শনিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

সিটি মেয়রের পদমর্যাদা নিয়ে চট্টগ্রামে ক্ষোভ

রিয়াজ হায়দার, চট্টগ্রাম

সিটি মেয়রের পদমর্যাদা নিয়ে চট্টগ্রামে ক্ষোভ

এক সময় ঢাকার মেয়র মন্ত্রী এবং চট্টগ্রামের মেয়র প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পেতেন। আর এখন ঢাকার দুই মেয়র পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা পেলেও চট্টগ্রামের মেয়রকে মন্ত্রীর পদমর্যাদা না দেওয়ায় চাপা ক্ষোভের বিস্তার ঘটছে ৬০ লাখ মানুষের নগরী চট্টগ্রামে। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, এমনকি বিরোধী শিবিরেও চাপা অসন্তোষ রয়েছে বলে জানান বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। শিক্ষাবিদ, জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সমাজকর্মী, সংগঠকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের যেন অভিন্ন দাবি ‘চট্টলা মেয়রকে পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হোক’।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল তিন সিটি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রামে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বছর না পেরোতেই ঢাকার দুই মেয়র পান মন্ত্রীর মর্যাদা। নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকেও উপমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয়। কিন্তু সে রকম কিছু ঘটেনি চট্টগ্রাম সিটির ভাগ্যে। ১৯৮৯ সালে চট্টগ্রামের প্রথম মেয়র মনোনীত মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী; তাকে দেওয়া হয়েছিল প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা। বিএনপি মনোনীত সাবেক মেয়র মীর নাছির উদ্দিনও মেয়র থাকাকালে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় ছিলেন। এদিকে, ঢাকা শহরকে দুই ভাগ করার পর অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে বিজয়ী দুই মেয়রকে আরও ছয়মাস আগেই পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের পূর্ণ শহরের মেয়রকে এখনো সেই স্বীকৃতি না দেওয়াটা চট্টগ্রামের প্রতি ‘বৈষম্য’ বলে মনে করছেন তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজেই নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, সেখানে এই বাণিজ্যিক রাজধানীর মেয়রকে বঞ্চিত করাটাকে ‘স্ববিরোধিতা’ বলে মনে করছেন অনেকেই। এদিকে গুঞ্জন চলছে মেয়র মন্ত্রী মর্যাদা পেতে বাধা কোথায়! বলাবলি হচ্ছে—‘তবে কি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উন্নয়ন বরাদ্দের জন্য ঘুষ চাওয়ার প্রতিবাদ করায় চট্টগ্রামের মেয়রের প্রতি এই বৈষম্য? নাকি এটি প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছার বিপরীতে চট্টগ্রামবিদ্বেষী কোনো বিশেষ চক্রের ষড়যন্ত্রের ফল?’ এমন নানা প্রশ্নের ডালপালায় ভর করে মেয়রের মর্যাদা তথা চট্টগ্রামের অধিকার প্রশ্নে আন্দোলন দানা বাঁধার ভিত্তিই যেন তৈরি হচ্ছে চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামের প্রথম মেয়র ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী মেয়রের মর্যাদা প্রশ্নে বলেছেন, ‘বিষয়টি বৈষম্যই। মেয়র যেহেতু নগর পিতা, সেহেতু মেয়রকে সম্মান জানালে নগরবাসীই সম্মানিত হবেন। ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জসহ একাধিক শহরের মেয়রকে যেখানে প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর পদমর্যাদা দেওয়া হয়েছে, সেখানে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী চট্টগ্রামের মেয়রকে উপেক্ষা করা সঠিক কাজ নয়।’ এদিকে বিএনপি মনোনীত সাবেক মেয়র ও প্রতিমন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনও বিষয়টি নিয়ে সন্তুষ্ট নন। শুধু মন্ত্রী মর্যাদা বণ্টনের ক্ষেত্রে বঞ্চনা নয়, চট্টগ্রামের মেয়রের এখন আর আগের মতো উন্নয়ন ও সমন্বয় কাজে প্রধান নিয়ন্ত্রকের পূর্ণ ক্ষমতাও নেই। আগে অন্য সেবা সংস্থাগুলোর একজন করে প্রতিনিধি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাধারণ সভায় অফিশিয়াল কাউন্সিলর হিসেবে অংশ নিতে বাধ্য থাকতেন। সেই নিয়ম তুলে নিয়ে চসিক মেয়রের ক্ষমতাকে আগেই খর্ব করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান মীর নাছির। চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (সিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম যেহেতু বাণিজ্যিক রাজধানী সেহেতু এর নির্বাচিত মেয়র পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা পাওয়ার অধিকার রাখেন। আশা করব, মেয়র নাছিরকে তার ন্যায্য মর্যাদা দেওয়া হবে। পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ, চট্টগ্রামের সভাপতি প্রফেসর ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামের মেয়রকে যথার্থ মর্যাদা দেওয়ার দাবি সবার। মর্যাদাটি ব্যক্তি আ জ ম নাছির উদ্দিনের নয়, পুরো প্রতিষ্ঠান তথা চট্টগ্রামের। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি প্রফেসর ড. বেনু কুমার দে বলেন, ঢাকার আগেই চট্টগ্রামের মেয়রের মর্যাদাটি দেওয়া উচিত ছিল। কেননা, ঢাকাকে দুই ভাগ করে দুটি করপোরেশনে দুজনকে মেয়র করা হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রাম এখনো অখণ্ড শহর, মেয়র একজনই। অন্যদিকে ঢাকা এখন ডার্টি সিটি, চট্টগ্রাম হেলদি সিটি। সবুজে, পাহাড়ে, সমুদ্রে, সমতলে ঘেরা শহর। কাজেই চট্টগ্রামের গুরুত্ব অধিক। অনেকটা অভিন্ন কথা বললেন বাণিজ্য কেন্দ্র খাতুনগঞ্জের ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সিটির সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর এম জামাল হোসেন।  বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল আলম বাবু বলেন, মন্ত্রিত্ব বড় কথা নয়, চট্টগ্রামের সম্মান বড় কথা। মেয়রকে যোগ্য মর্যাদা না দিয়ে কার্যত চট্টগ্রামকেই অপমান করা হয়েছে বলে মনে করেন এই নাট্যজন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের মতো মেয়র নাছিরের মন্ত্রীর পদমর্যাদার দাবি ওঠে মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশেও। অবশ্য পদমর্যাদা বা স্ট্যাটাস পাওয়াটা ‘মুখ্য বিষয় নয়’ বলে মন্তব্য করেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।

সর্বশেষ খবর