শুক্রবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

নির্ধারিত সময়ে বই দেয়নি চার ছাপাখানা ব্যবস্থা নিতে চিঠি এনসিটিবিতে

ইংরেজি ভার্সনের বই সরবরাহ করেনি

আকতারুজ্জামান

বছরের প্রথম দিনেই সারা দেশে জাঁকজমক পরিবেশে পালন করা হয়েছে পাঠ্যপুস্তক উৎসব। তবে ২০ দিন অতিবাহিত হতে চললেও অনেক স্কুলে ইংলিশ ভার্সন বই পায়নি শিক্ষার্থীরা। ডিসেম্বরের মধ্যে বই সরবরাহের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত সব বই সরবরাহ করেনি চারটি দেশি ছাপাখানা। নামে মাত্র শিক্ষার্থীদের হাতে কয়েকটি করে বই দেওয়া হলেও ইংরেজি ভার্সনের প্রায় প্রতিটি স্কুলেই রয়েছে পূর্ণাঙ্গ সেটের বই না পাওয়ার অভিযোগ। সংকট রয়েছে কারিগরি (ভোকেশনাল) শাখার বইও। বিভিন্ন শ্রেণির ইংরেজি ও কারিগরি শিক্ষার চাহিদাকৃত বই না পেয়ে বুধবার জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসার সাহিদা বেগম নাজমা। তিনি জরুরি ভিত্তিতে বই সরবরাহের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণচন্দ্র সাহা বলেন, ‘আমি এখনো এ ব্যাপারে চিঠি পাইনি।’ এদিকে এনসিটিবির বিতরণ নিয়ন্ত্রক মোশতাক আহমেদ ভূঁইয়া বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা ছাপাখানাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা জানিয়েছেন, আরও ৮-১০ দিন লেগে যাবে বই সরবরাহে।’

তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আগে তারা বই সরবরাহ করুক। শিক্ষার্থীরা বই পাক। পরে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ ইংরেজি ভার্সন রয়েছে এমন কয়েকটি বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ঢাকার বেশির ভাগ স্কুলেই ইংরেজি ভার্সনের সব বই পৌঁছেনি শিক্ষার্থীদের হাতে। বইয়ের জন্য হন্যে হয়ে আছে শিক্ষার্থীরা। মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলে সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ সেটের বই পায়নি আমার মেয়ে। বছরের প্রথম ১০ দিনে মাত্র একটি বই দেওয়া হয়। দুই দিন আগে আরও তিনটি বই দেওয়া হয়। পূর্ণাঙ্গ বই না পেয়ে আমার সন্তান পিছিয়ে পড়ছে।’

ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসারের লিখিত আবেদনে জানা গেছে, প্রয়োজনীয় বই সরবরাহ না করার তালিকায় রয়েছে আনন্দ প্রিন্টার্স, কাজল প্রিন্টিং ওয়ার্কস, হাক্কানী প্রিন্টার্স ও মডেল প্রিন্টিং ওয়ার্কস। এনসিটিবির চেয়ারম্যান বরাবর বই সরবরাহে জরুরি ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। আবেদনের অনুলিপি ঢাকা জেলা প্রশাসক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের বরাবর পাঠানো হয়েছে।

জানা যায়, আনন্দ প্রিন্টার্স বিভিন্ন শ্রেণির ৩৬ হাজার ৫২০টি বই ছাপানোর কাজ পায়। এর মধ্যে ২ হাজার ৭১৮টি বই এখনো পৌঁছে দেয়নি শিক্ষার্থীদের হাতে। কারিগরি বিভিন্ন শ্রেণির ইংরেজি ভার্সনের ১০ হাজার ৬৪২টি বই ছাপার কাজ পায় কাজল প্রিন্টিং ওয়ার্কস। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত ৬৪২ কপি বই সরবরাহ করেনি। হাক্কানী প্রিন্টার্সের বিভিন্ন শ্রেণির ৪৭ হাজার ৩৬৩টি বই সরবরাহের কথা ছিল। এখন পর্যন্ত তারা ৪ হাজার ৯৭৪টি বই দিতে পারেনি। মডেল প্রিন্টিং ওয়ার্কস ৩৩ হাজার ৯২৩টি বইয়ের বরাদ্দ পেলেও এখনো সরবরাহ করেনি ১৪ হাজার ৮০৬টি বই। বই না পেয়ে হতাশা ব্যক্ত করছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। কাজল প্রিন্টিংয়ের মালিক শহীদুজ্জামান বলেন, ‘লোকবল সংকটের কারণে বই বাইন্ডিং করতে পারছি না।’ কবে নাগাদ বই পৌঁছাতে পারবেন— এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘এ মাসের মধ্যে স্কুলগুলোয় বই চলে যাবে বলে আশা প্রকাশ করছি।’ টেন্ডারকাজ পরে হওয়াতেই বিলম্ব হচ্ছে বলেও দাবি তার। অন্য ছাপাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসার সাহিদা বেগম নাজমার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সর্বশেষ খবর