শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

নার্স নিয়োগ পরীক্ষায় তুঘলকি কাণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক

নার্স নিয়োগ পরীক্ষায় তুঘলকি কাণ্ড

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০ নার্স নিয়োগের জন্য লিখিত পরীক্ষায় টাঙ্গাইল জেলার ৭৬ প্রার্থী অস্বাভাবিক বেশি নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাদের গড় নম্বর শতকরা ৮০ থেকে ৯৩ ভাগ পর্যন্ত। এই ৭৬ জনের মধ্যে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলারই ২৩ জন। এ সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার বাসিন্দা। ৩০ ডিসেম্বর নার্স নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে। আজ মৌখিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা। টাঙ্গাইলের প্রার্থীরা লিখিত পরীক্ষায় এত বেশি নম্বর পেয়েছেন যে, অন্যান্য জেলার প্রার্থীরা তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবেন না বলে দায়িত্বশীল কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে। এখন দ্রুত চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করার প্রক্রিয়া চলছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ও ডিনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লিখিত পরীক্ষায় কারসাজি করে বিশেষ এই জেলা ও উপজেলার প্রার্থীদের উত্তীর্ণ করানো হয়েছে। পছন্দের প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আগেই দিয়ে দেওয়া হয়ে থাকতে পারে। প্রাপ্ত  তথ্যে দেখা যায়, লিখিত পরীক্ষায় অস্বাভাবিক বেশি নম্বর পেয়ে টাঙ্গাইল জেলার যেসব প্রার্থী চূড়ান্ত নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন, তারা হলেন— শাহনাজ পারভীন (রোল ১১৩৫), ইফফাত জাহান (রোল ১১৮১), ফারজানা আক্তার (রোল ১৮৯৩), জান্নাতী নূরীন (রোল ৩৫২৩), জিবন নাহার (রোল ৫২৫৫), মো. মাসুদ রানা (রোল ৫৫৭৬), জাফর আলী (রোল ৪২২৭), মো. ফরহাদ হোসেন (রোল ৪৩৯২), মো, সাইফুল ইসলাম (রোল ৪৪১৮), মো, সফিকুল ইসলাম (রোল ৪৪২১), মো. আশরাফ হোসেন (রোল ৪৪২২), জোবাইয়া আক্তার (রোল ৪৪২৩), সানজিদা আক্তার (৪৪২৭), ফাহিমা আক্তার (রোল ৪৫২৯), মর্জিনা আক্তার (রোল ৪৫৭৫), কাকলি বেগম (রোল ৩৭৭৩), মিনা খাতুন (৩৯৩৮), সোহাগ খান (রোল ৩৯৮৭), মো, মোজাম্মেল হক (রোল ১১৭২), ইশরাত জাহান (রোল ১৩৫৮), মো. তুহিন সরকার (রোল ১৩৬৬), ডায়না আক্তার (রোল ১৪০৫), তাহমিনা খাতুন (রোল ১৪৯৫), মো. হারুন অর রশীদ (রোল ১৬০৬), আলিয়া আক্তার (রোল ১৬০৭), মো. নজরুল ইসলাম (রোল ২০৩৬), চায়না আক্তার (রোল ২০৪১), আফরোজা আক্তার (রোল ২০৯৭), নাজনীন নাহার (রোল ২২১৩), নাছরিন আক্তার (রোল ২২৮৬), ফারুক হোসাইন (রোল ২২৯২), মো. নাজমুল হোসেন (রোল ২৪৯৭), রওনক জাহান (রোল ২৫৭১), লিপা মোনালিসা (রোল ২৭২৪), মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান (রোল ২৭২৭), জাহানারা (রোল ২৯৭১), শিউলি আহমেদ (রোল ৩০৮০), ফেরদৌস আরা খাতুন (রোল ৩০৯৪), স্বর্ণা আক্তার (রোল ৩৪০০), আকলিমা খাতুন (রোল ৩৫১৬), নাজনীন আক্তার (রোল ৩৫৯৮), মো. আহসান হাবিব (রোল ৩৬১৭), তানভীর আহমেদ (রোল ৪৬৬১), নিলুফার ইয়াসমিন (রোল ৫০৭৩), রিয়া আক্তার (৫০৭৮), আকলিমা আক্তার (রোল ৫২৬৬), মো. খায়রুল ইসলাম (৫৪৪৫), রানু আক্তার (রোল ৫৫১৩), কবিতা আক্তার (রোল ৫৫২৫), শারমিন (রোল ৫৫৪২), মেঘলা সরকার (রোল ৫৬৮২), মো. আরিফুল ইসলাম (রোল ৫৭৩২), মো. জাকির হোসেন (রোল ৫৮১৫), রোমা সুলতানা (রোল ৫৮২৫), রওশন আরা (রোল ৫৯২৪), রাসেল মিয়া (রোল ৫৯৬৮), মিনু