন, শক্তভাবে আইনের প্রয়োগ ঘটানো হবে। সিটি করপোরেশন তার গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে হকাররা যদি কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে— তাহলে হকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়াটি পুনর্বিবেচনা করা হবে। ফলে তা ব্যাহতও হতে পারে।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পূর্ব ঘোষণানুযায়ী পুরানা পল্টন থেকে মিছিল নিয়ে নগর ভবন ঘেরাও করতে যায় হকাররা। মিছিলটি প্রেস ক্লাব ও শিক্ষাভবন হয়ে বঙ্গবাজার মোড়ে এলে আটকে দেয় পুলিশ। এ সময় সেখানেই বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়নের ব্যানারে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন হকাররা। সেখান থেকে তাদের ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সোয়া ১১টার দিকে ১০ দফা দাবিসহ একটি স্মারকলিপি নিয়ে নগর ভবনের দিকে রওনা হন। প্রতিনিধি দলটি ভবনের ফটকে পৌঁছালে তাদের মধ্য থেকে পাঁচজনকে নিয়ে মেয়রের কার্যালয়ে যান প্রটোকল অফিসার হাবিবুল ইসলাম সুমন। বেলা সোয়া ১২টার দিকে হকারদের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন মেয়র সাঈদ খোকন। এ সময় হকারদের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়নের আহ্বায়ক আবদুল হাশেম কবির, যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম বাবুল, উপদেষ্টা সেকেন্দার হায়াত, মুর্শিকুল ইসলাম শিমুল ও মঞ্জুর মঈন। তাদের ১০ দফা দাবির মধ্যে ছিল— পুনর্বাসন ছাড়া হকার উচ্ছেদ চলবে না, হকারদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চাই, চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে, হকারদের ওপর দমনপীড়ন নির্যাতন বন্ধ করতে হবে, প্রকৃত হকারদের তালিকাভুক্তিকরণসহ আইডি কার্ড দিতে হবে, দখলকৃত সরকারি জায়গা দখলমুক্ত করে হকারদের পুনর্বাসন করতে হবে, এ জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে, জাতীয় বাজেটে হকারদের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে এবং সিটি করপোরেশনের আওতায় হকারদের ফুটপাথে বসার ব্যবস্থা করতে হবে ইত্যাদি।

হকারদের দাবিগুলো শোনার পর সাঈদ খোকন বলেন, হকার যানজটের অন্যতম কারণ। আমরা গুলিস্তান এলাকার ২ হাজার ৫০৬ জন হকারকে রেজিস্টার্ড করতে পেরেছি। এই শহরের ৬০ ভাগ মানুষ পায়ে হেঁটে চলেন। যারা এই নগরীর ফুটপাথ ব্যবহার করে থাকেন। হকার উচ্ছেদ ধনীদের জন্য নয়, সাধারণ মানুষদের নির্বিঘ্নে চলার জন্য করা হচ্ছে। ফুটপাথে হকাররা সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত অবধি দোকান করতে পারবেন। এর জন্য প্রয়োজনে তাদের বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। কিন্তু উচ্ছেদে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সিটি করপোরেশন মেনে নেবে না।

উচ্ছেদ অভিযান, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া : গতকাল বেলা ১১টা থেকে দিনের বেলায় ফুটপাথে হকার বসা বন্ধ করতে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীর মতিঝিল, গুলিস্তান ও বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এলাকার অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন সিটি করপোরেশনের তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এ সময় বিক্ষুব্ধ হকাররা মিছিলের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। যুবলীগের একটি কার্যালয় ভাঙতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গোলাপ শাহ মাজারের সামনে থেকে শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান। এ সময় গুলিস্তান মার্কেট, গুলিস্তান ট্রেড সেন্টার, ঢাকা ট্রেড সেন্টার, বঙ্গবন্ধু পাতাল মার্কেট, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ফুটপাথের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এ ছাড়া ফুটপাথে গড়ে তোলা কয়েকটি পাকা স্থাপনাও গুঁড়িয়ে দেয় সিটি করপোরেশনের বুলডোজার। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অভিযানের সময় উপস্থিত ছিল সাত প্লাটুন পুলিশ। সিটি করপোরেশনের বুলডোজার, পে-লোডারসহ ১৫টি বাহন উচ্ছেদ কার্যক্রমে অংশ নেয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হকাররা গুলিস্তান সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেটের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ ধাওয়া দিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে গুলিস্তান মার্কেট এবং গুলিস্তান প্লাজা মার্কেটের সামনের ফুটপাথে গড়ে তোলা ২০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের গুলিস্তান ইউনিটের কার্যালয় ভাঙতে গেলে সিটি করপোরেশনের লোকদের বাধা দেন যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। সিটি করপোরেশন ও মেয়র সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন তারা। পরে বুলডোজার দিয়ে ওই কার্যালয়ের একপাশের বেড়া ভেঙে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খান মোহাম্মদ নাজমুস শোয়েব সাংবাদিকদের বলেন, এ স্থাপনা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ফুটপাথে যুবলীগ কার্যালয় উচ্ছেদে বাধা প্রদান প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, অনেকে রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। রাজনৈতিক নামধারী গুটিকয়েক লোক যদি কোনো ধরনের অবৈধ স্থাপনা করে জনগণের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। জানা গেছে, দুপুর পৌনে ১টায় উচ্ছেদ অভিযানের দুটি গাড়ি বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ হয়ে পল্টন মোড়ে গেলে হকাররা পূর্বাঞ্চল পত্রিকার গলি থেকে পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। হকাররা প্রায় ১০ মিনিটের মতো ইটপাটকেল ছোড়ে। পরে পুলিশ তাদের লাঠিপেটা ও কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

সর্বশেষ খবর