বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঢাকা টু ভাঙ্গা ৪২ মিনিটেই

নিজামুল হক বিপুল

ঢাকা টু ভাঙ্গা ৪২ মিনিটেই

রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে মাত্র ৪২ মিনিটে পৌঁছা যাবে ফরিদপুরের ভাঙ্গায়। তবে সে জন্য অপেক্ষা করতে হবে ২০১৮ সাল পর্যন্ত। স্বপ্নের পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এমন সহজ যাত্রার রাস্তাটিও খুলে দেওয়া হবে। এ জন্য টোল দিতে হবে যানবাহনগুলোকে। সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত নির্মাণ হচ্ছে ৫৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে। এটি হবে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে এবং এশিয়ান হাইওয়ের করিডর-১ এর অংশ। এখন দ্রুত গতিতে চলছে এর নির্মাণ কাজ। আট লেনের এই এক্সপ্রেসওয়েটি সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন-এসডব্লিউও (পশ্চিম)। প্রকল্পের নকশা অনুসারে ভূমি অধিগ্রহণ এবং ইউটিলিটি সরানোর কাজ চলছে। একই সঙ্গে রাস্তার পাশের গাছগুলো শিকড়সহ উপড়ে ফেলা হচ্ছে। এ ছাড়া এক্সপ্রেসওয়ে যেদিকে যাবে সেসব জায়গায় যে নিচু জমি রয়েছে সেগুলো ভরাটের কাজও চলছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন ছিদ্দিক গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আশা করছি নির্ধারিত সময়ের আগেই আমরা এই এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ শেষ করব। ২০১৮ সালে পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার আগেই এটির কাজ শেষ হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সেতুর সঙ্গেই এটি খুলে দেওয়া হবে। সড়ক বিভাগের সচিব বলেন, এটি চালু হলে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার নন-স্টপ গাড়ি চালিয়ে যাওয়া যাবে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এই এক্সপ্রেসওয়েটি ভাঙ্গা থেকে দুই ভাগে ভাগ হয়ে একটি চলে যাবে পায়রা বন্দর পর্যন্ত। অন্যটি যাবে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর পর্যন্ত। সচিব জানান, এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের জন্য সমতলে যে মাটি ভরাট করা হচ্ছে, সেই মাটি আনা হচ্ছে পদ্মা সেতুর ড্রেজিং থেকে। আশা করছি, পদ্মা নদীর মাটি দিয়েই পুরো সড়কের কাজ সম্পন্ন করা যাবে।  মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ছয় হাজার ২৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকায় নির্মাণাধীন এই প্রকল্পের কাজ শেষ করার মেয়াদ হচ্ছে ২০১৯ সালের এপ্রিলে। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ ২০১৮ সালের মধ্যে শেষ করা হবে। এই প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে ২৪ দশমিক ৮৮ হেক্টর। জানা গেছে, সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঢাকা-খুলনা (এন-৮) মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে মাওয়া হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার ছয় লেনের এই এক্সপ্রেসওয়ের মূল সড়কটি হবে চার লেনের। এক্সপ্রেসওয়ের দুই পাশে দুই লেন করে থাকবে পৃথক সড়ক। যাতে ধীরগতির যানবাহন চলাচল করতে পারে। নির্দিষ্ট কয়েকটি পয়েন্ট ছাড়া এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠা এবং এক্সপ্রেসওয়েতে নামা যাবে না। এক্সপ্রেসওয়েতে থাকবে না কোনো ট্রাফিক ক্রসিং। এই এক্সপ্রেসওয়ের মাঝ বরাবর থাকবে ৫ মিটার প্রস্থের মিডিয়ান। যেখানে ভবিষ্যতে মেট্রোরেল নির্মাণ করা সম্ভব হবে। সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ হবে দুটি প্যাকেজে। প্রথম প্যাকেজে যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার এবং দ্বিতীয় প্যাকেজে শরীয়তপুরের পাচ্চর থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এক্সপ্রেসওয়েতে মোট সেতুর সংখ্যা হবে ৩১টি। এগুলোর মধ্যে পিসি গার্ডারের সেতু হবে ২০টি ও আরসিসির ১১টি। এ ছাড়া ধলেশ্বরী-১ ও ধলেশ্বরী-২ এবং আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর তিনটি বড় সেতু নির্মাণ করা হবে। এর বাইরে ৪৫টি কালভার্ট, আবদুল্লাহপুর, হাঁসারা, শ্রীনগর, কদমতলী, পুলিয়া বাজার ও সদরপুরে থাকবে ৬টি ফ্লাইওভার। জুরাইন, কুচিয়ামোড়া, শ্রীনগর ও আতাদিতে থাকবে ৪টি রেলওয়ে ওভারপাস। গ্রেট সেপারেটর হিসেবে ১৫টি আন্ডারপাস ও ৩টি ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণ করা হবে। এগুলো হবে যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া এবং ভাঙ্গায়। এই এক্সপ্রেসওয়ের দুই প্রান্তে দুটি টোল প্লাজা নির্মাণ করা হবে। এই এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ শেষ হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশেষ করে ফরিদপুর, মাদারীপুর, বরিশাল, শরীয়তপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, খুলনা জেলাসহ আশপাশের সব জেলার সঙ্গে রাজধানীর সড়ক যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।

সর্বশেষ খবর