খাতুন (রোল ৬৫৪২), মমতাজ খাতুন (রোল ৬৬৬৫), সাব্বির আহমেদ (রোল ৬৭৩২), নার্গিস আক্তার (রোল ৭০৪৭), রোজিনা আক্তার (রোল ৭১৩৩), ফাতেমা আক্তার (রোল ৭২১৪), জেসমিন (রোল ৭২১৫), নার্গিস আফরিন (রোল ৭৩৯১), জবেদা ভূইয়া (রোল ৬১০৮), তাসলিমা আক্তার (রোল ৬১৯১), আনিছা সুলতানা (রোল ৬২১৩), জয়দেব বিশ্বাস (রোল ৬২৯০), তাসমিমা শারমিন (রোল ৬২৯৬), রাহিমা খাতুন (রোল ৬৩০৫), শিরিন আক্তার (রোল ৬৪০৪), জুথিকা রানী দেবনাথ (৬৪৩৩), মো. আমিনুল ইসলাম (রোল ৬৪৫৮), হেলেনা খাতুন (রোল ৬৪৬৬), মৌসুমি আক্তার (রোল ৬৫০৪) এবং হেপী খাতুন (রোল ৬৫১৫)। এর মধ্যে ২৩ জন ঘাটাইল উপজেলার বাসিন্দা। তারা হলেন— শাহনাজ পারভীন, মো. মাসুদ রানা, মো. সফিকুল ইসলাম, মো. আশরাফ হোসেন, জোবাইয়া আক্তার, মিনা খাতুন, মো. মোজাম্মেল হক, ইশরাত জাহান, মো. তুহিন সরকার, আফরোজা আক্তার, নাজনীন নাহার, মো. নাজমুল হোসেন, জাহানারা, আকলিমা খাতুন, মো. আহসান হাবিব, কবিতা আক্তার, শারমিন, মো. আরিফুল ইসলাম, মো. জাকির হোসেন, মিনু খাতুন, মো. আমিনুল ইসলাম, মৌসুমি আক্তার এবং হেপী খাতুন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০ নার্স নিয়োগের জন্য মাস দেড়েক আগে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এ নিয়োগ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে কর্মচারী (গ্রেড ৯-৩) নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদোন্নয়ন সংবিধি এবং কর্মচারী (গ্রেড ২০-১০) নিয়োগ, পদোন্নয়ন ও পদোন্নতি সংবিধি অনুসরণ করা হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২০১৬ সালের ২৫ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ৬১তম সভায় অনুমোদিত এ নিয়োগবিধিতে বলা আছে : সকল পর্যায়ের কর্মচারী (৯-৩ গ্রেডভুক্ত) নিয়োগের জন্য ভাইস চ্যান্সেলরকে সভাপতি এবং রেজিস্ট্রারকে সদস্যসচিব করে আট সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচনী বোর্ড কার্যকরী হবে। এ বোর্ডের সদস্য থাকবেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলরগণ, কোষাধ্যক্ষ, ভাইস চ্যান্সেলর কর্তৃক মনোনীত একজন ডিন, ভাইস চ্যান্সেলর কর্তৃক মনোনীত একজন সিন্ডিকেট সদস্য, সংশ্লিষ্ট অফিসপ্রধান এবং ভাইস চ্যান্সেলর কর্তৃক মনোনীত সংশ্লিষ্ট পদের একজন বিশেষজ্ঞ। বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নিয়োগবিধি অনুযায়ী নির্ধারিত নির্বাচনী বোর্ড একবারের জন্যও বৈঠকে বসেনি। আবার নির্বাচনী বোর্ড ডিনস কমিটি বা অন্য কোনো কমিটিকেও নার্স নিয়োগের দায়িত্ব দেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শীর্ষ ব্যক্তির পছন্দের দুজন অধ্যাপককে দিয়ে নার্স নিয়োগে কারসাজি করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়োগ নিয়ে একাধিক ডিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকার সম্প্রতি ১০ হাজার নার্স নিয়োগের পর বর্তমানে সারা দেশে ৭-৮ হাজারের মতো বেকার নার্স আছেন। আর এককভাবে প্রতি জেলায় গড়ে ১০০ এবং উপজলায় ২৫ জনের মতো বেকার নার্স রয়েছেন। সে হিসাবে অন্য জেলার বাসিন্দাদের বঞ্চিত করে টাঙ্গাইল ও ঘাটাইলের প্রায় সব নার্সকে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে দায়িত্বশীল কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নিয়োগ কমিটির মাধ্যমেই নার্স নিয়োগ করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কর্তৃক সবকিছুর নির্ধারিত প্রক্রিয়া করা আছে। সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে। এখানে অনিয়ম করার কোনো সুযোগ নেই।

সর্বশেষ খবর