শুক্রবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

সাংবাদিক নাজমুলের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন

আদালতে হাজিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাংবাদিক নাজমুলের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন

সাংবাদিক নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও তার মুক্তি দাবিতে গতকাল প্রেসক্লাবের সামনে সাংবাদিকদের মানববন্ধন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাভার প্রতিনিধি নাজমুল হুদাকে নিঃশর্ত মুক্তি না দিলে রবিবার সারা দেশে জেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে সাংবাদিক সমাজ। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিও জানানো হয়। গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন ঢাকা সাংবাদিক  ইউনিয়নের সভাপতি ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের বিশেষ প্রতিনিধি শাবান মাহমুদ। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রতিদিন সাংবাদিক ইউনিটি আয়োজিত এ মানববন্ধনে সাংবাদিক নেতাদের পাশাপাশি বাংলাদেশ প্রতিদিনের সদস্যরাও অংশ নেন। এ সময় সাগর-রুনি হত্যার বিচারসহ সারা দেশে সাংবাদিকদের ওপর জুলুম-নির্যাতন বন্ধের দাবি জানানো হয়। দাবি জানানো হয় তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বাতিলেরও। মানববন্ধনে সাংবাদিক নেতারা বলেন, ‘আমরা পুলিশের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল আজিম, আশুলিয়া-ধামরাই সার্কেলের এএসপি নাজমুল হাসান ফিরোজ ও আশুলিয়ার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহসীনুল কাদিরের কারণে গোটা পুলিশ প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এই তিন কর্মকর্তাকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।’ বাংলাদেশ প্রতিদিনের উপসম্পাদক মাহমুদ হাসানের সভাপতিত্বে এতে শাবান মাহমুদ ছাড়াও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, সাধারণ সম্পাদক মুরসালিন নোমানী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশের) সহকারী মহাসচিব মোদাব্বের হোসেন, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার আলম প্রমুখ।

মানববন্ধনে অংশ নেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রধান প্রতিবেদক মন্জুরুল ইসলাম, নগর সম্পাদক শিমুল মাহমুদসহ বাংলাদেশ প্রতিদিন পরিবারের সদস্যরা। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের স্টাফ রিপোর্টার রুহুল আমিন রাসেল। মানববন্ধনে সাংবাদিক নেতা ওমর ফারুক বলেন, ‘অন্যায়ভাবে নাজমুল হুদার গায়ে একটি টোকা দেওয়া হলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন চললে আমরা বসে থাকব না। দেশের যে জায়গায় সাংবাদিক নির্যাতন হোক না কেন, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন তার পাশে দাঁড়াবে। নাজমুল হুদা দোষী হলে তদন্ত কমিটি গঠন করুন। যেখানে সাংবাদিক নেতারা থাকবেন, গার্মেন্ট শিল্পের প্রতিনিধিরা থাকবেন। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে তারপর শাস্তি দিন।’ আশুলিয়ার ওসিসহ তিন কর্মকর্তার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘অতীতের ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য বলে অন্যায় করে পার পাওয়া যাবে না। এমন উদাহরণ অনেক আছে। অত্যাচারীদের স্পর্ধা বেড়ে গেছে। তাদের দমন করতে হবে।’ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কয়েকজনের ভুলের জন্য গোটা বাহিনীর বদনাম ঘাড়ে নেবেন না।’ ওমর ফারুক বলেন, ‘টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া যে কোনো স্থানে সাংবাদিকদের ওপর হামলা হলে, নির্যাতন হলে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন পাশে দাঁড়াবে। সাংবাদিকদের তথ্য মন্ত্রণালয়ও নানাভাবে নির্যাতন করছে। এখন আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও করছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে সাংবাদিকবান্ধব সরকার গণমাধ্যমকে পাশে পাবে না।’ সাংবাদিক নেতা শাবান মাহমুদ বলেন, ‘নাজমুল হুদা কোনো অন্যায় করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। আমরা জেনেছি, তাকে একটি স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনে অন্যায়ভাবে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারায় অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে। তার পরিবার অসহায়ভাবে জীবনযাপন করছে। সাংবাদিকদের নির্বাচিত নেতা হিসেবে আমরা ঘরে বসে থাকতে পারি না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে চাই, আপনি আমাদের আস্থার প্রতীক। অনুরোধ থাকবে, নাজমুল হুদার ব্যাপারে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করুন। এরপর বিচার বিভাগকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিন।’

তথ্যমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী যখন তাদের অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার জন্য গণমাধ্যমকে প্রতিপক্ষ মনে করে, সাংবাদিকদের ওপর অত্যাচার চালায়, তখন সাংবাদিক সমাজের অভিভাবক হিসেবে আপনি চুপ করে বসে থাকতে পারেন না। যদি আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নাজমুল হুদাকে মুক্তি না দেওয়া হয়, তার নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা না হয়, তাহলে আগামী রবিবার আবারও প্রেস ক্লাবে সমাবেশ ও মানববন্ধন করবে সাংবাদিক সমাজ। একই সঙ্গে সারা দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ, মানববন্ধন কর্মসূচি চলবে।’ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা বলেন, ‘সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যার বিচার করতে হবে। সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে লড়তে হবে।’ ১১ ফেব্রুয়ারি সাগর-রুনির হত্যাবার্ষিকী। তিনি সবাইকে ওইদিন প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শামিল হওয়ার অনুরোধ জানান।’ বাদশা বলেন, ‘নাজমুল হুদাকে প্যান্ট চুরির মামলা দেওয়া হয়েছে। এর চেয়ে প্রহসনের মামলা আর হতে পারে না।’ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির পক্ষ থেকে ধিক্কার জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নাজমুলের বিরুদ্ধে প্যান্ট চুরিসহ ৬টি মামলায় ২১ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। কি লজ্জা, কি দুঃখজনক। এটা চলতে পারে না। আমাদের কষ্ট হয়, গণমাধ্যমবান্ধব সরকারের আমলে ৫৭ ধারার মতো কালো আইন তৈরি করে সাংবাদিকদের রাজপথ থেকে গ্রেফতার করে তুলে নেওয়া হয়।’ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এই কালো আইন বাতিল করতে হবে। এটা জামিনযোগ্য হতে হবে।’ সাংবাদিক নেতা মোদাব্বের হোসেন বলেন, ‘নাজমুলের দোষ একটাই, অন্যায়ের সঙ্গে তিনি আপস করেননি। একটি অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদনই তার কাল হয়েছে। আমরা অবিলম্বে তার মুক্তি চাই। সাগর-রুনি হত্যার বিচার চাই। চাই সাংবাদিকদের ওপর জুলুম-নির্যাতন বন্ধ হোক।’ ক্র্যাব সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার আলম বলেন, ‘নাজমুল হুদাকে মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাকে মুক্ত করার জন্য যা যা করার দরকার তাই করা হবে। কোনোভাবেই পিছপা হওয়া যাবে না। নাজমুল হুদার পাশে থাকবে ক্র্যাব।’ ডিআরইউ সাধারণ সম্পাদক মুরসালিন নোমানী বলেন, ‘আমরা এখনো সাগর-রুনি হত্যার বিচার পাইনি। এ নিয়ে সরকার টালবাহানা করছে।’ তিনি হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। অবিলম্বে নাজমুলের মুক্তির দাবি জানিয়ে নোমানী বলেন, ‘নইলে পরিণতি ভালো হবে না।’ এ ছাড়া গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে একই দাবিতে মানববন্ধন করে তৃণমূল নাগরিক আন্দোলন নামক একটি সংগঠন।

প্যান্ট চুরির মামলার প্রতিবেদন ২০ ফেব্রুয়ারি : সাংবাদিক নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে করা প্যান্ট চুরির মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করেছে আদালত। গতকাল ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শাহিনূর রহমান আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি এই দিন ধার্য করেন। এর আগে সাংবাদিক নাজমুল হুদাসহ অন্য আসামিদের ধার্য তারিখের কারণে কারাগার থেকে গতকাল ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করা হয়।

কোর্ট রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের নিন্দা : নাজমুল হুদাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানি করার নিন্দা জানিয়েছে আইনজীবীদের সংগঠন কোর্ট রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন। গতকাল এক লিখিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ নিন্দা জানান কোর্ট রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মাহবুবুল হক ও সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদ। বিজ্ঞপ্তিতে সাংবাদিক নাজমুল হুদার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়েছে। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে করা প্যান্ট চুরিসহ সব হয়রানিমূলক ও সাজানো মামলা প্রত্যাহারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। আরও বলা হয়, আশুলিয়ায় তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সাম্প্রতিক আন্দোলন নিয়ে প্রতিবেদন দেশি-বিদেশি অনেক গণমাধ্যম প্রকাশ ও প্রচার করেছে। কিন্তু অসদুদ্দেশ্যে একের পর এক মামলা হয়েছে শুধু নাজমুলের বিরুদ্ধে। কোর্ট রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন মনে করে, পেশাগত দায়িত্বের অংশ হিসেবে নাজমুল হুদা বাংলাদেশ প্রতিদিনে এ ঘটনার সংবাদ পাঠিয়েছেন। তাই প্রয়োজনে নাজমুল হুদাকে আইনগত সহযোগিতা দিতে পাশে থাকবে কোর্ট রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন।

এদিকে বাংলাদেশ প্রতিদিনের পাঠক সংগঠন ‘বন্ধু প্রতিদিন’-এর ঢাকার জজ কোর্ট শাখার সমাবেশে সাংবাদিক নাজমুল হুদাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানি করার নিন্দা ও নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়েছে। অ্যাডভোকেট কামাল হোসেন পাটোয়ারির নেতৃত্বে বন্ধু প্রতিদিনের ওই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আল মুনসুর রিপন, অ্যাডভোকেট মাহবুব হাসান রানা, অ্যাডভোকেট মফিদুল ইসলাম মাহফুজ, অ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল ইসলাম সুমন, অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম পারভেজ, অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেন আদিল, অ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মো. মনির হোসেন, অ্যাডভোকেট বিকাশচন্দ্র সাহা, অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম মুকুল, অ্যাডভোকেট আখতারুজ্জামান হিমেল, অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেন বিপ্লব, অ্যাডভোকেট জুলফিককার হায়দার জীবন, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গির হোসেন, অ্যাডভোকেট মো. জসিম, অ্যাডভোকেট আলম খান, অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান, অ্যাডভোকেট মাহবুব বাপ্পি, অ্যাডভোকেট হাজী মো. সোহেলসহ শতাধিক আইনজীবী।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর