শুক্রবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ধর্মের নামে সন্ত্রাসে স্বাধীনতাবিরোধীরা

———— রাষ্ট্রপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, স্বাধীনতাবিরোধীরা দেশের উন্নয়ন ব্যাহত করতে ধর্মের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি আমাদের উন্নয়নের ধারা ব্যাহত করতে এবং সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে ধর্মের নামে হত্যা ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে পবিত্র ইসলাম ধর্মকে কলঙ্কিত করতে চাইছে। শুধু ইসলাম নয়, কোনো ধর্মই নরহত্যা, সন্ত্রাস, ধ্বংসযজ্ঞ সমর্থন করে না। সব ধর্মের মর্মবাণী হচ্ছে স্রষ্টা ও সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা এবং সমাজ ও মানুষের কল্যাণ। গতকাল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত একাত্তরের ঘাতক দালাল-নির্মূল কমিটির রজতজয়ন্তী ও সপ্তম জাতীয় সম্মেলনে বক্তব্য দানকালে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিচারপতি গোলাম রব্বানী। এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, নর্থ আমেরিকা জুরিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি উইলিয়াম স্লোন, ফোরাম ফর সেকুলার নেপালের আহ্বায়ক যুবনাথ লামসাল, সুইডিশ মানবাধিকার কর্মী এরিক হুদলান্দ প্রমুখ। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে এ অনুষ্ঠানে পাঁচ শহীদ পরিবারকে সম্মাননা দেওয়া হয়। এ উপলক্ষে শহীদজায়া লিলি চৌধুরী, পান্না কায়সার, শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী, সুচন্দা রায়হান ও সারা মাহমুদকে উত্তরীয় ও ক্রেস্ট তুলে দেন রাষ্ট্রপতি। এর আগে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে রজতজয়ন্তী ও সপ্তম সম্মেলন ঘোষণা করেন আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, শুধু বাংলাদেশে নয়, এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ধর্ম, বর্ণ ও জাতিসত্তার নামে নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। লাখ লাখ মানুষ সহায়-সম্বল হারিয়ে ঘর ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। দেশান্তরী হচ্ছে। তিনি বলেন, “জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হচ্ছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে জঙ্গি দমনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ সরকার ও নাগরিক সমাজ মৌলবাদী এবং সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম করছে, তা বহু দেশের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে।” রাষ্ট্রপতি বলেন, মনে রাখতে হবে, সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নেই। তাদের পরিচয়, তারা সন্ত্রাসী। এদের বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার হতে হবে। হতে হবে ঐক্যবদ্ধ। স্বাধীনতার দুই দশক পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে ঘাতক দালাল-নির্মূল কমিটির আন্দোলন গড়ে ওঠা এবং সেই আন্দোলনে শহীদজননী জাহানারা ইমামের অবদানের কথাও অনুষ্ঠানে স্মরণ করেন রাষ্ট্রপতি। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ও চেতনা সম্পর্কে সচেতন করতে এ আন্দোলন বিশাল ভূমিকা পালন করে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, “আজ আপনারা এ আন্দোলনের রজতজয়ন্তী উদযাপন করছেন। গত ২৫ বছরে অনেক ঝড়ঝাপটা আপনাদের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। কিন্তু শত বাধা উপেক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অবিচল থেকে আপনারা এই সময়ে অনেক অর্জনও করেছেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও পরমতসহিষ্ণুতা বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ‘শ্রেষ্ঠ উপাদান’ হিসেবে পরিচিত। কোনো অপশক্তি এই গৌরবময় অর্জনকে ম্লান করতে পারবে না। আমাদের হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িক চেতনা, মানবিক মূল্যবোধ শুধু সংরক্ষণ নয়, এর বিকাশও ঘটাতে হবে।”

 মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ শুরু করলেও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে হত্যার পর সেই বিচার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর সংসদে প্রস্তাব গ্রহণের মাধ্যমে বহুপ্রতীক্ষিত সেই বিচার কার্যক্রম আবারও শুরু হয়। সে সময় আবদুল হামিদ ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার। সে দিনের কথা স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে পুনরায় এই বিচার কার্যক্রম শুরু করে। ২০০৯ সালে মহান জাতীয় সংসদে একাত্তরের গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সর্বসম্মত প্রস্তাব গৃহীত হয়। আমার সৌভাগ্য, তখন আমি স্পিকারের চেয়ারে আসীন ছিলাম। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার প্রক্রিয়া এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসা অর্জন করেছে।’ বাঙালি আজ ‘অনেকটা’ কলঙ্কমুক্ত হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর