মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

গ্রামীণ বিনিয়োগে গুরুত্ব দিতে হবে ব্যাংকগুলোকে

—— এমডি, আইএফআইসি ব্যাংক

আলী রিয়াজ

গ্রামীণ বিনিয়োগে গুরুত্ব দিতে হবে ব্যাংকগুলোকে

শাহ এ সারোয়ার

অর্থনীতির সব প্রবৃদ্ধি এখন ঊর্ধ্বমুখী। বড় বড় প্রকল্পে বিনিয়োগের কারণে দেশে আর্থিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপ্তিও বেড়েছে। ফলে বর্তমানে ব্যাংকগুলোর বৃহৎ আকারে বিনিয়োগের কর্মপরিকল্পনার প্রস্তুতিপর্ব শেষ। এখন বিনিয়োগের চূড়ান্ত সুবর্ণ সময় রয়েছে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতিও অনুকূলে। বিরাট সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এখন বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে গ্রামীণ এলাকায় বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের ব্যাংক গ্রামীণ আর্থিক কর্মকাণ্ডে বড় ভূমিকা রাখছে। দেশের ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পর্কে এমন মত তুলে ধরে বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ এ সারোয়ার।বাংলাদেশের প্রথম প্রজন্মের অন্যতম বেসরকারি এই ব্যাংকের মতিঝিলের প্রধান কার্যালয়ে সাক্ষাৎকারে শাহ এ সারোয়ার বলেন, আইএফআইসি ব্যাংক ৪০ বছর পার করেছে। এই সময়ে দেশে ভালো কিছু উদ্যোক্তা তৈরি করেছে। বিশেষ করে গার্মেন্ট খাতে প্রায় পাঁচ শতাংশ অবদান আইএফআইসি ব্যাংকের। এখন ইনক্লুসিভ ব্যাংকিং কার্যক্রমের দিকে আগাচ্ছি। গ্রাহকদের জন্য তিনটি প্রডাক্ট আনা হয়েছে। এর মধ্যে হোমলোন, আমার অ্যাকাউন্ট, ওয়ান স্টপ সার্ভিস। আমরাই প্রথম সিঙ্গেল ডিজিট হোমলোন সুবিধা নিয়ে এসেছি। এই লোনের প্রতি গ্রাহকদের চাহিদাও অনেক। আমার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে গ্রাহকদের আমানত, ঋণ, চলতি হিসাবের সব সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ওয়ান স্টপ সার্ভিসে গ্রাহকরা সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে পারছেন। একটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বাসায় বসে ঋণের আবেদন, অর্থ ট্রান্সফার, মোবাইল ব্যাংকিং করা সম্ভব হবে। ফলে কোর ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে মানুষের কাছে আরও সুবিধাজনক ব্যাংকিং নিয়ে এসেছি।

তিনি বলেন, আমাদের ব্যাংকে কোনো করপোরেট কালচার বিবেচনায় ঋণ দেওয়া হয় না। ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে সক্ষমতা বিবেচনায় নেওয়া হবে এটা তো স্বাভাবিক। এ ছাড়া গ্রামীণ এলাকায় এখন বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। আমরা ক্ষুদ্র, কৃষি, এসএমই খাতে বৃহৎ আকারে ঋণ দিচ্ছি। এমনকি মাইক্রোফিন্যান্স পদ্ধতিতেও ঋণ দেওয়া হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরেই এটা বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছর আমরা ২০০ কোটি টাকার ওপর ঋণ দিয়েছি এই খাতে। যেটা আগের বছর ছিল ১৭৫ কোটি টাকার নিচে। এখানে প্রায় ১০ থেকে ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। হোম লোনের ক্ষেত্রে আমরা অনেক বড় বিনিয়োগ করেছি। ২০১৪ সালের আগে আমাদের মোট ঋণ ছিল ৩০০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে এটা বেড়ে হয়েছে ১২০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া টার্ম লোন, ইন্ডাস্ট্রি লোনের ক্ষেত্রেও আমরা সমান গুরুত্ব দিয়েছি। ফলে আমাদের মুনাফাও অনেক বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, যে কোনো এলাকায় ঋণ দিতে হলে ওই এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিবেচনায় নিতে হয়। এখন ব্যাংকগুলোর আমানত সংগ্রহ ও বিনিয়োগ ক্ষেত্র সমানভাবে বিবেচনায় নেওয়া কঠিন। ঢাকা, চট্টগ্রামে যে পরিমাণ বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড রয়েছে সেটা দেশের যে কোনো শহরের তুলনায় অনেক বেশি। ফলে বিনিয়োগেও কিছুটা পার্থক্য থাকবে। তবে আমাদের দেশের রাজনীতিবিদ এবং অর্থনীতিবিদরা গ্রামীণ অর্থায়নের বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন।

বিশিষ্ট এই ব্যাংকার বলেন, অভ্যন্তরীণ ব্যবসা পরিকল্পনায় প্রত্যেকের একটি নিজস্ব কৌশল থাকে। একটি প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর ওপর নির্ভর করবে তারা কীভাবে আগাবে। আগে হোক পরে হোক তারা বিভিন্ন পদ্ধতি মেনে ব্যবসায় বিনিয়োগ করে। ব্যাংকগুলোর মধ্যেও এমনটি আছে। বিভিন্ন ব্যাংকের মধ্যে যে প্রতিযোগিতা সেটা স্বাভাবিক প্রবণতা। এখানে কোনো অসুস্থ পরিবেশ আছে বলে আমি মনে করি না। আর এই প্রতিযোগিতা থাকবেই। অনেক ব্যাংকের কাছে অলস তারল্য আছে। বর্তমানে পুরো ব্যাংকিং খাতে যে তারল্য রয়েছে সেটা সহনশীল। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী আমানতের ৮১ থেকে ৮৫ শতাংশ বিনিয়োগ হয়। সেখানে হয়ত কিছু ব্যাংকের কম থাকতে পারে। ফলে এটা বড় কোনো তারল্য রয়েছে বলে মনে হয় না।

ব্যাংকিং অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে আইএফআইসি এমডি বলেন, যে কোনো ব্যাংকের সংকট থাকলে সেটা পুরো খাতেই প্রভাব পড়ে। রাষ্ট্রায়ত্ত বা বেসরকারি বলে কথা নেই। বড় কোনো ঘটনা হলে সেটা অবশ্য অন্যান্য খাতে প্রভাব পড়বেই। এটা থেকে বের হতে হলে যারা পরিচালনা করেন বা ম্যানেজমেন্টে আছেন তাদের সতর্ক থাকা উচিত। মন্দ ঋণের রিটার্ন যদি শূন্য হয় সেটা ভালো ঋণের রিটার্ন দিয়ে সামাল দিতে হয়। তাই ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে সবাইকে আরও কঠোরতা অনুসরণ করতেই হবে। তিনি বলেন, আইএফআইসি ব্যাংকের ৪০ বছরে যে শাখা হয়েছে আমার কাছে এটা একটু কম মনে হয়। তবে গত চার বছরে আমরা অনেক শাখা করেছি। এই বছরেও শাখা খোলার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, আইএফআইসির একটি প্রস্তুতি পর্ব গেছে। এখন আমরা যে কোনো প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য প্রস্তুত। আইএফআইসি ব্যাংকে আমানতকারীদের অর্থ খুবই সুরক্ষিত। সাইবার ক্রাইমের বিষয়েও আমরা সচেতন। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা স্থিতি খুবই কম। তাই ঝুঁকি নেই বললেই চলে। এ ছাড়া নেপাল বাংলাদেশ ব্যাংকে আমরা নিয়ন্ত্রক শেয়ার হোল্ড করছি। আমরা যে দরে শেয়ার কিনেছিলাম তা থেকে ১৬ গুণ বেড়েছে। বর্তমানে নেপাল বাংলাদেশ ব্যাংকের শেয়ার ৭০০ রুপি দরে (নেপাল মুদ্রা) লেনদেন হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর