বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

ইভিনিং প্রিমরোজ নামে নতুন জাতের সূর্যমুখী উদ্ভাবন

ইকবাল হোসাইন রুদ্র, ইবি

ইভিনিং প্রিমরোজ নামে নতুন জাতের সূর্যমুখী উদ্ভাবন

সৌন্দর্যের প্রতীক ফুল সারা বিশ্বে বিপুল সমাদৃত। আর মানুষের সৌন্দর্যপ্রেম সহজাত। তাই উৎকর্ষতার প্রতীক ফুল সৌন্দর্যপিপাসু মানুষের জীবনের সঙ্গে মিশে আছে। ফুল ভালোবাসেন না এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। এর পাপড়িবিন্যাস, রঙের বৈচিত্র্য ও গন্ধের মাধুর্য মানুষের মন ভরে তোলে স্বর্গীয় আনন্দে। তবে শুধু সৌন্দর্য, কিংবা মিষ্টি সুবাতাস ছড়ানো নয়, এখন ফুল থেকে আসছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। এসব বিষয় লক্ষ্য রেখে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে উদ্ভাবন করা হয়েছে ইভিনিং প্রিমরোজ নামে নতুন জাতের সূর্যমুখী ফুল। শীতপ্রধান দেশে চাষের উপযোগী ফুলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা যৌথ গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশে চাষের উপযোগী করতে সক্ষম হয়েছেন। এর নামকরণ হয়েছে ‘ইভিনিং প্রিমরোজ’। জানা যায়, হল্যান্ড থেকে কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে সূর্যমুখীর বীজ এনে চাষের উপযোগী করতে দেড় বছর গবেষণা করেন বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল হক, বিভাগীয় সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক ড. নিলুফা আক্তার বানুর ব্যবস্থাপনায় ড. জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে মোস্তফা শাকিল, যুবায়ের হুসাইন, সদরুল হাসান চৌধুরী, জহুরুল ইসলাম, জুলকার নাইনসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীর একটি টিম বাংলাদেশের আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ইভিনিং প্রিমরোজ নামের এই সূর্যমুখী ফুল উদ্ভাবনে সক্ষম হন। এ ফুলটি কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে ব্যবহার হবে। যেসব ফুল অনেক দিন পর্যন্ত ব্যবহার উপযোগী থাকে অথবা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায় না, সেসব ফুলকে কাট ফ্লাওয়ার বলা হয়। গবেষণারত শিক্ষার্থীরা জানান, বাংলাদেশে তৈলবীজ ও বাগানের শোভাবর্ধনের জন্য নানা জাতের সূর্যমুখী চাষ করা হলেও কাট ফ্লাওয়ারের কোনো জাত নেই। কয়েকটি দেশে কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে সূর্যমুখীর কিছু জাত চাষ করা হলেও বাংলাদেশে সূর্যমুখীর কাট ফ্লাওয়ার জাতীয় কোনো অনুমোদিত জাত নেই। আমরা বাংলাদেশে প্রথম কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে ইভিনিং প্রিমরোজ নামে নতুন জাতের সূর্যমুখী উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছি। কাট ফ্লাওয়ার হওয়ায় এটি ফুলদানিতে অনেক দিন পর্যন্ত টাটকা থাকে এবং ফুল শুকিয়ে যাওয়ার পরে সুবাস ছড়াতে থাকে। এজন্যই সাধারণ সূর্যমুখীর সঙ্গে এর পার্থক্য। কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে ইভিনিং প্রিমরোজ ফুলের চাহিদা বিশ্বজুড়ে। এ ছাড়া টিস্যু কালচারের মাধ্যমে স্বল্পসময়ে রোগমুক্ত চারা উৎপাদন এবং ফুল ও ফলের গুণগত মান বৃদ্ধি করতে কাজ করে যাচ্ছেন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তবে এসব কাজের জন্য প্রচুর অর্থ ও সময়ের প্রয়োজন বলে জানান ড. জাহাঙ্গীর আলম। জানা গেছে, বাংলাদেশের আবহাওয়া ফুল চাষের উপযোগী এবং যশোরসহ বেশকিছু জেলায় ফুলের চাষ হচ্ছে। বিভিন্ন ফুলের পাশাপাশি বিভিন্ন বিদেশি ফুল ও অর্কিড (যেমন গ্লাডিওলাস, জারবেরা) চাষ হচ্ছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এসব ফুল চাষে বেশ সাফল্য এসেছে। বাংলাদেশের ফুল এখন রপ্তানি হচ্ছে। আয় হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা। সুযোগ-সুবিধা পেলে প্রতি বছর কয়েক শ কোটি টাকা অর্জন করা সম্ভব হবে। যশোর জেলার ফুল চাষিরা জানান, ফুলপ্রেমীদের নতুন নতুন ফুলের চাহিদা থাকে। তাই বিদেশ থেকে নতুন নতুন জাতের ফুলের চারা আনতে হয়। এতে খরচও পড়ে বেশি। তবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সূর্যমুখী উদ্ভাবন করা হয়েছে তার পর্যাপ্ত চারা উৎপাদন করা প্রয়োজন। সারা দেশে এ ফুলের চারা সরবরাহ করা সম্ভব হলে কম খরচে বিদেশি ফুল উৎপাদন করতে পারব। আর ক্রেতারাও পাবেন নতুন নতুন ফুল। গবেষণা টিমের প্রধান ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ইভিনিং প্রিমরোজ মূলত শীতপ্রধান দেশের ফুল। আমরা বাংলাদেশের আবহাওয়ায় গাছটি অভিযোজন বা জন্মাতে ও ফুল ধরাতে সক্ষম হয়েছি। টিস্যু কালচারের মাধ্যমে ফুলের আকার ও মান উন্নয়নের চেষ্টা করে যাচ্ছি।’ বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, ফুল চাষ থেকে রপ্তানি আয় বাড়াতে বিভিন্ন জাতের ফুলকে এ দেশে চাষের উপযোগী করতে কাজ করে যাচ্ছি। ইভিনিং প্রিমরোজ ফুলকে যদি এ দেশে চাষ-উপযোগী করা যায় তাহলে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’ সীমিত সুযোগ-সুবিধার মধ্য দিয়েও বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ টিস্যু কালচার গবেষণায় বেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ইভিনিং প্রিমরোজ ছাড়াও জারবেরা, স্ট্র ফ্লাওয়ার, টিউলিপসহ আরও বেশকিছু ফুলের জাত নিয়ে বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।

 

সর্বশেষ খবর